লেখক: মাওলানা আসগর সালেহী
রমজান হলো রহমত, বরকক ও মাগফিরাতের মাস। এই মাসে সামান্য আমলও বহুগুণে বৃদ্ধি পায়। এমাসের নফল ইবাদত সমূহ অন্যান্য মাসের ফরজের সমান নেকী অর্জন করা যায়।
আল্লাহ তাআলা বান্দাদের জন্য রমজানকে এমন এক সুযোগ করে দিয়েছেন, যেখানে অল্প পরিশ্রমে অনেক সওয়াব অর্জন করা যায়। তবে পরিকল্পনামাফিক আমল করলে রমজানের পূর্ণ ফজিলত পাওয়া সহজ হয়।
অনেকে রমজান মাসের প্রথম দিকেই ইবাদতে মনোযোগী থাকেন, কিন্তু সময়ের সঙ্গে সঙ্গে গাফিলতি চলে আসে। তাই শুরু থেকেই যদি ছোট ছোট আমলগুলোর জন্য একটি রুটিন তৈরি করা হয়, তবে পুরো মাসজুড়ে আমল ধরে রাখা সম্ভব। নিচে এমন কিছু গুরুত্বপূর্ণ আমলের তালিকা দেওয়া হলো, যা প্রতিদিন পালন করলে রমজানের বরকত ও রহমত অর্জন সহজ হবে। রমজানের প্রতিদিনের আমল রুটিন এভাবে করতে পারেন-
প্রতিদিন ১ টাকা হলেও দান করা
সামান্য হলেও নিয়মিত সদকা দিন, কারণ রাসুল (সা.) বলেছেন, “সদকা গুনাহকে এমনভাবে নিঃশেষ করে দেয়, যেমন পানি আগুনকে নিভিয়ে দেয়।” (তিরমিজি)
প্রতিদিন অন্তত একজন মানুষের উপকার করা পরোপকারের মাধ্যমে রমজানের শিক্ষাকে বাস্তবে রূপ দিন। কাউকে সহযোগিতা করা, ভালো কথা বলা, অসহায়ের পাশে দাঁড়ানো ইত্যাদি আমল করুন।
প্রতিদিন একবার হলেও দরূদ শরীফ পড়া রাসুল (সা.)-এর প্রতি দরূদ পাঠের মাধ্যমে দুনিয়া ও আখিরাতে কল্যাণ লাভ করা যায়।
প্রতিদিন এক আয়াত হলেও কোরআন তিলাওয়াত করা
যারা ব্যস্ত, তারা কমপক্ষে এক আয়াত হলেও কোরআন পড়ার অভ্যাস করুন। যারা সময় পান, তারা দৈনিক অন্তত এক পারা পড়ার চেষ্টা করুন।
প্রতিদিন দুই রাকাত হলেও নফল নামাজ পড়া রমজানে ফরজ নামাজের পাশাপাশি নফল ইবাদতের গুরুত্ব অনেক বেশি। তাহাজ্জুদ, চাশত, আওয়াবিন পড়ার চেষ্টা করুন।
চলতে ফিরতে জিকির করা
‘সুবহানাল্লাহ’, ‘আলহামদুলিল্লাহ’, ‘আল্লাহু আকবার’—এ ধরনের সহজ জিকির চলার পথে, কাজের ফাঁকে নিয়মিত করুন।
অযথা কথাবার্তা, গীবত ও বিতর্ক পরিহার করা রমজান হলো আত্মসংযমের মাস। গীবত, মিথ্যা, অনর্থক তর্ক-বিতর্ক থেকে দূরে থাকুন।
প্রতিবেশীদের হক আদায়ের চেষ্টা করা
আপনার আশপাশের লোকদের সাহায্য করুন, বিশেষ করে যারা অসহায়, বৃদ্ধ বা দুস্থ।
অন্যের কষ্ট হয় এমন কাজ পরিহার করা
নিজের কথাবার্তা ও আচরণ সংযত রাখুন, যাতে অন্য কেউ কষ্ট না পায়।
প্রতিদিন ইস্তেগফার করা
আমাদের অজান্তেই অনেক গুনাহ হয়। নিয়মিত ‘আস্তাগফিরুল্লাহ’ পড়ে আল্লাহর কাছে ক্ষমা চান।
সেহরি ও ইফতারের দোয়া পড়া
সঠিক নিয়মে সেহরি ও ইফতার করুন এবং সুন্নতি দোয়া পড়ার অভ্যাস করুন।
তারাবিহ নামাজে মনোযোগী হওয়া
রমজানের অন্যতম বড় আমল তারাবিহ নামাজ। সম্ভব হলে ২০ রাকাত পড়ুন এবং মনোযোগ সহকারে কোরআন শ্রবণ করুন।
প্রতিদিন অন্তত একটি ইসলামিক জ্ঞান অর্জন করা
কোনো হাদিস, আয়াত বা ইসলামী মাসয়ালা শিখুন এবং তা জীবনে প্রয়োগ করুন।
পরিবারের সঙ্গে ইসলামী আলোচনায় অংশ নেওয়া সন্ধ্যায় বা সেহরির পর পরিবার নিয়ে ইসলামী আলোচনা করুন। এটি সন্তানদের ভালো শিক্ষা দেবে।
রমজানের শেষ ১০ দিন ইতেকাফ বা ইবাদতে মনোযোগী হওয়া যদি সম্ভব হয়, শেষ ১০ দিনে মসজিদে ইতেকাফ করুন বা ঘরে থেকেই বেশি বেশি ইবাদত করুন।
লাইলাতুল কদরের খোঁজ করা ও বিশেষ দোয়া করা রমজানের শেষ দশকে বেশি বেশি ইবাদত করুন, কারণ লাইলাতুল কদর ১০০০ মাসের চেয়ে উত্তম।
রমজানকে শুধু উপোস থাকার মাস মনে না করে এটি আত্মশুদ্ধির মাস হিসেবে গ্রহণ করা উচিত। প্রতিদিনের আমলের জন্য একটি রুটিন তৈরি করলে এই মাসের ফজিলত পাওয়া সহজ হবে। আল্লাহ আমাদের সবাইকে এই বরকতময় মাসের প্রতিটি মুহূর্ত যথাযথভাবে কাজে লাগানোর তাওফিক দান করুন। আমিন।