আসগর সালেহী, চট্টগ্রাম প্রতিনিধি:
কক্সবাজার সফরকালে বাংলাদেশ ব্যাংকের এক নারী কর্মকর্তার সঙ্গে অনৈতিক সম্পর্কের অভিযোগ এবং কূটনৈতিক শিষ্টাচার লঙ্ঘনের অভিযোগে তড়িঘড়ি করে বাংলাদেশ ছাড়তে বাধ্য হলেন ঢাকায় নিযুক্ত পাকিস্তানের হাইকমিশনার সৈয়দ আহমেদ মারুফ।
জানা গেছে, গেল ৯ মে ইউএস-বাংলা এয়ারলাইন্সের বিএস-১৫৯ ফ্লাইটে কক্সবাজারে যান পাকিস্তান হাইকমিশনার। সফরে তার সঙ্গে ছিলেন ঘনিষ্ঠ ব্যবসায়ী বন্ধু আজহার মাহমুদ ও বাংলাদেশ ব্যাংকের ২৩তম ব্যাচের সহকারী পরিচালক হাফিজা হক শাহ।
বিশ্বস্ত সূত্র জানায়, কক্সবাজারের উখিয়ার পাঁচতারকা হোটেল সি-পার্ল-এ অবস্থানকালে হাইকমিশনারের সঙ্গে ওই নারী কর্মকর্তার ঘনিষ্ঠতা নিয়ে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর নজরে আসে ঘটনা। এরপর বিষয়টি দ্রুত পাকিস্তান পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে জানানো হলে তড়িঘড়ি হাইকমিশনারকে দেশে ফেরার নির্দেশ দেয়া হয়।
সূত্র আরও জানায়, হাইকমিশনারের সফরসঙ্গী সেই নারী ঢাকার ঝিগাতলায় একটি ভাড়াবাড়িতে বসবাস করেন। তার ফেসবুক অ্যাকাউন্টে হাইকমিশনারের সঙ্গে একাধিক ছবি থাকলেও ঘটনাটি জানাজানি হওয়ার পরপরই সেগুলো সরিয়ে ফেলেছেন।
এ বিষয়ে হাফিজা হক শাহ জানান, “পাকিস্তানের রাষ্ট্রদূত আমার পূর্ব পরিচিত। বিভিন্ন অনুষ্ঠানে দেখা হয়েছে। কক্সবাজারেও হোটেলের লবিতে কফি খাওয়া ছাড়া অন্য কোনো কিছু হয়নি।”
কিন্তু, বিভিন্ন গণমাধ্যমের হাতে আসা টিকিট এবং সফর-সূচির তথ্য অনুযায়ী, হাইকমিশনার ও তার বন্ধু আজহার মাহমুদ একসঙ্গে টিকিট কাটলেও ওই নারী আলাদাভাবে টিকিট কেটে কক্সবাজারে যান।
এ বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের একাধিক কর্মকর্তা দৈনিক চট্টগ্রাম পোস্টকে জানায়, বৈদেশিক মুদ্রা ও নীতি বিভাগে দায়িত্ব পালনকালে বিভিন্ন দেশের দূতাবাসের সঙ্গে যোগাযোগের সুযোগ থাকলেও, পাকিস্তান হাইকমিশনারের সঙ্গে হাফিজা হক শাহের ব্যক্তিগত যোগাযোগ ও ঘনিষ্ঠতা ব্যতিক্রম বলে মনে করা হচ্ছে।
অপর এক সূত্র জানায়, হাফিজা হক শাহ নিয়মিত পাকিস্তান হাইকমিশনে যাতায়াত করতেন এবং সেখানকার কর্মকর্তারাও তাদের সম্পর্ক বিষয়ে অবহিত ছিলেন।
সামাজিক মাধ্যমে এ ঘটনা প্রকাশের পর ব্যাপক সমালোচনার মুখে পড়েন হাইকমিশনার মারুফ। বিশেষ করে কক্সবাজার সফরে হোটেল সি-পার্ল-এ তাদের ঘোরাঘুরি ও সময় কাটানোর তথ্য স্থানীয় প্রশাসনের কাছে পৌঁছে যাওয়ায় পাকিস্তান হাইকমিশনের কূটনৈতিক অবস্থান বিব্রতকর হয়ে পড়ে।
এর আগে ২০১৫ সালে ঢাকায় নিযুক্ত পাকিস্তান হাইকমিশনের নারী কূটনীতিক ফারিনা আরশাদ-কে জঙ্গি অর্থায়নের অভিযোগে দেশত্যাগে বাধ্য করা হয়েছিল।
বিশ্লেষকরা মনে করছেন, এবারও এই ঘটনা ঢাকা-ইসলামাবাদ সম্পর্কে সাময়িক উত্তেজনা তৈরি করতে পারে। তবে উভয়পক্ষ বিষয়টি পর্দার আড়ালে সমঝোতায় নিষ্পত্তির চেষ্টা করছে।
এ প্রসঙ্গে আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিশ্লেষক এক অধ্যাপক দৈনিক চট্টগ্রাম পোস্টকে বলেন, “একজন রাষ্ট্রদূতের এমন আচরণ অবশ্যই কূটনৈতিক শিষ্টাচার লঙ্ঘন। এর প্রভাব উভয় দেশের সম্পর্কে সাময়িক হলেও পড়তে পারে। তবে পরবর্তী কূটনৈতিক পদক্ষেপের ওপর নির্ভর করবে বিষয়টি।”
এ ঘটনায় বাংলাদেশ সরকার এখনো আনুষ্ঠানিকভাবে কিছু জানায়নি। তবে নির্ভরযোগ্য সূত্র বলছে, সরকারের একাধিক সংস্থা বিষয়টি গভীর পর্যবেক্ষণে রেখেছে।
এদিকে, পাকিস্তান হাইকমিশনের পক্ষ থেকেও কোনো মন্তব্য পাওয়া যায়নি।
পাকিস্তানের হাইকমিশনার সৈয়দ আহমেদ মারুফ ২০২৩ সালের ডিসেম্বরে ঢাকায় দায়িত্বগ্রহণ করেন। এক বছরের মাথায় এমন বিতর্কিত ঘটনায় তার বিদায় কূটনৈতিক মহলে তীব্র আলোচনার জন্ম দিয়েছে।