রিফাজ বিশ্বাস লালন, ঈশ্বরদী প্রতিনিধি:
পদ্মানদীর বালু মহালের পাবনার ঈশ্বরদী সীমানায় অভিযান চালিয়ে বালু উত্তোলনকারী ৩টি ড্রেজার, বালু ভর্তি ২টি বড় নৌকা জব্দসহ ৪ শ্রমিককে আটকসহ ভ্রাম্যমান আদালতের মাধ্যমে কারাদন্ড দেওয়ার ঘটনায় পাবনা ও নাটোর জেলা প্রশাসনের মধ্যে চরম বিব্রতকর পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে।
এরই পরিপেক্ষিতে শনিবার (৩ মে) দুপুর ৩ টায় সংবাদ সম্মেলন করেন ঈশ্বরদী উপজেলা বালু উত্তোলনের সরকারি অনুমোদন প্রাপ্ত বিশ্বাস এন্টারপ্রাইজে স্বত্বাধিকারী মোঃ সুলতান আলী বিশ্বাস টনি ।
সংবাদ সম্মেলনে টনি বলেন, আমি সরকারের নিকট থেকে বৈধভাবে ইজারা নিয়ে ঈশ্বরদী উপজেলার সাঁড়া মৌজার পদ্মা নদীর তলদেশ থেকে বালু উত্তোলন করে আসছি। লালপুরের সহকারী কমিশনার (ভূমি) মোঃ আজিজুল কবির ঈশ্বরদী উপজেলায় অনধিকার প্রবেশ করে অবৈধভাবে আমার লোকজনকে আটক করে ভ্রাম্যমান আদালতে কারাদন্ড দিয়েছেন। এছাড়াও বালু উত্তোলন কাজে ব্যবহৃত ড্রেজার ও নৌকা থেকে সেলফ, ব্যাটারি, টুল বক্স, অ্যান্ড্রয়েড মোবাইল ফোন, টর্চ লাইট ও নগদ টাকা নিয়ে গেছেন। এবং তিনি এগুলোর জব্দ তালিকার রশিদও দেননি আমাদের। এটা অন্যায়। বিষয়টি আমি ঈশ্বরদী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার মাধ্যমে পাবনা জেলা প্রশাসককে জানিয়েছি এবং ঈশ্বরদী থানায় একটি লিখিত অভিযোগ ও দায়েরের চেষ্টা করেছি। এখন ন্যায় বিচার পাওয়ার স্বার্থে সাংবাদিক ভাইদের সামনে দ্বারস্থ হয়েছি।
এসময় উপস্থিত ছিলেন, এ সময় নৌকার মালিক মাঝি ও ঘাটের অন্যান্য সদস্যের উপস্থিত ছিলেন। এদিকে ঘটনায় তীব্র অসন্তষ্ট প্রকাশ করেছে পাবনা জেলা ও ঈশ্বরদী উপজেলা প্রশাসন।
উল্লেখ্য, শুক্রবার (২ মে ) দুপুরের পর লালপুর উপজেলার সহকারী কমিশনার (ভুমি) মো. আজিজুল কবির সেনা সদস্যদের নিয়ে পদ্মানদীর বালু মহালে অভিযান চালিয়ে আটকসহ ড্রেজার ও নৌকা জব্দ করেন।
আটককৃতরা হলেন,পাবনার ভাঙ্গুড়া উপজেলার মুন্ডুমালা গ্রামের রুস্তম খার ছেলে রাকিবুল খা (২২) ও রবিউল (৩০), সিরাজগঞ্জের উল্লাপাড়ার বিদকান্দি গ্রামের আবুল কাশেমের ছেলে খোকন (৩৫), একই উপজেলার ফিয়াদকান্দি গ্রামের শহিদুল ইসলামের ছেলে শাহামুদ্দিন (১৯)।
বালু উত্তোলনকারী ড্রেজার শ্রমিক আব্দুস সালাম বলেন, আমরা ঈশ্বরদীর সীমানায় টনি বিশ্বাসের বৈধ চর থেকে বালু উত্তোলন করছিলাম। এই সময় সেনাবাহিনীর কিছু সদস্য আমাদের আটক করে সাঁড়াঘাটে নিয়ে আসেন । এরপর তারা ড্রেজারের ২ টি ব্যাটারি, দুটি সেলফ, টার্স মোবাইলসহ নগদ টাকা নিয়ে যান। ব্যাটারি ও সেলফবিহীন ড্রেজারটি তারা সাঁড়াঘাটে ফেলে রেখে গেছেন।
ঈশ্বরদী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সুবীর কুমার দাশ বলেন, বালূ মহালে অভিযান পরিচালনা করা নিয়ে আমাদের কোন অভিযোগ নেই। কিন্তু এক জেলার থেকে অপর জেলায় অভিযান চালাতে হলে সংশ্লিষ্ট জেলার প্রশাসকের সঙ্গে আলোচনা করে যৌথ অভিযান চালাতে হয়। কিন্তু লালপুর উপজেলার সহকারী কমিশনার (ভূমি) মো. আজিজুল কবির আমাদের সঙ্গে কোনরুপ আলোচনা না করে আইন ভঙ্গ করে ঈশ্বরদী সীমানায় অভিযান চালিয়ে লোকজনকে আটকসহ ড্রেজার ও নৌকা জব্দ করেছেন। এটা খুবই অন্যা করেছেন। বিষয়টি আমি পাবনা জেলা প্রশাসককের মাধ্যমে সংশ্লিষ্ট উর্দ্ধতন কতৃপক্ষের মাধ্যমে ব্যবস্থা গ্রহনের দাবী জানিয়েছি।
এব্যাপারে জানতে নাটোর জেলা প্রশাসক, লালপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার ব্যবহৃত সরকারী মোবাইল নম্বরে নিয়ম মেনে অনেক কল দেওয়া হলেও তারা ফোন রিসিভ করেননি। তবে ভ্রাম্যমান আদালত পরিচালনাকারী
লালপুর উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) মো. আজিজুল কবির বলেন, আমরা ঈশ্বরদীর সীমানায় অভিযান চালাইনি। অবৈধভাবে বালু উত্তোলনকারীদের আটক করতে আমাদের একটি আভিযানিকদল শুধুমাত্র ঈশ্বরদীর সঁাড়াঘাট ব্যবহার করেছে। বিষয়টি পরে ঈশ্বরদী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে অবগত করা হয়েছে।
তিনি আরো বলেন, আটককৃতরা অবৈধভাবে পদ্মানদীর বালু মহাল থেকে বালু উত্তোলনসহ সরবরাহ কাজে জড়িত ছিলেন। তাদের তিনজনকে এক মাসের ও একজনকে দুই মাসের বিনাশ্রম কারাদন্ড দেওয়া হয়েছে।
ঈশ্বরদী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শহিদুল ইসলাম শহীদ জানান, থানায় একটি লিখিত অভিযোগ দিয়েছে।, ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা ও ইউএনও স্যারের সাথে সঙ্গে কথা বলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে