২৬শে মার্চ, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ | ১২ই চৈত্র, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ | ২৬শে রমজান, ১৪৪৬ হিজরি

‘ভালো-মন্দ স্পর্শ’, শিশুদের সচেতন করবেন যেভাবে

অনলাইন প্রতিনিধিঃ

নিরাপদ শৈশব প্রতিটি শিশুর জন্মগত অধিকার। শৈশবের যেকোনো অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা শিশুর মানসিক গঠনে দীর্ঘমেয়াদে নেতিবাচক প্রভাব ফেলে। তাই শিশুর নিরাপদ শৈশব নিশ্চিত করার দায়িত্ব সবার। তবে বাংলাদেশের সংস্কৃতিতে ‘বড়দের শ্রদ্ধা এবং ছোটদের স্নেহ’ বিষয়টা অনেকটাই প্রতিষ্ঠিত একধরনের বাস্তবতা। সেই জায়গা থেকে শিশুদের আদর করাটাও সামাজিকভাবে বেশ প্রচলিত।

কিন্তু বিশ্বের অনেক দেশেই মা-বাবা ছাড়া অন্য কেউ বা বাইরের কেউ শিশুদের আদর করাকে বেশ নেতিবাচক দৃষ্টিতে দেখা হয়। মা-বাবার অনুমতি ছাড়া এমন ক্ষেত্রে অনেক সময় শক্ত আইনের ব্যবস্থাও থাকে। এর পেছনে একটা বড় কারণ শিশুদের যৌন হয়রানির শিকার হওয়ার ঝুঁকি। কারণ সাবধানতা সত্ত্বেও বিশ্বজুড়ে শিশুদের যৌন নিপীড়নের শিকার হওয়ার ঘটনা ঘটে।যুক্তরাষ্ট্রের রোগনিয়ন্ত্রণ ও প্রতিরোধ কেন্দ্র বা সিডিসির তথ্য বলছে, দেশটিতে প্রতি চারজন মেয়ে শিশুর মধ্যে একজন এবং ২০ জন ছেলে শিশুর মধ্যে একজন যৌন হয়রানির শিকার হয়।

আরও বলা হচ্ছে, এমন এমন হয়রানির শিকার হওয়া ৯০ শতাংশই কোনো পরিচিত বা পরিবারের আস্থাভাজন ব্যক্তিদের দ্বারা ঘটে।শিশুদের ব্যক্তিগত অঙ্গ সম্পর্কে ধারণা তৈরি করা।

• ছেলে শিশুদের ক্ষেত্রে ঠোঁট, গোপনাঙ্গ, পায়ুপথ; মেয়েদের ক্ষেত্রে এই তিন অংশ ছাড়াও বুকের দিকের অংশ।

• জাতিসংঘের শিশু বিষয়ক সংস্থা ইউনিসেফও এই অঙ্গগুলোকে একান্ত ব্যক্তিগত হিসেবে শিশুকে পরিচয় করিয়ে দেওয়ার কথা বলে।

তবে একই সঙ্গে এটাও বলা হয়, কোনো কোনো ক্ষেত্রে সেখানে স্পর্শ করার প্রয়োজন হতে পারে। যেমন শিশুর যদি টয়লেটে বা গোসলে সাহায্যের প্রয়োজন হয় এবং চিকিৎসকের কাছে স্বাস্থ্যের পরীক্ষার জন্য যেতে হয়।

এ ক্ষেত্রে নিরাপদ স্পর্শের উদাহরণ হিসেবে বলা হয় যদি দাদা-দাদি বা নানা-নানি কেউ জড়িয়ে ধরে এবং গালে চুমু দেয় বা বন্ধুরা হাই ফাইভ দেয়। তবে অনিরাপদ স্পর্শ হিসেবে ইউনিসেফ উল্লেখ করেছে––

• যদি ধরলে ব্যথা লাগে

• যদি এমন জায়গায় ধরা বা স্পর্শ করা হয়, যেখানে ধরলে ভালো লাগে না বা যেখানে ধরা উচিত না (ব্যক্তিগত অঙ্গ)

• অস্বস্তি বোধ হয় বা খারাপ লাগে এমনভাবে কেউ ধরলে

• যদি এমনভাবে কেউ ধরে, যাতে ভয় বা নার্ভাস লাগে

• যদি তাকে ধরার জন্য বা স্পর্শ করার জন্য শিশুকে জোর করে

• যদি স্পর্শ করে কাউকে এ বিষয়ে বলতে নিষেধ করে, চুপ থাকতে বলে

• যদি স্পর্শের কথা কাউকে বললে তার ক্ষতি করার হুমকি দেওয়া হয়

• অস্বস্তি বলতে বোঝানো হচ্ছে, মন খারাপ, রাগ, ভয়, লজ্জা

• কেউ এমন করলে যাকে বিশ্বাস করা যায় বা আস্থা রাখা যায়, এমন মানুষকে বলতে হবে

ক্লিনিক্যাল সাইকোলজিস্ট ডা. ইশরাত শারমিন রহমান বলেন, ‘বাবা-মা গোসল করানো বা পরিষ্কার করার সময় ছাড়া অন্য কেউ ব্যক্তিগত অঙ্গ স্পর্শ করতে পারবে না। কেউ সেটি করলে সে কী করবে সেটিও তাকে জানানো। সেটা বাবা মাকে যে জানাবে সেটি শেখাতে হবে। এতে বাচ্চারা সচেতন থাকবে।’

ডা. ইশরাত শারমিন ছোট শিশুদের বেলায় একটু খেলার ছলে, ছবি এঁকে অথবা গল্প করে ধীরে ধীরে ধারণাটা তার মাথায় দেওয়ার পরামর্শ দিচ্ছেন। আর সন্তান একটু বড় হলে মুখে বলা এবং মাঝে মাঝেই মনে করিয়ে দেয়ার কথা বলছেন।

তিনি বলেন, ‘শিশুর আচরণ পরিবর্তন খেয়াল করতে হবে। বাচ্চার আচরণ থেকেও অনেক সময় অনেক কিছু বোঝা যায়। সে যদি কাউকে দেখে ভয় পায়, কারও কোলে যেতে না চায়, তাকে জোর করা উচিত নয়। যে বাচ্চা বিছানা ভেজানো বন্ধ করে দিয়েছে, সে যদি হঠাৎ আবার তা করে, সে যদি ভয় পেয়ে চমকে ওঠে বা রাতে দুঃস্বপ্ন দেখছে, এমন পরিবর্তন খেয়াল করতে হবে।’

guest
0 Comments
Oldest
Newest Most Voted
Inline Feedbacks
View all comments

এই বিভাগের আরও খবর

২৬ মার্চ স্বাধীনতার প্রথম সোপান, বাঙালির বীরত্বের এক অমলিন চিহ্ন

জাহেদুল ইসলাম আল রাইয়ান: ২৬ মার্চ, ১৯৭১—বাংলাদেশের ইতিহাসের এক অবিস্মরণীয় দিন, যার প্রতিটি মুহূর্ত, প্রতিটি ঘটনা, প্রতিটি শব্দ আজও আমাদের হৃদয়ে গেঁথে আছে। এটি ছিল

রমজান মাসের বিদায়, আধ্যাত্মিক সাধনার শেষ সুর, আল্লাহর রহমতের নতুন সূচনা

লেখক জাহেদুল ইসলাম আল রাইয়ান, লেখক,শিক্ষার্থী, আল-আজহার বিশ্ববিদ্যালয়, কায়রো, মিশর রমজান, মুসলিম উম্মাহর সবচেয়ে পবিত্র ও মহিমান্বিত মাস, যখন প্রতিটি মুহূর্তে আল্লাহর রহমত ও বরকতের ঘর উন্মুক্ত

১৭ রমজান, বদর দিবস ও মুসলিম উম্মাহর শিক্ষা

লেখক: মাওলানা আসগর সালেহী সাংবাদিক ও মানবাধিকার কর্মী ফটিকছড়ি, চট্টগ্রাম ১৭ রমজান ইসলামের ইতিহাসে এক গুরুত্বপূর্ণ দিন, যেদিন বদরের ঐতিহাসিক যুদ্ধ সংঘটিত হয়েছিল। এটি ছিল

পরিবেশ রক্ষায় ইসলামের নির্দেশনা ও আমাদের করণীয়

মাওলানা আসগর সালেহীঃ পরিবেশ সংরক্ষণ কেবল আধুনিক বিজ্ঞান বা নীতিনৈতিকতার বিষয় নয়; এটি ইসলামেরও অন্যতম মৌলিক শিক্ষা। মহান আল্লাহ মানুষকে পৃথিবীতে খলিফা হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেছেন

Scroll to Top