মোঃ আমিরুল হক, রাজবাড়ী প্রতিনিধি
রাজবাড়ীর পাংশায় পুর্ববিরোধের জেরধরে রাশেদুল ইসলাম (৩৫) নামে এক যুবককে কুপিয়ে ও পিটিয়ে হত্যার অভিযোগ উঠেছে। রাশিদুল পাংশা উপজেলার পাট্টা গ্রামের কিয়ামদ্দিন মণ্ডলের ছেলে। পেশায় তিনি একজন কৃষক ছিলেন। তার ৬ মাস বয়সী এক ছেলে ও ৫ বছর বয়সী এক মেয়ে রয়েছে। তবে যুবদল ও যুবলীগ কর্মী হিসেবে পাল্টাপাল্টি দাবী করছে বিএনপির দু’টি গ্রুপ।
শনিবার (০৩ মে) দুপুরে ফরিদপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন থেকে তার মৃত্যু হয়। মৃত্যুর খবর ছড়িয়ে পড়লে পাট্রা ইউনিয়ন বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক মারুফ হাসান সুমনের বাড়ীতে আগুন দিয়ে পুড়িয়ে দিয়েছে।
এর আগে সকাল ৯টার দিকে পাংশা উপজেলার পাট্টা ইউনিয়নের নিভা স্কুলের নিকট রাশেদুলকে পিটিয়ে ও কুপিয়ে গুরুতর আহত করে প্রতিপক্ষের লোকজন।
রাশিদুলের ভগ্নিপতি ফজলুর রহমান বলেন, ‘দুই বছর আগে পাট্টা ইউনিয়নের নিভা গ্রামের সুদের কারবারি ইসলামের কাছ থেকে আমার শ্যালক রাশিদুল সাত হাজার টাকা নেন। তবে দেড় বছর আগে ইসলামকে সমস্ত টাকা সুদসহ ফেরত দেয়া হয়। এরপরও আরও টাকা দাবি করেন ইসলাম।’
তিনি আরও বলেন, ‘টাকার দাবিতে ইসলাম আমার শ্যালক রাশিদুলের পাট্টা বাজারে অবস্থিত চায়ের দোকানে ভাঙচুর ও লুটপাট চালায়। একই সঙ্গে আমার শ্যালকের বাড়িতেও ভাঙচুর ও লুটপাট চালানো হয়। এরপর ইসলামের ভয়ে আমার শ্যালকসহ তার পরিবারের সব লোকজন মাগুরার শ্রীপুর থানার চণ্ডিবর গ্রামে আমার বাড়িতে আশ্রয় নেন।’ ফজলুর রহমান বলেন, ‘৭ মাস আগে আমার শ্যালকসহ তার পরিবারের লোকজন আবারো তাদের বাড়িতে ফেরেন। বাড়ি ফিরে আমার শ্যালক তার স্বাভাবিক কাজ কর্ম চালিয়ে যেতে থাকেন। তবে এরমধ্যেও ইসলাম ও তার লোকজন আমার শ্যালককে কয়েকবার হত্যার হুমকি দিয়েছেন।’
রাশেদুলের স্ত্রী জরিনা বেগম বলেন, গত ২২ দিন বরিশালে ধান কাটা শ্রমিকের কাজ করে গত শুক্রবার (২ মে) দিবাগত রাত দেড়টার দিকে বাড়ি ফেরেন। তারা ১৮-২০ জন শ্রমিক একসঙ্গে কাজ করে মজুরি হিসেবে এক ট্রাক ধান নিয়ে আসেন। ধানগুলো তারা রুপিয়াট গ্রামে সঙ্গীয় এক শ্রমিকের বাড়িতে রাখেন। শনিবার সকাল ৯টার দিকে ওই ধান ভাগ করার জন্য রুপিয়াট যাচ্ছিলেন। পথে নিভা গ্রামে পৌঁছালে আগে থেকে ওঁৎ পেতে থাকা ইসলাম, রফিক, খালিদ, সিন্টু, সুমন, সাদ্দাম ও ইকবালসহ ২০-২৫ জন তার পথরোধ করেন। এ সময় তাকে ধারালো অস্ত্র দিয়ে এলোপাথাড়ি কুপিয়ে ও লোহার রড দিয়ে পিটিয়ে গুরুতর আহত করেন। স্থানীয়রা তাকে উদ্ধার করে পাংশা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যায়। অবস্থা গুরুতর হওয়ায় তাকে ফরিদপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় দুপুর ১২টার দিকে রাশিদুল মারা যান। আমি স্বামী হত্যার বিচার চাই।
পাট্রা ইউনিয়ন বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক মারুফ হাসান সুমন বলেন, নিহত রাশেদুল যুবলীগের কর্মী ছিল। সে ইতিপুর্বে আওয়ামী লীগের সময়ে আমার বাড়ীতে হামলা করে। তার মৃত্যুকে কেন্দ্র করে আমার বাড়ীতে আগুন দিয়ে সমস্ত মালামাল পুড়িয়ে দিয়েছে। আমি এ ঘটনার বিচার দাবী করছি।
সুমনের মা গৃহবধু সালমা সুলতানা বলেন, আমি হজে¦ যাবো, আমার বাড়ীতে আগুন দিয়ে আমার সব কিছু পুড়িয়ে দিয়েছে। আমার পড়ার কাপড় পর্যন্ত নেই। আমি হামলাকারীদের বিচার দাবী করছি।
পাট্রা ইউনিয়ন বিএনপির সাবেক সভাপতি জহিরুল ইসলাম মুরাদ বিশ^াস বলেন, রাশেদুল আমাদের একজন যুবদল কর্মী। তাকে স্থানীয় ও বহিরাগত লোকজন পিটিয়ে ও কুপিয়ে হত্যা করেছে। আমরা এর সঠিক বিচার দাবী করছি।
পাংশা উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক ও পাট্রা ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান শাহ্ মোঃ রফিকুল ইসলাম বলেন, রাশেদুল সাবেক রেলপথ মন্ত্রী জিল্লুল হাকিমের ছেলে মিতুল হাকিমের ক্যাডার ছিল। সে কোন যুবদল কর্মী নয়। এ ঘটনায় বিএনপি নেতা মারুফ হাসান সুমনের বাড়ী পুড়িয়ে দিয়েছে। তবে হত্যার সঠিক তদন্তপুর্বক ব্যবস্থা গ্রহণের দাবী জানাই।
সহকারী পুলিশ সুপার (পাংশা সার্কেল) দেবব্রত সরকার বলেন, এ ঘটনায় খালিদ নামে একজনকে আটক করা হয়েছে। নিহতের পরিবারের সদস্যদের মামলা দায়েরের পরিপ্রেক্ষিতে এ ব্যাপারে পরবর্তী আইনি পদক্ষেপ নেয়া হবে। তবে সে যুবদল কর্মীরা এখনো নিশ্চিত নয়। পুলিশ ঘটনাস্থলে রয়েছে। পরিস্থিতি স্বাভাবিক রয়েছে।