১৪ই জুলাই, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ | ৩০শে আষাঢ়, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ | ১৯শে মহর্‌রম, ১৪৪৭ হিজরি

রমজানে নফল ইবাদতের গুরুত্ব

মাওলানা আসগর সালেহী:

রমজান হলো ইবাদতের মাস। এ মাসে ফরজ আমলের পাশাপাশি নফল ইবাদতেরও বিশেষ গুরুত্ব রয়েছে। আল্লাহ তাআলা এ মাসকে এত বেশি বরকতময় করেছেন যে, সাধারণ নফল ইবাদতও ফরজের মর্যাদা পেয়ে যায়। তাই প্রত্যেক মুমিনের উচিত রমজানে ফরজ ইবাদতের পাশাপাশি নফল ইবাদত বৃদ্ধি করা।

নফল ইবাদতের পরিচয়:
নফল ইবাদত বলতে এমন আমল বোঝায়, যা আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য করা হয়, তবে তা বাধ্যতামূলক নয়। অর্থাৎ, এটি করলে সওয়াব রয়েছে, কিন্তু না করলেও কোনো গুনাহ নেই। নফল ইবাদতের মধ্যে রয়েছে তাহাজ্জুদ, চাশতের নামাজ, তেলাওয়াত, জিকির, দরুদ পাঠ, দান-সদকা, ইতেকাফ, নফল রোজা ইত্যাদি।

রাসুলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন—
“আল্লাহ বলেন, আমার বান্দা নফল ইবাদতের মাধ্যমে আমার নৈকট্য লাভ করতে থাকে, ফলে আমি তাকে ভালোবাসি।” (বুখারি)

রাসুলুল্লাহ (সাঃ)-এর নফল ইবাদতের গুরুত্ব:
রাসুলুল্লাহ (সাঃ) ছিলেন নফল ইবাদতে অগ্রগামী। তিনি তাহাজ্জুদ নামাজ নিয়মিত পড়তেন এবং সাহাবাদের তা আদায়ের উৎসাহ দিতেন।
তিনি বলেন-
“তোমরা রাতের নামাজ পড়ো। কারণ এটি তোমাদের পূর্ববর্তী নেককার ব্যক্তিদের অভ্যাস, যা আল্লাহর নৈকট্য লাভের মাধ্যম, পাপের কাফফারা এবং গুনাহ থেকে বাঁচার উপায়।” (তিরমিজি)

রমজানে তিনি আরও বেশি নফল ইবাদতে মগ্ন থাকতেন, বিশেষত শেষ দশকে ইতেকাফ করতেন এবং বেশি বেশি কোরআন তিলাওয়াত করতেন।

সাহাবায়ে কেরামের নফল ইবাদত:
সাহাবায়ে কেরামও নফল ইবাদতে বিশেষ যত্নবান ছিলেন। উসমান (রা.) এক রাকাতে পুরো কোরআন তিলাওয়াত করতেন, আবু হুরাইরা (রা.) প্রতি সপ্তাহে বারো হাজার বার তাসবিহ পাঠ করতেন। রমজানে তাঁরা এত বেশি ইবাদতে ব্যস্ত থাকতেন যে, পার্থিব কাজকর্মও সীমিত করে দিতেন।

রমজানে নফল ইবাদতের গুরুত্ব বেশি কেন?
রমজান হলো গুনাহ মাফের মাস। এ মাসে নফল ইবাদতের গুরুত্ব বাড়িয়ে দেওয়া হয়েছে।

রাসুলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন—
“যে ব্যক্তি রমজানে একটি নফল ইবাদত করে, সে যেন অন্য মাসে একটি ফরজ আদায় করল, আর যে একটি ফরজ আদায় করে, সে যেন অন্য মাসে সত্তরটি ফরজ আদায় করল।”

এ থেকে বোঝা যায়, রমজানে নফল ইবাদতের সওয়াব অনেক বেশি।

পরকালে নফল ইবাদতের ফলাফল:
কিয়ামতের দিন ফরজ ইবাদতে কোনো ঘাটতি থাকলে, নফল ইবাদত দিয়ে তা পূরণ করা হবে।

রাসুলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন—
“কিয়ামতের দিন বান্দার প্রথম হিসাব হবে নামাজের। ফরজ নামাজে যদি ঘাটতি থাকে, তখন আল্লাহ বলবেন, ‘দেখো, তার কাছে কোনো নফল নামাজ আছে কি না?’ যদি থাকে, তাহলে তা দিয়ে ফরজের ঘাটতি পূরণ করা হবে।” (তিরমিজি)

অতএব, নফল ইবাদত শুধু দুনিয়ায় সওয়াব বৃদ্ধির কারণ নয়, বরং আখিরাতেও মুক্তির উপায়।

রমজান মাস আল্লাহর রহমত, মাগফিরাত ও নাজাতের মাস। এ মাসে নফল ইবাদতের মাধ্যমে আল্লাহর নৈকট্য অর্জন করা সহজ। তাই আমাদের উচিত ফরজ ইবাদতের পাশাপাশি নফল ইবাদতও বৃদ্ধি করা। তাহাজ্জুদ পড়া, বেশি বেশি কোরআন তিলাওয়াত, দরুদ পাঠ, জিকির ও দান-সদকা করা। এতে আমাদের দুনিয়া ও আখিরাত উভয়ই সফল হবে, ইনশাআল্লাহ।

লেখক: মাওলানা আসগর সালেহী
সাংবাদিক ও মানবাধিকার কর্মী
ফটিকছড়ি, চট্টগ্রাম।

ফেসবুকে আমরা

মন্তব্য করুন

guest
0 Comments
Oldest
Newest Most Voted
Inline Feedbacks
View all comments

সর্বাাধিক পঠিত নিউজ

Scroll to Top