৯ই মে, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ | ২৬শে বৈশাখ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ | ১১ই জিলকদ, ১৪৪৬ হিজরি

কালেমা যখন আদালতের কাঠগড়ায়, তখন চুপ থাকা মানে—ঈমানের গলাকাটা দেখে হাততালি দেওয়া

লেখক জাহেদুল ইসলাম আল রাইয়ান, শিক্ষার্থী আল-আজহার বিশ্ববিদ্যালয়,কায়রো, মিশর

পতাকা ওড়ানো কি সত্যিই অপরাধ?
না কি পতাকায় লেখা সত্য—”লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ”—এই ঘোষণা রাষ্ট্রের গায়ে আগুন ধরিয়ে দেয়?

যেদিন কালেমার পতাকা হাতে একজন ভাই গ্রেফতার হন, সেদিন যেন বাতাসও থমকে গিয়েছিল। সেই বাতাস, যে বাতাসে একদিন ঘোড়া ছুটে চলেছিল বদরের প্রান্তরে, যে বাতাসে উড়েছিল নববী সেনাদের রায়াত—আজ সেই বাতাস ভারী, নিঃশ্বাস কষ্টদায়ক। কারণ, সেই পতাকাই আজ অপরাধপ্রতীক।

এর পরদিনই পহেলা বৈশাখ। ঢাকায় চলে সিকিউরিটি মহড়া। মহড়ায় শেখানো হয়, কীভাবে ‘বিপদ’ চিহ্নিত করতে হয়, কীভাবে ‘টার্গেট’ ফায়ার করতে হয়। আর সেই ‘বিপদ’ যে ইসলাম—সেটা বুঝিয়ে দেওয়া হয় নিঃশব্দে, কিন্তু নির্মমভাবে।
বুঝিয়ে দেওয়া হয়—কালেমা এখন শুধু হৃদয়ে রাখার বস্তু, বাস্তবে প্রকাশ করলেই শৃঙ্খল।
এই দেশেও কি তবে “আল্লাহু আকবার” বলার আগে অনুমতি নিতে হবে?

এখন প্রশ্ন, যাঁরা ইসলামের নাম নিয়ে হাজারো জনতার সামনে দাঁড়ান, গলায় রোদ উঠান, যাঁরা ‘দ্বীনের খেদমত’-এর দায় নেন—তাঁরা কোথায় ছিলেন সেদিন?
কেন তাঁদের কণ্ঠে একটিবারও শোনা গেল না, “কালেমার পতাকা অপরাধ নয়”?
তাঁরা কি সত্যিই ব্যস্ত ছিলেন, না তাদের ব্যস্ততা ছিল না-বলার অজুহাতে?

আজ দ্বীনের ব্যানার ঠিক রাখার নামে দ্বীনের সৈনিকদের বিসর্জন দেওয়া হচ্ছে।
আজ ‘খেদমত’ মানে শান্তিপূর্ণ আত্মসমর্পণ, আর ‘সাবধানতা’ মানে ভীরুতা।
তাদের কাছে পতাকা নয়, বৈধতা বড়। ভাই নয়, ব্যানার টিকে থাকলেই সন্তুষ্টি।

তাদের মুখে আমরা শুনি বুখারীর হাদীস, শুনি বদরের গল্প, শুনি সাহাবীদের শৌর্যবীর্য।
কিন্তু বাস্তবের রণক্ষেত্রে তারা নিঃশব্দ দর্শক।
জুলুম দেখে যারা চুপ থাকে, ইতিহাসে তারা সত্যের পক্ষে নয়—বরং জুলুমের প্রশ্রয়দাতা হিসেবেই চিহ্নিত হয়।

গাজওয়াতুল হিন্দ এখন আর কল্পকাহিনি নয়, তা বাস্তবের দরজায় কড়া নাড়ছে।
আর যারা আজ কালেমার পতাকা দেখে ভ্রু কুঁচকায়, তারা কাল হয়তো সেই গাজওয়া রুখে দাঁড়ানোর ফতোয়া দেবে।
তাদের জন্য ইসলাম মানে লাইসেন্সধারী বক্তৃতা, অনুমোদিত পবিত্রতা—যা শুধু পোস্টার আর পোস্টে সীমাবদ্ধ।

কিন্তু যে দ্বীন পাহাড় কাঁপায়, সে দ্বীন মঞ্চে নয়, ময়দানে প্রমাণিত হয়।
আর সেই ময়দানেই আজ পতাকার পাশে কেউ নেই। আছে শুধু ক্যামেরা, বাঁধা চোখ আর শূন্য চিৎকার।

এখন সময় প্রশ্ন করার—
পতাকা ওড়ালে যদি শৃঙ্খল হয়, তবে সেই শৃঙ্খলে চুপ থাকা শায়েখেরা কোথায়?
আপনারা দ্বীনের প্রতিনিধিত্ব করেন, না তার গলায় বন্ধনী পরানোর চুক্তিবদ্ধ মুখপাত্র?

এখন সময় মুখোশ সরানোর। সময় দাঁড়াবার।
যারা পতাকা নিয়ে জেল যায়, তারা ইতিহাস গড়ে।
আর যারা ব্যানার বাঁচিয়ে চুপ থাকে, তারা ইতিহাসের সবচেয়ে ঘৃণিত গলির নাম।

 

guest
0 Comments
Oldest
Newest Most Voted
Inline Feedbacks
View all comments

এই বিভাগের আরও খবর

আল্লাহর ভালোবাসা—হৃদয়ের আকাশ জুড়ে অনন্ত শান্তির প্রভা

লেখক জাহেদুল ইসলাম আল রাইয়ান যখন পৃথিবীর সমস্ত শব্দ স্তব্ধ হয়ে আসে, যখন সব আশা ধূসর ধুলোয় মিশে যায়—তখনো এক অনন্ত আশ্রয়, এক চিরন্তন ভালোবাসা

৫ মে: শাপলা চত্বরের সেই রক্তাক্ত রাতের স্মৃতি

আজ ঐতিহাসিক ৫ মে। ক্যালেন্ডারে অনেক বছর পেরিয়ে গেলেও বদলায়নি সেই ‘ভয়াল রাতের স্মৃতি’। ২০১৩ সালের এই দিন, ঢাকার মতিঝিল শাপলা চত্বরে ইতিহাসের ‘নির্মমতম গণহত্যা’

আবেগের কফিনে গাঁথা এক জীবনের কবরগাথা

লেখক জাহেদুল ইসলাম আল রাইয়ান সে ছিল স্বপ্নবতী এক তরুণী—চেহারায় মাধুর্য, মননে দীপ্তি। চোখে ছিল স্বপ্ন, হৃদয়ে ছিল নির্মল আকাঙ্ক্ষা। আন্ডারগ্র্যাজুয়েট পড়ার সময় একদিন স্বাভাবিকভাবেই

ঘামে লেখা গৌরবনামা ইসলামে শ্রমিকের মর্যাদা ও মানবতার দৃষ্টিভঙ্গি

লেখক জাহেদুল ইসলাম আল রাইয়ান সকাল যখন দিগন্তে আলো ছড়িয়ে দেয়, তখন প্রথম যে শব্দ ভেসে আসে, তা হলো হাতুড়ির শব্দ, করাতের ঘর্ষণ কিংবা জমিনে

Scroll to Top