১৭ই জুন, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ | ৩রা আষাঢ়, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ | ২১শে জিলহজ, ১৪৪৬ হিজরি

ক্ষমা, করুণা ও মুক্তির রমজান

আল্লামা শাহ মুহিব্বুল্লাহ বাবুনগরী হাফিঃ

‘রমজান’ আরবি শব্দ, যার অর্থ পুড়িয়ে ফেলা। রমজান আমাদের জীবনের সব পাপ-পংকিলতা জ্বালিয়ে-পুড়িয়ে দেয়Ñতাই রমজানকে রমজান নামে অভিহিত করা হয়। রমজান আসে শান্তি, মুক্তি ও কল্যাণের বার্তা নিয়ে। রমজানের সাধনায় জাগ্রত হয় মুসলিম উম্মাহর ইমানের চেতনা। রসুল (সা.) বলেছেন, ‘ঈমান ও এখলাছের সঙ্গে যারা রোজা রাখে, মহান আল্লাহ তাঁদের অতীতের সব গুণাহ মাফ করে দেন।’ হজরত আবু উমামা (রা.) বলেন, ‘আমি নবিজির কাছে জানতে চাইলাম, হে রাসুল! আমাকে এমন একটি কাজের আদেশ দিন, যার দ্বারা আল্লাহ আমাকে উপকৃত করবেন। তখন নবিজি বললেন- তুমি সিয়াম সাধনা করো। কারণ, এর কোনো তুলনা হয় না।’ ইতিহাস থেকে জানাযায়, এরপর সাহাবি আবু উমামার ঘরে দিনের বেলায় আর কোনো দিন রান্না হয়নি।’
রমজান মুসলমানদেরকে নিয়ে আসে এক বিশেষ প্রশিক্ষণের আওতায়। প্রতিদিন শেষ রাতে জেগে ‘সেহরি’ খাওয়া, সূর্যোদয় থেকে সূর্যাস্ত পর্যন্ত পানাহার ও অন্যান্য নিষিদ্ধ কর্ম থেকে বিরত থাকা, সূর্য অস্ত যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে ইফতার করা, তারপর রাতের একটি বিশেষ অংশ তারাবিহ ও তাহাজ্জুদে অতিবাহিত করা। এভাবে দীর্ঘ ত্রিশটি দিন প্রশিক্ষণটি চালু থাকে । এটি হলো মূলত স্রষ্টার প্রতি আশরাফুল মাখলুকাত মানব সন্তানদের পরম আনুগত্য, সংযম, ত্যাগ, তিতিক্ষা ও আন্তরিকতার অনুশীলন।
হযরত সালমান ফারসি (রাঃ) থেকে বর্ণিত, রাসুল (সঃ) ইরশাদ করেন, এই মাহে রমজানে চারটি কাজ অবশ্য করণীয়। দুটি কাজতো এমন যে তার দ্বারা তোমাদের পরওয়ার দেগার সন্তুষ্ট হন। আর অবশিষ্ট দুটি এমন যা ছাড়া তোমাদের কোন গন্তব্য নেই্য। এই চারটির একটি হলো- বেশী বেশী কালেমায়ে শাহাদাত পাঠ কার আর দ্বিতীয়টি হলো-অধিক পরিমানে ইস্তেগফার বা ক্ষমা প্রার্থনা করা। এই দুটি কাজ আল্লাহপাকের নিটক অতি পছন্দনীয়। আর তৃতীয় ও চতুর্থ কাজ হলো- বেশী বেশী জান্নাতের আশা করা আর জাহান্নাম থেকে পরিত্রাণের প্রার্থনা করা। এই দুটি এমন বিষয় যা তোমাদের জন্যে একান্ত জরুরী। রোজাদারকে কিয়ামতের দিন আমার হাউজে কাউছার থেকে পানি পান করানো হবে, এরপর জান্নাতে প্রবেশ করা পর্যন্ত সে আর কখনো পানির পিপাসা অনুভব করবেনা। (ইবনে খুজাইমা)।
অন্যায় অসুন্দর কাজ থেকে আত্মরক্ষার জন্য দোযখের শান্তি থেকে মুক্তিলাভের জন্য রোজা হল ঢালস্বরুপ। যেভাবে মানুষ ঢাল দ্বারা আত্মরক্ষা করে থাকে তেমনিভাবে রোজা দ্বারা দুর্বৃত্ত শয়তানের আক্রমন থেকে আত্মরক্ষা করা যায়। তবে তার জন্য শর্তও রয়েছে, প্রিয় নবী হযরত মুহাম্মদ (স:) এরশাদ করেছেন- ‘যতক্ষণ না সে ঢাল কেউ বিনষ্ট করে ফেলে’। প্রিয় নবী (সঃ) এর কাছে সাহাবায়ে কেরাম জিজ্ঞাসা করলেন- ইয়া রাসূলুল্লাহ! রোজার ঢাল কিভাকে বিনষ্ট হয়? তিনি এরশাদ করেছেন- মিথ্যা এবং পরনিন্দার দ্বারা রোজার ঢাল বিনষ্ট হয় তথা এর মর্যাদা ক্ষুন্ন হয়। অতএব, রোজার হেফাজত করতে হলে মিথ্যা কথা, পরনিন্দা প্রভূতি পাপাচার থেকে দুরে থাকতে হবে। তবেই রোজা শান্তি ও কল্যাণেসমুহের কারণ হবে।
জাহান্নাম থেকে মুক্তি, জান্নাত লাভ ও আল্লাহর নৈকট্য ও সান্নিধ্য লাভের এক অতি বাস্তব ও কার্যকর পন্থা সিয়াম সাধনা। চরম সাফল্য লাভের একটি সুবর্ণ সুযোগ। প্রিয় নবী (সঃ) এরশাদ করেছেন- রমজানের প্রত্যেক দিন ও রাতে দোজখের বন্ধিদের মুক্তি প্রদান করা হয় আর প্রত্যেক মুসলমানের একটি দোয়া আল্লাহ তায়ালার নিকট অবশ্যই কবুল হয়।

লেখক : আমীর, হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশ

ফেসবুকে আমরা

মন্তব্য করুন

guest
0 Comments
Oldest
Newest Most Voted
Inline Feedbacks
View all comments

সর্বাাধিক পঠিত নিউজ

Scroll to Top