আসগর সালেহী, চট্টগ্রাম প্রতিনিধি:
বিদ্যা হলো মানুষের জন্য এমন এক ধন, যা চুরি হয় না, ব্যয় করলে কমে না, বরং বাড়ে।’ আর এই বিদ্যা অর্জনের শ্রেষ্ঠতম স্থান হলো বিশ্ববিদ্যালয়। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণপ্রবাহ বয়ে চলে তার অপরূপ প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের ভেতর দিয়ে। বছরের বিভিন্ন সময়ে নানা রঙে সেজে ওঠে এই সবুজ ক্যাম্পাস। তার ভেতর জারুলতলা যেন প্রাণের আলাদা স্পন্দন। ৬০ বছরের ক্যাম্পাস জীবনে এমন শিক্ষার্থী খুঁজে পাওয়া দুষ্কর, যার স্মৃতিতে দোলা দেয়নি জারুল ফুলে ভরা এই প্রাঙ্গণ।
দীর্ঘ ৯ বছর পর সমাবর্তনের আনন্দে চবি ক্যাম্পাস এখন সাজানো হয়েছে নববধূরূপে। ক্যাম্পাস জুড়ে লাল-নীল নিয়ন আলো, আলোকিত একাডেমিক ভবন, শাটল ট্রেনের স্মৃতিময় যাত্রা আর পাহাড়ের গায়ে গ্রাফিতি হয়ে ফুটে উঠছে স্মৃতির প্রতিচ্ছবি।
আগামীকাল (১৪ মে) অনুষ্ঠেয় পঞ্চম সমাবর্তন ঘিরে ইতোমধ্যে রেজিস্ট্রেশন করেছেন ২২ হাজার ৭০০ গ্র্যাজুয়েট। বিশ্ববিদ্যালয় সূত্র জানায়, এতে অংশ নিচ্ছেন কলা ও মানববিদ্যা অনুষদের ৪,৯৮৭, বিজ্ঞান অনুষদের ২,৭৬৭, ব্যবসায় প্রশাসন অনুষদের ৪,৫৯৬, সমাজবিজ্ঞান অনুষদের ৪,১৫৮, জীববিজ্ঞান অনুষদের ১,৬৮৯, আইন অনুষদের ৭০৩, প্রকৌশল অনুষদের ৭৯৮, মেরিন সায়েন্সের ২৮৪, শিক্ষা অনুষদের ৩১৬ এবং চিকিৎসা অনুষদের ২,২৯৯ জন গ্র্যাজুয়েট।
মূল অনুষ্ঠান বসছে কেন্দ্রীয় খেলার মাঠে, যেখানে বসার ব্যবস্থা থাকছে ২৫ হাজার মানুষের। শুধু তাই নয়, ক্যাম্পাসের বিভিন্ন প্রান্তে থাকবে বড় এলইডি স্ক্রিন, যাতে হাজারো দর্শনার্থী অনুষ্ঠান উপভোগ করতে পারেন।
বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের ধারণা, এদিন ক্যাম্পাসে উপস্থিত হবেন প্রায় ১ লাখ মানুষ। অতীতের সব রেকর্ড ভেঙে এটি হতে যাচ্ছে বিশ্বের অন্যতম বৃহৎ সমাবর্তন। আগে এই রেকর্ড ছিল নেপালের দখলে, যেখানে ২২ হাজার গ্র্যাজুয়েট নিয়ে হয়েছিল সমাবর্তন।
নিরাপত্তায় থাকবে প্রায় ৩ হাজার পুলিশ, সেনাবাহিনীসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। সুষ্ঠু যাতায়াতে সমাবর্তন উপলক্ষে শাটল ট্রেন, শহরমুখী শাটল বাস এবং ক্যাম্পাসের ভেতরে চক্রাকার বাস সার্ভিস চালুর ঘোষণা দিয়েছে কর্তৃপক্ষ।
বিশেষ আকর্ষণ হিসেবে সমাবর্তন বক্তা থাকছেন নোবেল বিজয়ী অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস। উপ-উপাচার্য (প্রশাসন) অধ্যাপক ড. মো. কামাল উদ্দিন জানান, সমাবর্তন উপলক্ষে ব্যাপক প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে।
ক্যাম্পাসের শহিদ মিনার, জারুলতলা, মেরিন সায়েন্স অনুষদ চত্বরসহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ জায়গায় বড় স্ক্রিনে সরাসরি অনুষ্ঠান দেখানোর ব্যবস্থা করা হচ্ছে। নিরাপত্তা পরিকল্পনা বাস্তবায়নে কাজ করছে পুলিশ সুপার সাইফুল ইসলাম সান্তের নেতৃত্বে চট্টগ্রাম জেলা পুলিশ।
সমাবর্তন শুধু সনদ বিতরণের অনুষ্ঠান নয়, বরং স্মৃতি, আনন্দ আর ক্যাম্পাসের সঙ্গে মেলবন্ধনের এক মহা উৎসব। আর সেই উৎসবেই এবার ইতিহাস গড়তে যাচ্ছে চবি।