নিজস্ব প্রতিবেদক:
পাকিস্তানের সঙ্গে সাম্প্রতিক যুদ্ধে ‘অপারেশন সিঁদুর’-এর অন্যতম মুখ কর্নেল সোফিয়া কুরেশিকে নিয়ে বিতর্কিত মন্তব্য করে ব্যাপক সমালোচনার মুখে পড়েছেন ভারতের মধ্যপ্রদেশের মন্ত্রী ও বিজেপি নেতা বিজয় শাহ। মুসলিম হওয়ায় তাকে ‘জঙ্গিদের বোন’ বলে মন্তব্য করে তিনি ধর্মীয় বিদ্বেষ ছড়ানোর অভিযোগে তোপের মুখে পড়েছেন কংগ্রেস ও তৃণমূল কংগ্রেসের নেতারা।
সোমবার ইন্দোরে এক জনসভায় ভাষণ দিতে গিয়ে বিজয় শাহ বলেন, “সিঁদুর মুছে আমাদের বোন-মেয়েদের অসম্মান করেছে জঙ্গিরা। আমরা পালটা জবাব দেওয়ার জন্য তাদের বোনকেই পাঠিয়েছি।” তিনি আরও বলেন, “পেহেলগামে জঙ্গিরা ধর্ম জানতে জামাকাপড় খুলিয়ে পরীক্ষা করেছে। তারপর গুলি করে মেরেছে। মোদি নিজে তো সেকাজ করতে পারবেন না। তাই জঙ্গিদের সম্প্রদায়েরই বোনকে পাঠিয়েছেন শাস্তি দেওয়ার জন্য।”
বিজয় শাহ যদিও তার বক্তব্যে কোথাও সরাসরি কর্নেল সোফিয়ার নাম উল্লেখ করেননি, তবে কংগ্রেস ও তৃণমূলের মতে, তার ইঙ্গিত স্পষ্টভাবে সোফিয়ার দিকেই ছিল।
এই মন্তব্যের জেরে তৃণমূল কংগ্রেস এক বিবৃতিতে বলেছে, “এটাই বিজেপির আসল রূপ। ভারতীয় সেনাবাহিনীর একজন সাহসী কর্মকর্তা, যিনি দেশের জন্য জীবন উৎসর্গ করতে প্রস্তুত, তাকেও ধর্মীয় পরিচয়ে বিচার করা হচ্ছে। বিজেপির যদি লজ্জা থাকে, তাহলে কর্নেল সোফিয়া এবং সশস্ত্র বাহিনীর কাছে ক্ষমা চাইতে হবে।”
কংগ্রেসও তীব্র প্রতিক্রিয়ায় বলেছে, “সোফিয়া কুরেশি শুধু ভারতের কন্যা নন, তিনি আজ দেশের গর্ব। তাকে নিয়ে বিজেপি নেতার এমন মন্তব্য শুধু অশোভন নয়, এটি সেনাবাহিনীর অপমান। প্রধানমন্ত্রী মোদির ঘনিষ্ঠ বলে যিনি নিজেকে দাবি করেন, তার বিরুদ্ধে কি ব্যবস্থা নেবে বিজেপি?”
তবে ব্যাপক সমালোচনার মুখে বিজয় শাহ দাবি করেছেন, তার বক্তব্য বিকৃত করা হয়েছে।
প্রসঙ্গত, কাশ্মীরের পেহেলগামে কথিত সন্ত্রাসী হামলার প্রতিক্রিয়ায় ভারত ‘অপারেশন সিঁদুর’ পরিচালনা করে পাকিস্তানের অভ্যন্তরে। অভিযানে পাকিস্তানের অন্তত ৩৫ নাগরিক নিহত হয়। পাল্টা জবাবে পাকিস্তান ‘বুনিয়ানুম মারসুস’ নামে ভারতীয় ভূখণ্ডে অভিযান চালায়। উভয়পক্ষের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির পর গত ১০ মে যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যস্থতায় দুই দেশ যুদ্ধবিরতিতে যায়।
যুদ্ধ থেমে গেলেও এই ধরনের রাজনৈতিক বিতর্কে বিভাজন আরও প্রকট হয়ে উঠছে—বিশেষ করে ধর্মীয় পরিচয় নিয়ে সেনাবাহিনীর সদস্যদের নিয়েও যখন প্রশ্ন তোলা হচ্ছে।