নিজস্ব প্রতিবেদক:
নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ ও মাইক্রোক্রেডিটের পথিকৃৎ মুহাম্মদ ইউনূস বলেছেন, গত ১৬ বছর ধরে বাংলাদেশ এক ধরনের রাজনৈতিক ভূমিকম্পের মধ্য দিয়ে গেছে। তার মতে, শেখ হাসিনা ও আওয়ামী লীগ সরকারের দীর্ঘ শাসনকাল ছিল স্বৈরতান্ত্রিক, যা ২০২৪ সালের আগস্টে গণআন্দোলনের মাধ্যমে অবসান হয়।
বর্তমানে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান হিসেবে দায়িত্ব পালন করা ইউনূস জানান, দেশ আবার সঠিক পথে ফিরে আসছে এবং জনগণ এই পরিবর্তনের সঙ্গে আছে।
আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর দুর্নীতির নানা তথ্য প্রকাশ্যে এসেছে। প্রতিবেদন অনুযায়ী, প্রতিবছর প্রায় ১৬ বিলিয়ন ডলার দেশ থেকে পাচার হয়েছে। শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে খুন, অপহরণ ও গণহত্যার অভিযোগে মামলা চলছে, যদিও তিনি এসব অভিযোগ অস্বীকার করেছেন।
সরকার পরিবর্তনের পর ইউনূস বিচারব্যবস্থা, নির্বাচন ও সংবিধান সংস্কারের জন্য একাধিক কমিশন গঠন করেছেন। এসব কমিশনে দেশের গবেষক, শিক্ষক ও বিশেষজ্ঞরা কাজ করছেন।
এই সব সুপারিশের ওপর ভিত্তি করে জাতীয় ঐকমত্য কমিশন ১৬৬টি প্রস্তাব নিয়েছে এবং দেশের ৩৫টি রাজনৈতিক দলের মতামত নিয়েছে। এই কমিশন ‘জুলাই সনদ’ নামে একটি নীতিমালা তৈরি করছে, যা নতুন নির্বাচনের পথ তৈরি করবে বলে আশা করা হচ্ছে।
তবে কিছু বিষয়ে বিতর্ক রয়েছে। কেউ বলছেন, তৈরি পোশাক শিল্পের জন্য আলাদা কমিশন দরকার ছিল, কেউ আবার শিক্ষাখাত অবহেলিত বলেও মত দিয়েছেন। সবচেয়ে বেশি বিতর্ক উঠেছে নারীদের উত্তরাধিকার সংক্রান্ত প্রস্তাব নিয়ে, যা নিয়ে রাস্তায় বিক্ষোভ হয়েছে।
তারপরও অনেকেই আশাবাদী। ঐকমত্য কমিশনের সহসভাপতি আলী রিয়াজ জানিয়েছেন, বিচারপতি নিয়োগে ইতিমধ্যেই স্বাধীনতা এসেছে। তার আশা, আগস্টের মধ্যেই চূড়ান্ত নীতিমালা প্রস্তুত হবে।
পরিকল্পনা অনুযায়ী, ডিসেম্বরেই নির্বাচন হতে পারে। ইউনূস জানিয়েছেন, ২০২৬ সালের জুনের মধ্যেই জাতীয় নির্বাচন সম্পন্ন হবে, তবে তিনি নিজে প্রার্থী হবেন না।
দ্রব্যমূল্য ও ব্যাংক খাত কিছুটা নিয়ন্ত্রণে এলেও অর্থনীতির গতি এখনো ধীর। জরিপে দেখা গেছে, ৬০ শতাংশ মানুষ মনে করেন আইনশৃঙ্খলায় তেমন উন্নতি হয়নি এবং বিক্ষোভ এখনো নিয়মিত হচ্ছে।
বিক্ষোভকারীদের অন্যতম প্রধান দাবি হলো, আওয়ামী লীগের বিচার। নির্বাচন কমিশন ইতিমধ্যে দলটির নিবন্ধন বাতিল করেছে। যদিও তাদের কিছু সমর্থন এখনও রয়েছে। দলের শীর্ষ নেতা মোহাম্মদ আরাফাত দাবি করেছেন, তারা জনগণের ভোটে নির্বাচিত হয়েছিলেন এবং ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে ক্ষমতা থেকে সরানো হয়েছে।
ক্ষমতার বাইরে থাকলেও, আওয়ামী লীগ এখনো দেশের রাজনীতিতে সক্রিয় প্রভাব রাখছে।