নিজস্ব প্রতিবেদক:
ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানের মুখে শেখ হাসিনা ভারতে আশ্রয় নিয়েছেন বলে জানা গেছে। রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, তিনি সেখান থেকে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে বিপদে ফেলতে নানা ষড়যন্ত্র করছেন এবং দলীয় নেতাকর্মীদের মাধ্যমে দেশে অস্থিরতা সৃষ্টির চেষ্টা অব্যাহত রেখেছেন।
সম্প্রতি সরকার আওয়ামী লীগ ও তার সহযোগী সংগঠনগুলোর সব ধরনের কার্যক্রম নিষিদ্ধ ঘোষণা করেছে। বিশ্লেষকদের ভাষায়, রাজনীতির মাঠে চূড়ান্তভাবে কোণঠাসা হয়ে পড়া দলটি এখন নানাভাবে আন্দোলনের মধ্যে নিজেদের কর্মী-সমর্থকদের যুক্ত করে রাজনৈতিক পরিস্থিতি উত্তপ্ত করার কৌশল নিচ্ছে।
তারা মনে করছেন, শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের মতো স্পর্শকাতর ইস্যুগুলোকে ব্যবহার করে সরকারবিরোধী বড় ধরনের বিক্ষোভ সৃষ্টির চেষ্টা হচ্ছে। গত আট মাসে অন্তর্বর্তী সরকারের সময়ে ছাত্র, শিক্ষক, শ্রমিক, পেশাজীবীসহ বিভিন্ন গোষ্ঠীর আন্দোলনে এমন প্রবণতা লক্ষ্য করা গেছে। এ ধরনের পরিস্থিতিতে সরকারসহ দেশের সব গণতান্ত্রিক শক্তিকে সচেতন থাকার আহ্বান জানান বিশ্লেষকরা।
গণতন্ত্র মঞ্চের অন্যতম নেতা ও বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক বৃহস্পতিবার যুগান্তরকে বলেন, “আওয়ামী লীগ ও তাদের সংগঠনগুলো নিষিদ্ধ হওয়ায় তারা এখন ছদ্মবেশে দেশে-বিদেশে অন্তর্ঘাতমূলক কর্মকাণ্ড চালাচ্ছে। শেখ হাসিনা ভারতে অবস্থান করেও দেশকে অস্থিতিশীল করার অপচেষ্টা করে যাচ্ছেন।”
তিনি আরও বলেন, “এই সরকার ব্যর্থ হলে গণ-অভ্যুত্থান ব্যর্থ হবে। তাই সরকারকে এখনই প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে হবে, যেন কেউ আন্দোলনের আড়ালে সহিংসতা ও নাশকতা চালাতে না পারে। একই সঙ্গে শান্তিপূর্ণ ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের জন্য প্রয়োজনীয় সংস্কার দ্রুত সম্পন্ন করা জরুরি।”
রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের ভাষায়, ঢাকার রাজপথে কয়েকদিন ধরে উত্তেজনা বাড়ছে। এর পেছনে নিষিদ্ধ রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মীদের সরাসরি ও পরোক্ষ ভূমিকা রয়েছে বলে মনে করছেন তারা। তারা বলছেন, দলীয় কর্মসূচি বন্ধ হলেও ফেসবুক, হোয়াটসঅ্যাপসহ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে আন্দোলন উসকে দেওয়ার চেষ্টা চালানো হচ্ছে।
সূত্র অনুযায়ী, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-শিক্ষকদের চলমান আন্দোলনে প্রথম দিন পুলিশের লাঠিচার্জ পরিস্থিতিকে আরও জটিল করে তোলে। এ সময় তথ্য ও সম্প্রচার উপদেষ্টা মাহফুজ আলমের ওপর পানির বোতল নিক্ষেপ করা হয়, যা আন্দোলনের পেছনে তৃতীয় পক্ষের সংশ্লিষ্টতার আশঙ্কা জোরদার করে।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর ফ্যাসিবাদী রাজনৈতিক শক্তিকে প্রতিহত করতে দৃঢ় অবস্থান নেয়। কিন্তু এই অবস্থানকে বাধাগ্রস্ত করতেই একাধিক দাবি-দাওয়ার আন্দোলন সৃষ্টি করা হয়েছে বলে অভিযোগ রয়েছে।
তারা মনে করেন, আনসার ও ভিডিপি সদস্যদের আন্দোলন, প্যাডেলচালিত রিকশাচালক, সিএনজিচালক, শিক্ষক ও ডাক্তারদের বিভিন্ন কর্মসূচির পেছনেও একই ধরনের চক্রান্ত থাকতে পারে।
সম্প্রতি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রদল নেতা শাহরিয়ার আলম সাম্যর হত্যাকাণ্ড, গাজীপুরে এনসিপি নেতার ওপর হামলা, গাইবান্ধায় ছাত্রনেতাদের ছুরিকাঘাতসহ বেশ কিছু ঘটনার সঙ্গে নিষিদ্ধ সংগঠনের সম্পৃক্ততার অভিযোগ উঠেছে।
গণফোরামের প্রেসিডিয়াম সদস্য অ্যাডভোকেট সুব্রত চৌধুরী বলেন, “যতদিন নির্বাচন নিয়ে অনিশ্চয়তা থাকবে, ততদিন নিষিদ্ধ সংগঠনটি নানা ইস্যুতে রাজপথ উত্তপ্ত করতে চাইবে। এই পরিস্থিতিতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকেও সতর্কভাবে কাজ করতে হবে।”
তিনি আরও বলেন, “আওয়ামী লীগ সরকারে না থেকেও পরিস্থিতিকে ঘোলাটে করে তুলতে চাইছে। জনগণের ক্ষোভকে ব্যবহার করে তারা আবারও রাজনৈতিকভাবে মাঠে ফিরে আসার চেষ্টা করছে।”
বিশ্লেষকরা বলছেন, রাজপথের আন্দোলনগুলো বিশ্লেষণ করে দেখা যায়—অতীতের অনেক আন্দোলনে ছাত্রলীগ, যুবলীগ ও আওয়ামী লীগের অনুসারীদের সম্পৃক্ততা ছিল। তাই ভবিষ্যতে যেকোনো কর্মসূচির ক্ষেত্রে সরকারকে আরও বেশি সতর্ক ও কৌশলী হতে হবে।