১০ই মে, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ | ২৭শে বৈশাখ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ | ১২ই জিলকদ, ১৪৪৬ হিজরি

যার গর্ভে জন্ম, যার পায়ে জান্নাত—তাঁকে একদিনে সীমাবদ্ধ করো না

লেখক জাহেদুল ইসলাম আল রাইয়ান

সময়ের গর্ভে হারিয়ে যেতে যেতে একদিন ফিরে আসে, যেদিন মানুষ ফুল দিয়ে স্মরণ করে তাকে, কার্ডে আঁকে ভালোবাসা, সোশ্যাল মিডিয়ার দেয়ালে দেয়ালে লিখে তার নাম—‘মা’। অথচ যাঁর নিঃশব্দ কণ্ঠে গড়া হয় ভাষা, যাঁর শুষ্ক হাতের উষ্ণতায় গড়ে ওঠে সভ্যতা, তাঁকে কি স্মরণযোগ্যতার ছায়া মাত্র একটি দিনের জন্য যথেষ্ট?

ইসলাম সেই শূন্য মরুর বুকে দাঁড়িয়ে যখন নারীর মর্যাদার পাথরে খোদাই করে ‘সম্মান’ শব্দটি, তখন সভ্যতা তাকে জ্যান্ত কবর দিতে ব্যস্ত। সেই মুহূর্তে এক উচ্চারণ ভেসে আসে—“তোমার জান্নাত রয়েছে তোমার মায়ের পায়ের নিচে।” পৃথিবীর আর কোনো আইন, কোনো আন্দোলন, কোনো কল্পনা এই বিপ্লব ঘটাতে পারেনি, যা ঘটায় ইসলাম, এক নিঃস্ব নারীকে সিংহাসনের চূড়ায় বসিয়ে।

মা—একটি শব্দ নয়, এটি এক মহাশক্তি, এক নিবেদন, এক বিসর্জন, যার শেষ নেই, বিশ্রাম নেই, প্রতিদান নেই। সন্তানের প্রতিটি নিঃশ্বাসে যার ছায়া, প্রতিটি চোখের জলে যার প্রতিফলন। ইসলাম সেই মায়ের জন্য ঘোষণা করে, “তিনবার তার মর্যাদা পিতার চেয়ে ঊর্ধ্বে।” এমন সাহসী ঘোষণা ইতিহাসে দ্বিতীয় নেই।

আজকের এই তথাকথিত ‘মা দিবস’ আমাদের মনে করিয়ে দেয় কেবল সেই শূন্যতাকে, যা আমরা বছরের বাকি দিনে ভুলে থাকি। ইসলাম আমাদের মনে করিয়ে দেয় প্রতিটি দিনই মায়ের, প্রতিটি রাতই তাঁর জাগরণে ঋণী, প্রতিটি জান্নাতের স্বপ্নই তাঁর পায়ের নিচে বিছানো।

যে মা চোখের জলে সন্তানকে মানুষ করেন, পিঠের ঘামে তার ভবিষ্যৎ আঁকেন, নিঃশব্দ আর্তনাদে তার জন্য আল্লাহর দরবারে কাঁদেন—তাঁর সম্মান কোনও ফুলে, কার্ডে বা পোস্টে আবদ্ধ হতে পারে না।

তিনি পবিত্রতা, তিনি মর্যাদা, তিনি পথ—তাঁকে ভালোবাসা মানে নিজের ঈমানকে ভালোবাসা। আর তাঁকে একদিনে বাঁধার নামই অবমাননা।

লেখক, শিক্ষার্থী আল-আজহার বিশ্ববিদ্যালয়, কায়রো,মিশর

guest
0 Comments
Oldest
Newest Most Voted
Inline Feedbacks
View all comments

এই বিভাগের আরও খবর

পাকিস্তান-ভারত, বিচারহীন ঘৃণার রাজনীতি নয়, চাই সুস্থ দৃষ্টিভঙ্গি

মোঃ নুর আলম পাপ্পু, সাংবাদিক বর্তমান সময়ের রাজনৈতিক ও সামাজিক বাস্তবতায় আমরা প্রায়শই এমন কিছু বিতর্কে জড়িয়ে পড়ি, যেগুলোর মূলত গভীরতা নেই, কিন্তু আবেগ-উত্তেজনায় ভরপুর।

আল্লাহর ভালোবাসা—হৃদয়ের আকাশ জুড়ে অনন্ত শান্তির প্রভা

লেখক জাহেদুল ইসলাম আল রাইয়ান যখন পৃথিবীর সমস্ত শব্দ স্তব্ধ হয়ে আসে, যখন সব আশা ধূসর ধুলোয় মিশে যায়—তখনো এক অনন্ত আশ্রয়, এক চিরন্তন ভালোবাসা

৫ মে: শাপলা চত্বরের সেই রক্তাক্ত রাতের স্মৃতি

আজ ঐতিহাসিক ৫ মে। ক্যালেন্ডারে অনেক বছর পেরিয়ে গেলেও বদলায়নি সেই ‘ভয়াল রাতের স্মৃতি’। ২০১৩ সালের এই দিন, ঢাকার মতিঝিল শাপলা চত্বরে ইতিহাসের ‘নির্মমতম গণহত্যা’

আবেগের কফিনে গাঁথা এক জীবনের কবরগাথা

লেখক জাহেদুল ইসলাম আল রাইয়ান সে ছিল স্বপ্নবতী এক তরুণী—চেহারায় মাধুর্য, মননে দীপ্তি। চোখে ছিল স্বপ্ন, হৃদয়ে ছিল নির্মল আকাঙ্ক্ষা। আন্ডারগ্র্যাজুয়েট পড়ার সময় একদিন স্বাভাবিকভাবেই

Scroll to Top