১লা মে, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ | ১৮ই বৈশাখ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ | ৩রা জিলকদ, ১৪৪৬ হিজরি

ভালোবাসার মোহ, নাকি পথভ্রষ্টতা? ইসলামের দৃষ্টিকোণ থেকে মূল্যায়ন

জাহেদুল ইসলাম আল রাইয়ানঃ

শীতের বিদায়ের সঙ্গে সঙ্গে বসন্তের বাতাস বইতে শুরু করেছে। প্রকৃতির মতো মানুষের মনেও যেন জাগে আবেগের ঢেউ। ফেব্রুয়ারির মাঝামাঝি এলেই অনেক তরুণ-তরুণীর মনে জাগে এক বিশেষ দিন উদযাপনের উৎসাহ ভালোবাসা দিবস। তবে এই ভালোবাসার নামে যে সম্পর্ক গড়ে ওঠে, তা কি সত্যিই পবিত্র? ইসলাম কি বলে এই তথাকথিত প্রেমের উৎসব সম্পর্কে?

সময়ের পরিক্রমায় ভালোবাসা দিবস এখন শুধুই আবেগের প্রদর্শনী নয়, বরং এক ধরনের অপসংস্কৃতির প্রতিচ্ছবি। তরুণ-তরুণীরা একদিনের ভালোবাসার মোহে ভুলে যায় নিজেদের ধর্মীয় মূল্যবোধ, হারিয়ে ফেলে শালীনতার সীমারেখা। অথচ ইসলাম ভালোবাসাকে স্বাগত জানায়, তবে সেই ভালোবাসা হতে হবে হালাল, হতে হবে বৈধ। ইসলাম সেই সম্পর্ককেই সম্মানিত করেছে, যা আল্লাহর বিধান মেনে বিবাহের বন্ধনে আবদ্ধ হয়।

কুরআনে আল্লাহ বলেন, আর ব্যভিচারের নিকটেও যেয়ো না। নিশ্চয়ই এটি একটি অশ্লীল কাজ ও নিকৃষ্ট পথ।(সূরা আল-ইসরা: ৩২)

এই আয়াত স্পষ্ট করে দেয় যে, ব্যভিচার শুধু শারীরিক সম্পর্কেই সীমাবদ্ধ নয়, বরং তার দিকে ধাবিত করে এমন প্রতিটি কাজই নিষিদ্ধ। প্রেমের নামে আজকালকার সম্পর্কগুলো শুরু হয় নির্দোষ কথোপকথন দিয়ে, আস্তে ধীরে গোপন সাক্ষাৎ, স্পর্শ, এবং শেষ পর্যন্ত সমাজ ও ধর্মের সকল নিয়ম, সীমা লঙ্ঘন করে। অথচ এই সম্পর্কগুলোর কোনো স্থায়িত্ব নেই, নেই কোনো দায়িত্ববোধ, বরং অনেক ক্ষেত্রেই তা দুঃখজনক পরিণতির দিকে ঠেলে দেয়।

ভালোবাসা দিবসের শেকড় খুঁজতে গেলে দেখা যায়, এটি কোনো ইসলামি সংস্কৃতি নয়। বরং এটি রোমান ঐতিহ্য থেকে এসেছে, যেখানে প্রেমের নামে নৈতিক অবক্ষয়ের চর্চা ছিল প্রবল।
রাসূলুল্লাহ সা. বলেছেন,”যে ব্যক্তি কোনো জাতির অনুকরণ করবে, সে তাদের অন্তর্ভুক্ত বলে গণ্য হবে।” (আবু দাউদ: ৪০৩১)

এমন দিনে যখন গোটা বিশ্ব প্রেমের নামে নৈতিকতাকে জলাঞ্জলি দিচ্ছে, তখন একজন মুসলিমের উচিত নিজের আত্মাকে সংযত করা, প্রবৃত্তির অনুসরণ না করে ইসলামের নির্দেশিত পথে থাকা। প্রকৃত ভালোবাসা হলো সেই ভালোবাসা, যা আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য হয়, যেখানে মোহের পরিবর্তে মমতা থাকে, যেখানে প্রবৃত্তির দাসত্ব নয়, বরং পরস্পরের প্রতি সম্মান ও দায়িত্ববোধ থাকে।
ইসলাম সেই ভালোবাসাকে উৎসাহিত করে, যা বিবাহের মাধ্যমে পূর্ণতা পায়, যা জীবনসঙ্গীর প্রতি দায়িত্বশীলতার শিক্ষা দেয়।

কুরআনে আল্লাহ তাআলা বলেছেন, তিনি তোমাদের মধ্য থেকে তোমাদের জন্য সঙ্গিনী সৃষ্টি করেছেন, যাতে তোমরা তাদের কাছে শান্তি পাও, এবং তিনি তোমাদের মধ্যে ভালোবাসা ও দয়া সৃষ্টি করেছেন। (সূরা আর-রূম: ২১)

সময়ের স্রোতে পরিবর্তন এসেছে, সংস্কৃতির নামে অনেক কিছুকে স্বাভাবিক করা হয়েছে। কিন্তু একজন মুসলিমের জন্য সত্য ও মিথ্যার পার্থক্য বুঝতে শিখতে হবে। ভালোবাসা যদি সত্যিই খাঁটি হয়, তবে সেটি কেন গোপন থাকবে? কেন সেটি সামাজিক বিধান ও ধর্মীয় সীমা লঙ্ঘন করবে?
যারা প্রকৃত ভালোবাসা খোঁজে, তাদের জন্য একমাত্র পথ বিবাহ। কারণ একমাত্র হালাল ভালোবাসাই মানুষকে জান্নাতের পথে নিয়ে যেতে পারে, যেখানে হারাম সম্পর্কের কোনো স্থান নেই।

লেখক, শিক্ষার্থী আল-আজহার বিশ্ববিদ্যালয়,কায়রো, মিশর।

guest
0 Comments
Oldest
Newest Most Voted
Inline Feedbacks
View all comments

এই বিভাগের আরও খবর

কবির বিন সামাদকে হত্যার হুমকির প্রতিবাদে সাতক্ষীরায় মানববন্ধন

শরিফুল ইসলাম সাতক্ষীরা প্রতিনিধি : সাতক্ষীরায় জনপ্রিয় ইসলামী সাংস্কৃতি ব্যক্তিত্ব কবির বিন সামাদকে ভূমিদস্যু ও বাটপার বহিষ্কৃত বিএনপি নেতা আব্দুর রউফ কর্তৃক মাহফিলের স্টেজ থেকে

২৬ এপ্রিল হাটহাজারী আসছেন চরমোনাই পীর

আসগর সালেহী, চট্টগ্রাম প্রতিনিধিঃ চট্টগ্রামের হাটহাজারীতে আসছেন ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ এর আমীর, আমীরুল মুজাহিদীন, হযরত মাওলানা মুফতি সৈয়দ মুহাম্মদ রেজাউল করীম (চরমোনাই পীর সাহেব)। জানা

পাগলা মসজিদের দানবাক্সে এবারও মিললো ২৮ বস্তা টাকা

শাহজাহান সাজু, কিশোরগঞ্জ প্রতিনিধিঃ কিশোরগঞ্জের ঐতিহাসিক পাগলা মসজিদের দানবাক্স (সিন্দুক) চার মাস ১২ দিন পর আবারও খোলা হয়েছে। দানবাক্সগুলি থেকে এবারও মিলেছে ২৮ বস্তা টাকা।

মিম্বরের ভাষ্য, জাতির জাগরণ আল-আজহারের খতিব বললেন, “মুসলমানদের ভূমি অন্য কারো হতে পারে না”

জাহেদুল ইসলাম আল রাইয়ান, আল-আজহার বিশ্ববিদ্যালয়, কায়রো, মিশর কায়রোর প্রাচীন হৃদয়ে দাঁড়িয়ে আছে একটি বর্ণময় আলোকস্তম্ভ— আল-আজহার। হাজার বছরেরও বেশি সময় ধরে জ্ঞান, আধ্যাত্মিকতা ও

Scroll to Top