মোঃ আমিরুল হক, রাজবাড়ী প্রতিনিধি
রাজবাড়ী সদর উপজেলার রাজাপুরে শাহীন শেখ ওরফে রুপল শেখ (২৭) নামে এক ভ্যান চালককে বাড়ী থেকে ধরে নিয়ে পিটিয়ে ও নির্যাতন করে হত্যা করে। রুপল শেখ সদর উপজেলার রাজাপুর গ্রামের জিন্নাহ শেখের ছেলে।
রবিবার (১৮ মে) বিকেলে রাজবাড়ী সদর উপজেলার রাজাপুরে গ্রামবাসীর আয়োজনে হত্যাকারীদের দ্রুত গ্রেপ্তার ও নিরিহদের মুক্তি দাবীতে মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়। মানববন্ধন শেষে বিক্ষোভ মিছিল বের করে। মিছিলকারীরা প্রধান অপরাধী রাফিজুলের বাড়ীতে হামলা করে।
এসময় ওই বাড়ীতে সাদা পোশাকে থাকা মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা রাজবাড়ী সদর থানার এসআই সাব্বির হোসেনের সাথে কথাকাটাকটি হয়। এক পর্যায়ে উত্তেজিতরা তার উপর হামলা করে।
মানববন্ধন চলাকালে বক্তৃতা করেন, রুপলের বাবা জিন্নাহ শেখ, মা রাবেয়া, বোন বীথি, মামলার বাদী কালাম মোল্লা, স্থানীয় চুন্নু মোল্লা, ওহাব আলী শেখ, মনির উদ্দীন, আজিজুল, আলী মিয়া প্রমুখ।
রুপলের বাবা জিন্নাহ শেখ বলেন, মামলায় প্রকৃত আসামীদের বাদ দিয়ে এলাকার ৪ জন নিরিহ ও আমাদের পক্ষের লোককে ধরে হত্যা মামলায় ফাঁসানো হয়েছে। আমরা প্রকৃত অপরাধীদের গ্রেপ্তার দাবী জানাচ্ছি। নিরিহদের মুক্তি দাবী করছি। সকল আসামীদের মামলায় নাম দেওয়া হয়নি। পুলিশ তাদের ইচ্ছা মতো মামলা নিয়েছে। দ্রুত মামলার আসামীদের পরিবর্তনের দাবী জানাই।
রুপলের মা রাবেয়া বেগম বলেন, আমার সামনে ছেলেকে ওরা ধরে নিয়ে নির্যাতন করে মেরেছে। আমি ওদের ফাঁসি চাই। আমার ছেলেকে বাঁচাতে যাদের পাঠালাম, তাদেরকেই মামলায় আসামী করে গ্রেপ্তার করেছে। আমি তাদের মুক্তি ও অপরাধীদের শাস্তির দাবী জানাই।
রুপলের মামা ও মামলার মোঃ কালাম মোল্লা বলেন, আমাকে পুলিশ রাতে ডেকে নিয়ে যায়। সারা রাত থানায় রাখে। আমার কাছে না শুনেই তাদের ইচ্ছামতো আসামীদের নাম দিয়েছে। পরে দেখি আমাদের পক্ষের ৪জনকে ধরে চালান দিয়েছে। আর প্রকৃত আসামী একজনও ধরা পড়েনি।
রুপলের বোন স্মৃতি ও বীথি বলেন, রাজাপুর গ্রামের প্রবাসী রাকিবুলের স্ত্রীর গোসলের ভিডিও ধারণ ও মোটর চুরির অপবাদ দিয়ে গত মঙ্গলবার রাকিবুলের ভাই রাফিজুল ও তার পরিবারের লোকজন রুপলকে মারধর করেন। সেদিন মার খেয়ে রুপল বুধবার সকালে ঢাকা চলে যায়। স্থানীয় মাতবররা শালিসের মাধ্যমে বিষয়টি সমাধানের আশ্বাস দিলে পরিবারের সদস্যরা তাকে ফোন করে বাড়ি আনেন। শুক্রবার সন্ধ্যার দিকে শাম বিশ^াস, মকিম, মোক্তার, রাফিজুল, কচি, রাকিবুল, রাসেল, সৌরভসহ ৭-৮ জন এসে রুপলকে বসত বাড়ীর ঘরের ভেতর থেকে ধরে নিয়ে তাদের বাড়ীতে আটকে রাখে। তারা পিটিয়ে হত্যা করে মরদেহ সদর হাসপাতালে নিয়ে যায়। আমার ভাইয়ের ভিডিও করা ফোন ছিল না। ও বাটন ফোন চালাতো, তাহলে ভিডিও কিভাবে করলো। আমরা ভাইয়ের হত্যাকারীদের বিচার দাবী করছি।
জানাগেছে, গত শুক্রবার (১৭ মে) রাতে গ্রাম্য শালিস হওয়ার কথা ছিল। বিকাল ৫ টার সময় বিকেলে রুপল শেখকে তার বাড়ী থেকে ধরে নিয়ে শামসুদ্দিন ওরফে শাম বিশ্বাসের বাড়ীর ভিতর নিয়ে যায়। তার বাড়ীর আঙ্গিনায় মিথ্যা চুরি ও গৃহবধুর গোসলের ভিডিও ধারণের অপবাদ দিয়ে লোহার রড ও বাঁশের লাঠি দিয়ে রুপল শেখ কে এলোপাথারী ভাবে মারধর করে। মারধরে রুপলের অবস্থা আশঙ্কাজনক হওয়ায় রুপলকে ফেলে রেখে পালিয়ে যায়। তখন স্থানীয় লোকজন রুপলকে রাজবাড়ী সদর হাসপাতালে ভর্তি করে। সেখানকার চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
রাকিবুলের মা রাহেলা পারভীন বলেন, গৃহবধুর ভিডিও ধারণ ও মোটর চুরির কথা স্বীকার করে। তাই তাকে বাড়ী থেকে ধরে এনে মারধর করে। এসময় ৩০-৩৫জন যুবক ছিল। আসলে সবাই মিলে মারধর করে। এ কারণে হয়তো মারা গেছে। কারা ছিল না প্রকাশ করেন না। তবে ঘরে আটকে নয় বাইরে মারধর করে এবং অসুস্থ হলে স্থানীয় পল্লী চিকিৎসক ডেকে এনে তাকে চিকিৎসা করানো হয়। পরে তাকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।
ভুক্তভোগী গৃহবধু বলেন, স্বামী বাড়ীতে না থাকায় আমার জানালায় টোকা দেওয়া, গোসলের ভিডিও ধারণ, মোটর চুরি করাসহ নানা ভাবে উত্যক্ত করছিল। তবে ভিডিও ধারণ করার পর তিনি সে ভিডিও দেখেননি বলেও প্রকাশ করেন।
এ ঘটনায় শনিবার রাজবাড়ী সদর উপজেলার রাজাপুর গ্রামের নসের উদ্দিন মোল্লার ছেলে মোঃ কালাম মোল্লা (৫৪) বাদী হয়ে ১০জনের নাম উল্লেখ করাসহ ৭-৮জনকে অজ্ঞাতনামা আসামী করে মামলা দায়ের করেন।
এ ঘটনায় পুলিশ শনিবার ভোরে রাজবাড়ী থানা পুলিশের অভিযানে সদর উপজেলার রাজাপুর গ্রামের রুকমান বিশ্বাসের ছেলে মোঃ জহিরুদ্দিন বিশ্বাস (৬৫), মৃত ফেলু বিশ্বাসের ছেলে মোঃ মৈজদ্দি বিশ্বাস (৫৫), ফরহাদ বিশ্বাস (৪৫), খালেক মোল্লার ছেলে মোঃ মুন্নু মোল্লা (৫০) কে গ্রেপ্তার করে। তারা কারাগারে রয়েছে।
রাজবাড়ীর অতিরিক্ত পুলিশ সুপার শরীফ আল রাজীব বলেন, আহত এসআইকে উদ্ধার করে রাজবাড়ী হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। এলাকায় অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে।