নিজস্ব প্রতিবেদক:
২০১৩ সালের ৫ ও ৬ মে রাজধানীর মতিঝিলের শাপলা চত্বরে হেফাজতে ইসলামের অবস্থান কর্মসূচি চলাকালে সংঘটিত সহিংসতার ঘটনা নিয়ে তদন্তে অগ্রগতি হয়েছে। আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল এই ঘটনাকে মানবতাবিরোধী অপরাধ হিসেবে চিহ্নিত করে মামলার কার্যক্রম এগিয়ে নিচ্ছে।
হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশের পক্ষ থেকে দায়ের করা মামলায় সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মহীউদ্দীন খান আলমগীর, পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শক (আইজিপি) হাসান মাহমুদ খন্দকার, সাবেক আইজিপি বেনজীর আহমেদ ও গণজাগরণ মঞ্চের সাবেক মুখপাত্র ইমরান এইচ সরকারসহ মোট ৯ জনকে অভিযুক্ত করা হয়েছে। এদের মধ্যে ৪ জন বর্তমানে অন্য মামলায় গ্রেপ্তার থাকলেও শেখ হাসিনাসহ বাকি ৫ জনের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করা হয়েছে।
চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম জানিয়েছেন, “শাপলা চত্বরের ঘটনাটি বাংলাদেশের ইতিহাসে মানবাধিকার লঙ্ঘনের অন্যতম নজির। বিষয়টি অনেক পর্যালোচনার পর ট্রাইব্যুনাল মানবতাবিরোধী অপরাধ হিসেবে চিহ্নিত করেছে এবং তদন্তের নির্দেশ দিয়েছে।”
তদন্তকারী কর্মকর্তা (এএসপি) এফএম ইফতেখারুল আলম বলেন, “ঘটনাটি বড় পরিসরের হওয়ায় তদন্তে সময় লাগছে। নিহতদের শনাক্ত ও তথ্য সংগ্রহের কাজ চলছে। মানবাধিকার সংগঠন অধিকার-এর প্রকাশিত তালিকাকেও গুরুত্বের সঙ্গে দেখা হচ্ছে।”
২০১৩ সালের ঘটনাটি হেফাজতে ইসলামসহ বিভিন্ন মহলের আলোচনায় রয়েছে। সংগঠনটির যুগ্ম মহাসচিব মাওলানা আজিজুল হক ইসলামাবাদী বলেন, “সেই ঘটনায় আমাদের বহু কর্মী নিহত হন। আমরা তদন্ত সাপেক্ষে দায়ীদের বিচারের আওতায় আনার দাবি জানিয়েছি।”
উল্লেখ্য, ২০১৩ সালের ৫ মে হেফাজতে ইসলামের ডাকা সমাবেশে দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে আসা হাজার হাজার মানুষ মতিঝিলে জমায়েত হন। সংগঠনটি ব্লাসফেমি আইনসহ ১৩ দফা দাবিতে আন্দোলন করছিল। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সঙ্গে সংঘর্ষ ও সহিংসতার ঘটনায় প্রাণহানির অভিযোগ উঠে, যার সুনির্দিষ্ট সংখ্যা আজও বিতর্কিত।
এদিকে, এই ঘটনার দায়ে শেখ হাসিনা ও আরও ৩৩ জনের বিরুদ্ধে ২০২৪ সালের ১৮ আগস্ট ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে আরেকটি মামলা করেন বাংলাদেশ পিপলস পার্টির (বিপিপি) চেয়ারম্যান বাবুল সরদার চাখারী। মামলাটি বর্তমানে তদন্তাধীন রয়েছে।
এই মামলায় শেখ হাসিনা ছাড়াও সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল, প্রধানমন্ত্রীর সাবেক উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান, প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের সামরিক উপদেষ্টা তারেক সিদ্দিকী, ঢাকা দক্ষিণের মেয়র শেখ ফজলে নূর তাপস, সাবেক সংসদ সদস্য রাশেদ খান মেনন ও হাসানুল হক ইনুসহ আওয়ামী লীগের বেশ কয়েকজন গুরুত্বপূর্ণ নেতার নাম উল্লেখ করা হয়েছে।
ট্রাইব্যুনালে পরবর্তী শুনানির তারিখ নির্ধারণ করা হয়েছে ১২ মে। তদন্ত ও বিচার কার্যক্রম এগিয়ে চলেছে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে।