নিজস্ব প্রতিনিধি:
চোখের জলে ভেজা সেই দিনটি আজও ভুলতে পারেননি স্কোয়াড্রন লিডার মুহাম্মদ আসিম জাওয়াদের মা নাসরিন জাওয়াদ। ঠিক এক বছর আগে, ২০২৪ সালের ৯ মে চট্টগ্রামের পতেঙ্গায় ইয়াক-১৩০ প্রশিক্ষণ যুদ্ধবিমান বিধ্বস্তের ঘটনায় দেশমাতৃকার জন্য আত্মত্যাগ করেছিলেন আসিম। তার অকাল প্রয়াণে শুধু পরিবার নয়, গোটা জাতি হারিয়েছে এক সাহসী বৈমানিককে।
মানিকগঞ্জের সাটুরিয়ার ছোট্ট গ্রাম গোপালপুর। আসিমের পৈতৃক বাড়িটি এখনো ভরে আছে তার স্মৃতিতে। ঘরের এক কোণে সাজানো আছে তার অর্জনের ট্রফি, সার্টিফিকেট আর কিছু ইউনিফর্ম। মায়ের ভাষায়, “আমার আসিম এখনো ফিরে আসেনি। প্রতিদিন ঘুম থেকে উঠে মনে হয়, ও হয়তো ডিউটি শেষ করে বাড়ি ফিরবে। এক বছর হয়ে গেল, কান্না থামাতে পারিনি।”
নাসরিন জাওয়াদ বলেন, “আসিম ছোটবেলা থেকেই খুব মেধাবী ছিল। সবসময় বলতো, মা, আমি দেশের জন্য কিছু করতে চাই। সে তার কথা রেখেছে, কিন্তু আমাকে একা করে দিয়ে গেছে।”
আসিমের সহপাঠী ও বাংলাদেশ বিমান বাহিনীর সহকর্মীরা বলছেন, আসিম ছিলেন একজন নিষ্ঠাবান, দায়িত্বশীল এবং সাহসী পাইলট। তার সঙ্গে উড়োজাহাজে প্রশিক্ষণের দিনগুলো এখনো মনে পড়ে। বিমান বিধ্বস্ত হওয়ার আগমুহূর্তেও আসিম বিমানের নিয়ন্ত্রণ নিয়ে জনবহুল এলাকা থেকে সরিয়ে নদীতে ক্র্যাশ করানোর সিদ্ধান্ত নেন। তার এই আত্মত্যাগ অসংখ্য মানুষের জীবন বাঁচিয়েছে।
মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে আজ সকালে প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় এবং বাংলাদেশ বিমান বাহিনীর পক্ষ থেকে তার কবরে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানানো হয়। তার স্মৃতির প্রতি সম্মান জানাতে এক মিনিট নীরবতাও পালন করা হয়।
আসিমের বাবা মোহাম্মদ জাওয়াদ বলেন, “আমি চাই, আসিমের স্মৃতিকে সম্মান জানিয়ে সরকার যেন বিমান বাহিনীর পাইলটদের নিরাপত্তা আরও জোরদার করে। আমার ছেলে চলে গেছে, কিন্তু অন্য কোনো মা যেন তার সন্তানকে না হারায়।”
এক বছর পার হলেও আসিম জাওয়াদের সেই শূন্যতা আজও পূরণ হয়নি। মায়ের চোখের জল থামেনি, বাবার বুকের ব্যথা কমেনি, আর দেশের মানুষের হৃদয়ে সেই সাহসী বৈমানিক চিরকাল অমর হয়ে থাকবে।