৩০শে এপ্রিল, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ | ১৭ই বৈশাখ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ | ২রা জিলকদ, ১৪৪৬ হিজরি

শাওয়াল মাসের রোযা

ইমতিয়াজ উদ্দিন, জবি প্রতিনিধি

রমজান মাস তো শেষ হয়ে গেল। এবার এলো শাওয়াল মাস। গুরুত্বের দিক থেকে শাওয়াল মাসও কোনো অংশে কম নয়। শাওয়াল মাসের ১ তারিখেই সমগ্র মুসলিম বিশ্বে ঈদুল ফিতর উদযাপন করা হয়।

তবে শাওয়াল মাসের আরেকটি বিশেষ ফজিলত আছে যা হয়তো অনেকে জানে না। আজ সেই ফজিলতগুলো নিয়ে আলোচনা করবো ইনশাল্লাহ।

রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেন:

مَنْ صَامَ رَمَضَانَ ثُمَّ أَتْبَعَهُ سِتًّا مِنْ شَوَّالٍ كَانَ كَصِيَامِ الدَّهْرِ

‘‘যে ব্যক্তি রামাদান মাসের সিয়াম পালন করবে এবং এরপর সে শাওয়াল মাসে ৬টি সিয়াম পালন করবে, তার সারা বছর সিয়াম পালনের মত হবে।’’
(সহিহ মুসলিম, ২/৮২২)

ফায়দা:

আমরা শেষ জামানায় বসবাস করছি। চারপাশে পাপের ছড়াছড়ি। এই পাপ-পঙ্কিলতার মাঝে মুমিন হিসেবে আমাদের করণীয় হলো যথাসাধ্য নিজেদেরকে সংশোধন করা, কুরআন-সুন্নাহকে যথাসাধ্য মেনে চলার চেষ্টা করা এবং ইবাদতের সমস্ত সুযোগকে যথাসাধ্য কাজে লাগানো।

রমজান মাসের মতো শাওয়াল মাসেও সাওয়াব অর্জনের বিরাট সুযোগ রয়েছে। একবার ভাবুন তো, আপনাকে যদি মাত্র ৬ দিন ৬টি কাজের বিনিময়ে সারা বছরের সমান বেতন দেওয়া হয়, তখন আপনি কী করবেন? আপনি কি ঐ সুযোগকে কাজে লাগাবেন না? যেকোনো সুস্থ মস্তিষ্কের মানুষ সেটাকে কাজে লাগাতে চাইবে।

তেমনই একটা বিরাট সুযোগ মুমিনদেরকে মহান রবের পক্ষ থেকে দেওয়া হয়েছে। সর্বশেষ বার্তাবাহক নবিজী(স) এর মাধ্যমে মহান আল্লাহ তাঁর দুর্বল বান্দাদের জন্য শাওয়াল মাসের ৬টি স্পেশাল রোজার বার্তা পাঠিয়ে দিয়েছেন আজ থেকে প্রায় ১৪০০ বছর পূর্বেই। শাওয়াল মাসের যেকোনো ৬ দিন যে ব্যক্তি রোজা রাখবে সেই ব্যক্তির আমলনামায় সারা বছরের সমান পুণ্য লিখে দেওয়া হবে। সুবহানাল্লাহ।

তবে শাওয়াল মাসের ১ তারিখ তথা ঈদুল ফিতরের দিন রোযা রাখা হারাম। সেই দিন কোনোভাবেই রোজা রাখা যাবে না।

এই ব্যাপারে আবু হোরায়রা (রাযিঃ) থেকে বর্ণিত, “রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম দুই দিন রোযা রাখতে নিষেধ করেছেন।
১.কুরবানীর ঈদের দিন আর ২. ঈদুল ফিতরের দিন। “(ইসলামিক ফাউন্ডেশন ২৫৩৯, ইসলামীক সেন্টার ২৫৩৮, সহিহ মুসলিম, হাদিসের মান: সহিহ)

শাওয়াল মাসের ১ম দিন বাদ দিয়ে বাকি দিনগুলোতে এই ফযিলতপূর্ণ ৬টি রোজা রাখা যাবে।

তবে আমাদের সমাজে শাওয়াল মাস নিয়ে কিছু বানোয়াট বা ভিত্তিহীন কথা প্রচলিত আছে। কিছু দুর্বল সনদের হাদিসও প্রচলিত আছে যা মোটেও গ্রহণযোগ্য নয়।

যেমন : হাদীস শরীফে আছে, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) ফরমাইয়াছেন : যেই ব্যক্তি শাওয়াল মাসে নিজেকে গুনাহের কার্য হইতে বিরত রাখিতে সক্ষম হইবে আল্লাহ তা‘আলা তাহাকে বেহেশতের মধ্যে মনোরম বালাখানা দান করিবেন।

অন্য এক হাদীসে বর্ণিত হইয়াছে, হযরত রাসূলুল্লাহ (ﷺ) এরশাদ করিয়াছেন, যেই ব্যক্তি শাওয়াল মাসের প্রথম রাত্রিতে বা দিনে দুই রাকয়াতের নিয়তে চার রাকয়াত নামায আদায় করিবে এবং উহার প্রতি রাকয়াতে সূরা ফাতিহার পর ২১ বার করিয়া সূরা ইখলাছ পাঠ করিবে; করুণাময় আল্লাহ তা‘আলা তাহার জন্য জাহান্নামের ৭টি দরজা বন্ধ করিয়া দিবেন এবং জান্নাতের ৮টি দরজা উন্মুক্ত করিয়া দিবেন। আর মৃত্যুর পূর্বে সে তাহার বেহেশতের নির্দিষ্ট স্থান দর্শন করিয়া লইবে।… অন্য আর এক হাদীসে বর্ণিত আছে, হযরত রাসূলুল্লাহ (ﷺ) ফরমাইয়াছেন, যে ব্যক্তি শাওয়াল মাসে মৃত্যুবরণ করিবে সে ব্যক্তি শহীদানের মর্যাদায় ভূষিত হইবে।”

এ সবই হাদিসের নামে কথিত বানোয়াট ও ভিত্তিহীন কথা।

শাওয়াল মাসে ৬টি সিয়ামের ফযীলত সহীহ হাদীসের আলোকে আমরা জেনেছি। এ বিষয়ে অতিরঞ্জিত অনেক জাল কথাও প্রচলন করা হয়েছে।

যেমন: ‘‘হযরত রাসূলুল্লাহ (ﷺ) ফরমাইয়াছেন, যেই ব্যক্তি শাওয়াল মাসে ছয়টি রোজা রাখিবে, আল্লাহ তায়ালা তাহাকে শাস্তির শৃংখল ও কঠোর জিঞ্জিরের আবেষ্টনী হইতে নাজাত দিবেন.. অন্য এক হাদীসে বর্ণিত হইয়াছে, হযরত রাসূলুল্লাহ (ﷺ) ফরমাইয়াছেন, যেই ব্যক্তি শাউয়াল মাসের ৬টি রোজা রাখিবে, তাহার আমলনামায় প্রত্যেক রোজার পরিবর্তে সহস্র রোজার সাওয়াব লিখা হইবে।’’

‘‘রাসূল (ﷺ) বলেছেন, যে ব্যক্তি শাওয়াল মাসে রোজা রাখেন আল্লাহ পাক তার জন্য দোজখের আগুন হারাম করে দেন।যে ব্যক্তি শাওয়াল মাসে ছয়টি রোজা রাখে, আল্লা-তায়ালা তার আমল নামায় সমস্ত মুহাম্মদী নেককার লোকের সাওয়াব লিখেন এবং সে হযরত সিদ্দিক আকবার (রা)-এর সঙ্গে বেহেস্তে স্থান পাবে।…যে ব্যক্তি শাওয়াল মাসে রোজা রাখে আল্লাহ তায়ালা তাকে লাল-ইয়াকুত পাথরের বাড়ী দান করবেন এবং প্রত্যেক বাড়ীর সম্মুখে দুধ ও মধুর নহর প্রবাহিত হতে থাকবে। ফেরেশতারা তাকে আসমান হতে ডেকে বলবেন, হে আল্লাহর খাস-বান্দা, আল্লাহ তোমাকে মাফ করে দিয়েছেন। শাওয়াল মাসে লূতের (আঃ) কওম ধ্বংস হয়েছিল, নূহের (আঃ)কওম ডুবেছিল, হুদের (আঃ) কওম ধ্বংস হয়েছিল।”

এরূপ অসংখ্য মিথ্যা কথা দুঃসাহসের সাথে নিঃসঙ্কোচে রাসূলুল্লাহ (স) এর নামে প্রচলিত আছে আমাদের সমাজে। এভাবে রাসুল(স) এর নামে মিথ্যা কথা বা বানোয়াট হাদিস প্রচার করা নিঃসন্দেহে গোনাহের কাজ। এ সম্পর্কে আয়েশা (রাঃ) হতে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
“যে ব্যক্তি আমার এই দ্বীনে (নিজের পক্ষ থেকে) কোন নতুন কথা উদ্ভাবন করল—যা তার মধ্যে নেই, তা প্রত্যাখ্যানযোগ্য।” (সহিহ বুখারী ২৬৯৭, মুসলিম ৪৫৮৯)

আল্লাহ আমাদেরকে রাসুল(স) এর নামে এরূপ মিথ্যা বানোয়াট হাদিস থেকে বেঁচে থাকার তৌফিক দান করুন। সেই সাথে শাওয়াল মাসে ছয়টি রোজা রেখে পুণ্য অর্জনের তৌফিক দান করুন। আমিন।

guest
0 Comments
Oldest
Newest Most Voted
Inline Feedbacks
View all comments

এই বিভাগের আরও খবর

কবির বিন সামাদকে হত্যার হুমকির প্রতিবাদে সাতক্ষীরায় মানববন্ধন

শরিফুল ইসলাম সাতক্ষীরা প্রতিনিধি : সাতক্ষীরায় জনপ্রিয় ইসলামী সাংস্কৃতি ব্যক্তিত্ব কবির বিন সামাদকে ভূমিদস্যু ও বাটপার বহিষ্কৃত বিএনপি নেতা আব্দুর রউফ কর্তৃক মাহফিলের স্টেজ থেকে

২৬ এপ্রিল হাটহাজারী আসছেন চরমোনাই পীর

আসগর সালেহী, চট্টগ্রাম প্রতিনিধিঃ চট্টগ্রামের হাটহাজারীতে আসছেন ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ এর আমীর, আমীরুল মুজাহিদীন, হযরত মাওলানা মুফতি সৈয়দ মুহাম্মদ রেজাউল করীম (চরমোনাই পীর সাহেব)। জানা

পাগলা মসজিদের দানবাক্সে এবারও মিললো ২৮ বস্তা টাকা

শাহজাহান সাজু, কিশোরগঞ্জ প্রতিনিধিঃ কিশোরগঞ্জের ঐতিহাসিক পাগলা মসজিদের দানবাক্স (সিন্দুক) চার মাস ১২ দিন পর আবারও খোলা হয়েছে। দানবাক্সগুলি থেকে এবারও মিলেছে ২৮ বস্তা টাকা।

মিম্বরের ভাষ্য, জাতির জাগরণ আল-আজহারের খতিব বললেন, “মুসলমানদের ভূমি অন্য কারো হতে পারে না”

জাহেদুল ইসলাম আল রাইয়ান, আল-আজহার বিশ্ববিদ্যালয়, কায়রো, মিশর কায়রোর প্রাচীন হৃদয়ে দাঁড়িয়ে আছে একটি বর্ণময় আলোকস্তম্ভ— আল-আজহার। হাজার বছরেরও বেশি সময় ধরে জ্ঞান, আধ্যাত্মিকতা ও

Scroll to Top