অন্তবর্তী সরকার ছাত্র-জনতার জুলাই গণঅভ্যুত্থানে শহীদ পরিবারের সদস্যদের কল্যাণ, আহতদের চিকিৎসা ও পুনর্বাসনে নীতিমালা করতে যাচ্ছে। খসড়া নীতিমালা অনুযায়ী, শহীদ পরিবার এককালীন বা মাসে মাসে অর্থ পাবেন। সন্তানরা পাবেন বিনামূল্যে শিক্ষা সহায়তা। আহতদের জন্যও থাকছে ক্যাটাগরি অনুযায়ী সুবিধা।
আহতদের চারটি ক্যাটাগরিতে ভাগ করে সহায়তা দেওয়া হবে। তারা আজীবন চিকিৎসা সহায়তা পাবেন। খসড়া নীতিমালা অনুযায়ী, তাদের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করা হবে, দেওয়া হবে উচ্চশিক্ষার সুযোগ।
একই সঙ্গে কেউ সহায়তা পেতে মিথ্যা ও ভুল তথ্য দিয়ে আহতের তালিকায় অন্তর্ভুক্ত হলে তাকে শাস্তির মুখে পড়তে হবে। গুনতে হবে নেওয়া অর্থের দ্বিগুণ জরিমানা।
মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের জুলাই গণঅভ্যুত্থান বিষয়ক বিশেষ সেল এজন্য ‘জুলাই গণঅভ্যুত্থান-২০২৪ এ শহীদ পরিবারের সদস্যদের কল্যাণ এবং আহতদের চিকিৎসা ও পুনর্বাসন নীতিমালা, ২০২৫’ এর খসড়া করেছে।
শিগগির নীতিমালাটি চূড়ান্ত করে সহায়তা কার্যক্রম শুরু করা হবে বলে জানিয়েছেন মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা।
ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানে গত বছরের ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতন হয়। ওইদিন প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে পদত্যাগ করে ভারতে পালিয়ে যান শেখ হাসিনা। এ গণঅভ্যুত্থানে শহীদ ৮৩৪ জনের গেজেট প্রকাশ করে সরকার। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হিসাব অনুযায়ী, এখন পর্যন্ত ১৩ হাজারের বেশি আহতের তালিকা পাওয়া গেছে।
মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিব ইসরাত চৌধুরী বলেন, ‘জুলাই গণঅভ্যুত্থানে নিহতের পরিবার ও আহতদের সহায়তা এবং পুনর্বাসনের জন্য আমরা একটা নীতিমালা করছি। একটি খসড়া করা হয়েছে। আগামী দু-তিনদিন পর একটি আন্তঃমন্ত্রণালয় সভা আছে। সেখানে খসড়া নীতিমালাটি চূড়ান্ত করবো।’
কবে নাগাদ সহায়তা দেওয়ার কার্যক্রম শুরু হচ্ছে- জানতে চাইলে সচিব বলেন, ‘আহতদের বিষয়ে সারাদেশের তথ্য আমরা এখনো পাইনি। এখন পর্যন্ত ৩৩টি জেলা থেকে তথ্য পাওয়া গেছে। তবে আমরা শুরু করার জন্য প্রস্তুত আছি। শহীদদের একটা তালিকা তো হয়ে আছে। আমরা শহীদ পরিবারকে সহায়তা দেওয়ার কার্যক্রম যে কোনো সময় শুরু করবো। প্রধান উপদেষ্টা এ কার্যক্রম উদ্বোধন করবেন।’
গণঅভ্যুত্থানে আহতদের চিকিৎসা ও শহীদ পরিবারকে সহায়তা দিতে একটি নীতিমালা প্রণয়ন এবং শহীদ ও আহত ব্যক্তিদের পরিচিতিসহ একটি পূর্ণাঙ্গ তালিকা করতে গত ১৫ আগস্ট একটি কমিটি গঠন করে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের স্বাস্থ্যসেবা বিভাগ। ১৩ সদস্যের ওই কমিটির আহ্বায়ক হন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের সাবেক সিনিয়র সচিব মুহাম্মদ হুমায়ুন কবির।
শহীদ পরিবার যে সুবিধা পাবে
খসড়া নীতিমালায় বলা হয়েছে, জুলাই-আগস্ট গণঅভ্যুত্থানে শহীদ পরিবার সরকার নির্ধারিত এককালীন অনুদান পাবে। শহীদের সন্তানরা বিনামূল্যে পাবেন শিক্ষা সহায়তা। এককালীন সরকারি অনুদান বণ্টনের ক্ষেত্রে উত্তরাধিকার আইন প্রযোজ্য হবে।
যিনি শহীদ হয়েছেন, তিনি পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তি হলে তার পরিবারের ভরণ-পোষণের জন্য মাসিক অর্থ দেওয়া হবে। তবে কোনো শহীদের ওয়ারিশরা চাইলে অর্থ এককালীন দেওয়া হবে।
আহতদের নিয়ে হবে চারটি ক্যাটাগরি
গণঅভ্যুত্থানে আহতদের ধরন অনুযায়ী চারটি ক্যাটাগরিতে ভাগ করা হবে। অতি গুরুতর আহতরা ‘ক্যাটাগরি-এ’ অন্তর্ভুক্ত হবেন। উভয় হাত বা পাবিহীন, সম্পূর্ণ দৃষ্টিহীন, সম্পূর্ণভাবে মানসিক বিকারগ্রস্ত এবং স্বাভাবিক কাজ করতে অক্ষম বা এমন আহত ব্যক্তি অতি গুরুতর আহত হিসেবে বিবেচিত হবেন।
‘ক্যাটাগরি-বিতে থাকবেন গুরুতর আহতরা। এক হাত বা পাবিহীন, আংশিক দৃষ্টিহীন, মস্তিষ্কে গুরুতর আঘাতপ্রাপ্ত বা এমন আহত ব্যক্তি ক্যাটাগরি-বিতে অন্তর্ভুক্ত হবেন।
যারা এখনো হাসপাতালে চিকিৎসাধীন, কিন্তু সুস্থ হতে আরও চিকিৎসার প্রয়োজন রয়েছে এবং স্বাভাবিক কাজকর্ম করতে সক্ষম হবে (শ্রবণশক্তি বা দৃষ্টিশক্তি ক্ষতিগ্রস্ত, গুলিতে আহত বা এমন আহত ব্যক্তি) ক্যাটাগরি-সির মধ্যে পড়বেন।
সাধারণ আহতরা থাকবেন ক্যাটাগরি-ডিতে। যারা আহত হওয়া সত্ত্বেও ইতোমধ্যে সুস্থ হয়ে হাসপাতাল ত্যাগ করেছেন এবং স্বাভাবিক কাজকর্ম করতে সক্ষম তারা ক্যাটাগরি-ডির অন্তর্ভুক্ত হবেন বলে নীতিমালায় উল্লেখ করা হয়েছে।
আহতদের কোন ক্যাটাগরিতে কী সুবিধা
খসড়া নীতিমালা অনুযায়ী ‘ক্যাটাগরি-এ’র অন্তর্ভুক্ত আহত ব্যক্তি সরকার নির্ধারিত হারে এককালীন বা মাসিক অনুদান এবং আজীবন বিনামূল্যে চিকিৎসা সুবিধা পাবেন।
ক্যাটাগরি-বিতে আহত ব্যক্তি সরকার নির্ধারিত এককালীন অনুদান, আজীবন বিনামূল্যে চিকিৎসা সুবিধা ও বিনামূল্যে উচ্চশিক্ষার সুযোগ পাবেন। শিক্ষাগত যোগ্যতা, শারীরিক অবস্থা ও সামাজিক অবস্থানের ভিত্তিতে উপযুক্ত কর্মসংস্থান বা পুনর্বাসন করা হবে।
ক্যাটাগরি-সির আহত ব্যক্তি আজীবন বিনামূল্যে চিকিৎসা সুবিধা ও উচ্চশিক্ষার সুযোগ পাবেন এবং শিক্ষাগত যোগ্যতা, শারীরিক অবস্থা ও সামাজিক অবস্থানের ভিত্তিতে উপযুক্ত কর্মসংস্থান বা পুনর্বাসন করা হবে।
ক্যাটাগরি-ডির আহত ব্যক্তি আজীবন বিনামূল্যে চিকিৎসা সুবিধা ও উচ্চশিক্ষার সুযোগ পাবেন বলে খসড়া নীতিমালায় উল্লেখ করা হয়েছে।