৯ই মে, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ | ২৬শে বৈশাখ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ | ১১ই জিলকদ, ১৪৪৬ হিজরি

ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অবঃ) আবদুল্লাহিল আমান আযমীকে সরাসরি গুম-খুনের নির্দেশ দিয়েছেন হাসিনা: এইচআরডব্লিউ

জামায়াতে ইসলামীর সাবেক আমির প্রয়াত গোলাম আজমের মেজ ছেলে সেনাবাহিনীর সাবেক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল আবদুল্লাহিল আমান আযমীকে ২০১৬ সালের ২২ আগস্ট দিবাগত রাতে তুলে নেওয়া হয়। সে সময় জামায়াতে ইসলামীর পক্ষ থেকে বলা হয়, ২০১৬ সালের ২২ আগস্ট দিবাগত রাত ১২টার দিকে রাজধানীর বড় মগবাজারের বাসা থেকে সাদা পোশাকে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পরিচয় দিয়ে তাকে আটক করা হয়।

পরে আযমীকে সেনাবাহিনী থেকে বাধ্যতামূলক অব্যাহতি দেয় আওয়ামী লীগ সরকার। তবে জামায়াতে ইসলামীর পক্ষ থেকে আটকের বিষয়টি একাধিকবার দাবি করা হলেও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পক্ষ থেকে তা অস্বীকার করা হয়।

গত ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর বাংলাদেশের রাজনৈতিক পট পরিবর্তন হতে থাকে। প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে পদত্যাগ করে শেখ হাসিনা ভারতে পালিয়ে যান।

দীর্ঘ ৮ বছর পর গত ৭ আগস্ট বাড়ি ফিরেন আযমী। হাসিনার পলায়নের পর আযমীসহ অনেকে আয়নাঘর থেকে মুক্তি পান।

গোলাম আজমের মেজ ছেলেকে হাসিনা সরাসরি গুম-খুনের নির্দেশ দিয়েছেন বলে প্রমাণ পেয়েছে আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থা হিউম্যান রাইটস ওয়াচ (এইচআরডব্লিউ)।

সোমবার এইচআরডব্লিউ প্রকাশিত ‘আফটার দ্য মুনসুন রেভ্যুলুশন-এ রোডম্যাপ টু লাস্টিং সিকিউরিটি সেক্টর রিফর্ম ইন বাংলাদেশ’ শীর্ষক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়েছে।

এক সেনা কর্মকর্তার বরাতে প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, আয়নাঘরে আযমীর বন্দি থাকা ও তার শারীরিক অসুস্থতার বিষয়ে শেখ হাসিনা সরাসরি অবগত ছিলেন। তিনি (আযমী) ফেলো মিলিটারি অফিসার হওয়ায় তার মুক্তির বিষয়ে বারবার শেখ হাসিনার কাছে অনুমতি চেয়েছিলেন, কিন্তু প্রতিবারই তিনি তা প্রত্যাখ্যান করেছিলেন। এক পর্যায়ে তিনি (শেখ হাসিনা) আযমীকে হত্যার পরামর্শ দেন।

ওই কর্মকর্তা জানান, আমি তেমনটি করিনি। তবে এরপর আমি তার মুক্তির বিষয়ে কথা বলা বন্ধ করে দেই।

নিরাপত্তা রক্ষাকারীদের নির্যাতন বা ক্ষমতার অপব্যবহার অংশে গুম তদন্তে অন্তর্বর্তী সরকারের কমিশন গঠনের বিষয়টি তুলে ধরা হয়েছে। কমিশনের প্রাথমিক রিপোর্টে বলা হয়েছে, শেখ হাসিনার শাসনামলে কমপক্ষে ৩ হাজার ৫০০ মানুষকে গুম করা হয়েছে। এজন্য কেন্দ্রীয় কমান্ড কাঠামো ছিল। যার দেখাশোনা করতেন শেখ হাসিনা নিজে ও তার শীর্ষ কর্মকর্তারা।

এ তালিকায় অন্যতম ব্যক্তিরা হলেন- মেজর জেনারেল তারিক আহমেদ সিদ্দিক, মেজর জেনারেল জিয়াউল আহসান, পুলিশের সিনিয়র কর্মকর্তা মনিরুল ইসলাম এবং মোহাম্মদ হারুন অর রশিদ।

গুমের সঙ্গে জড়িত থাকা কর্মকর্তারা এইচআরডব্লিউকে বলেন, শেখ হাসিনা ও তার সরকারের সিনিয়র সদস্যরা আটকের বিষয়ে জানতেন। তবে বিষয়টি প্রকাশ করা হতো না। কিছু কিছু ক্ষেত্রে শেখ হাসিনা সরাসরি গুম ও হত্যাকাণ্ডের নির্দেশ দিয়েছেন।

নির্যাতন, জোরপূর্বক গুম এবং হত্যাকাণ্ড অংশে প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, শেখ হাসিনা দেশ ছেড়ে পালানোর পরেই, জোরপূর্বক গুমের শিকার তিনজন- মাইকেল চাকমা, মীর আহমেদ বিন কাসেম (আরমান) এবং আবদুল্লাহিল আমান আজমী মুক্তি পান। তিনজনের ক্ষেত্রেই কর্তৃপক্ষ বছরের পর বছর ধরে তাদের আটক রাখার কথা অস্বীকার করে আসছিল। কিন্তু মুক্তির পর তারা সবাই সাংবাদিকদের নির্জন কারাগারে রাখার কথা জানিয়েছেন। এমনকি সেখানে অন্য বন্দিদের কথা শুনতে পেয়েছেন বলেও জানিয়েছেন তারা।

২০১৬ সালের আগস্টে আযমী ও আরমানের সঙ্গে হুম্মাম কাদের চৌধুরীকে আটক করা হয়। তারা তিনজনই বিরোধী দলের নেতার ছেলে, যাদের পিতার বিরুদ্ধে বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় পাকিস্তান সেনাবাহিনীর সহযোগী হিসেবে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে বিচার ও দোষী সাব্যস্ত করা হয়েছিল। সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীর ছেলে হুম্মামকে ২০১৭ সালের মার্চ মাসে এই শর্তে মুক্তি দেওয়া হয় যে, তিনি তার বেআইনি আটকের বিষয়ে চুপ থাকবেন।

guest
0 Comments
Oldest
Newest Most Voted
Inline Feedbacks
View all comments

এই বিভাগের আরও খবর

আজ রাতেই আওয়ামী লীগের ভবিষ্যৎ নির্ধারণ হবে: নাহিদ ইসলাম

নিজস্ব প্রতিনিধি: জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায়ক ও সাবেক তথ্য উপদেষ্টা নাহিদ ইসলাম আওয়ামী লীগের বিচার ও রাজনৈতিক নিষিদ্ধকরণের দাবি জানিয়েছেন। বৃহস্পতিবার (৮ মে) রাতে

জুলাই স্মৃতি ফাউন্ডেশনের সিইও পদ থেকে স্নিগ্ধের পদত্যাগ, নতুন দায়িত্বে লেফটেন্যান্ট কর্নেল (অব.) কামাল আকবর

নিজস্ব প্রতিনিধি: জুলাই স্মৃতি ফাউন্ডেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) পদ থেকে সরে দাঁড়ালেন মীর মাহবুবুর রহমান স্নিগ্ধ। বৃহস্পতিবার (৮ মে) রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় অন্তর্বর্তী

আব্দুল হামিদের দেশত্যাগে জড়িতদের শাস্তি নিশ্চিত না করতে পারলে আমি পদত্যাগ করবো: স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা

নিজস্ব প্রতিনিধি:সাবেক রাষ্ট্রপতি আব্দুল হামিদের দেশত্যাগে সহযোগিতায় জড়িতদের বিচারের আওতায় আনতে না পারলে পদত্যাগ করবেন বলে ঘোষণা দিয়েছেন স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) মো. জাহাঙ্গীর

সশস্ত্র বাহিনীর নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ক্ষমতার মেয়াদ আরও দুই মাস বাড়ালো সরকার

নিজস্ব প্রতিনিধি:সশস্ত্র বাহিনীকে দেওয়া বিশেষ নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের ক্ষমতার মেয়াদ আরও দুই মাস বা ৬০ দিন বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। এই মেয়াদকাল শুরু হবে আগামী ১৪

Scroll to Top