২০শে মে, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ | ৬ই জ্যৈষ্ঠ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ | ২২শে জিলকদ, ১৪৪৬ হিজরি

চাঁপাইনবাবগঞ্জের আামের ঐতিহ্যকে ফিরিয়ে এনে আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহারে মাধ্যমে অর্থনৈতিক পরিবর্তন সম্ভব

মোহাঃ রকিব উদ্দীন, চাঁপাইনবাবগঞ্জ প্রতিনিধিঃ

আবহাওয়ার বৈশিষ্ট্যের সূত্র ধরে বাংলাদেশের একেক জেলার মাটি একেক ফসলের জন্য বেশী উপযোগীর ধারাবাহিকতায় চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলার উৎপাদিত আম বিশ্ববিখ্যাত। কৃষি অফিসের মতে বাংলাদেশে প্রায় সাড়ে আট শো জাতের আম উৎপাদন হয়, তার মধ্যে চাঁপাইনবাবগঞ্জেই প্রায় সাড়ে তিন শত প্রজাতির আম উৎপাদন হয় । আমের জাত গুলো হলো ফজলি,ন্যাংড়া,খিরসাপাত, গুঠি,বোগলাগুঠি ,আশিনা, লখনা, কাঁচ মিষ্টি, গোপালভোগ বউ পাগল আম,জামাই আম, গৌড় মতি,কাটিমন, আম্রপলি, সুরমা ফজলি, লক্ষণভোগ জোহরী সিনা, ইত্যাদি।

সারা বিশ্বের বিভিন্ন দেশে চাঁপাইনবাবঞ্জ জেলার উৎপাদিত আম রপ্তানী হয় । যেখান থেকে সরকার সহস্ন কোটি টাকা রাজস্ব পায়। যেমনটি মিশরের উৎপাদিত তুলা বিশ্বের বিভিন্ন দেশে রপ্তানী করা হয়। সেদিক থেকে বিবেচনা করলে চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলার আম প্রকৃত পক্ষে অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ন ভূমিকা পালন করে। চাঁপাইনবাবগঞ্জ শহরের আশপাশ থেকে শুরু করে মহানন্দা,পাগলা ও পদ্মা নদী তীরঘিরে ও বারঘোরিয়া হতে সোনামসজিদ হয়ে গৌড়ের দখল দরজা পর্যন্ত মহাসড়কটির দুই পাশে ও বর্তমানে আবাদী জমিতেও সারি সারি লাখ লাখ আমের গাছের সমারোহ।

গোমস্তাপুর ভোলাহাট ও নাচোলেও আম বাগান রয়েছে। এক জরিপ মোতাবেক চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলায় আম অঞ্চলের বিস্তৃতি রয়েছে প্রায় ৫০০ বর্গকিলোমিটার। একরের হিসাবে দাঁড়ায় এক লাখ ১২হাজার একর জমি। আমের উৎপাদনএকটু ভাল হলে দাঁড়ায় প্রায় সাড়ে পাঁচ লাখ মেট্রিক টন। যার আনুমানিক মূল্য প্রায় ছয় শো কোটি টাকা। ফলন একটু বেশী হলে প্রায সাত লাখ মেট্রিক টনে উন্নীত হতে পারে। যার আনুমানিক মূল্য দাঁড়াবে প্রায় এক হাজার কোটি টাকা। ¯ এক বিঘা জমিতে ধান, পাট বা ভুট্টা চাষ করলে খরচ বাদে আয় হবে ১২/১৫ হাজার টাকা। অথচ একবিঘা জমিতে আমের চাষ করলে বর্তমান বাজার খারাপ হলেও খরচ বাদে আয় হবে প্রায় ২০-২৫ হাজার টাকা।জাতীয় অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে আম চাষের ব্যাপক প্রভাব রয়েছে।

আম গাছ ও আম বাগানে সার্বক্ষণিক পরিচার্য ও রক্ষণাবেক্ষণা,গাছে কীটনাশক প্রয়োগ, সেচ দেয়া,আম গাছ থেকে আম পাড়া,সাইকেলে বা ভ্যানে বোঝাই করা, হাটে নিয়ে যাওয়া, আম কেনা বেচা করা,টুকরী বা ক্যারেট বানানো,প্যাকেটিং করা, ট্রাকে আম উঠানামা করা ইত্যাদি কাজে প্রায়, সাইকেলে আম বহন করা, ১৮-২০ লাখ লোকের কর্মস্থান হয়।বিশেষ করে শ্রমিকরা আম অঞ্চলেই সীমাবদ্ধ থাকে না। শহরে, বাসটার্মিনালে, রেল স্টেশনে বন্দরে সর্বত্রেই শ্রমিকদের প্রভাব ছড়িয়ে থাকে। আমের মৌসুমে শ্রমিকের সংখ্যা প্রায় দ্বিগুন বৃদ্ধি পায়। সরকারী ও বেসরকারীভাবে লাভবান হওয়া যায়।

আমকে সব অবস্থাতেই ব্যবহার করা যায়। আম বাগানের মালিক না হয়েও বাগান থেকে কুড়ানো , আম থেকে আমচুর, আচার,আমতা,চাটনী, তরকারী খেতে সুস্বাদু ও সারা বছর রাখা যায়। পাঁকা আম পেট পুরে খাওয়া যায়। যা সাত লাখ মেট্রিক টন আম সাত লাখ টন খাবারের কাজ করে। সেতুবন্ধনের উপায় হিসাবোত্মীয়-স্বজন,বন্ধু বান্ধব,ভাই বোন ও অন্যান্য কটুমের বাড়িতে আম নেয়া দেয়ার মাধ্যমে গভীর সম্পর্ক স্থাপণ হয়। নতুন জামাইকে আম আটার উপঢৌকন বাংলার প্রাচীনতম ঐতিহ্য।

আম গাছের কাঁচা পাতা ও আমের আশঁ ছাগল ও ভেড়ার উৎতকৃষ্ট খাবার ও আমের ঝরে পড়া শুকনা পাতা একটি উতৎকৃষ্ট জ¦লানী সারাবছর ব্যবহার করা যায়। পাকা আম , আমচুর,জ্যাম জেলী ইত্যাদি প্রক্রিয়াজাত কৃত আমজাত পণ্য বিদেশে রপ্তানী করে প্রতি বছর হাজার হাজার কোটি বিদেশী মুদ্রা অর্জিত হয়। দু:খের বিষয়, প্রাকৃতিক দূর্যোগ, সিন্ডিকেটের মার, প্রশাসনিক হয়রানী,আমের ভাল দাম না পাওয়া, ওজনে বেশী নেয়া, সংশ্লিষ্ট বিভাগের কিছুটা অবহেলা, বিত্তশালীরা দেশ বিদেশ হতে বিভিন্ন জাতের আমের চাষ করা,আম নিয়ে ধুরন্দরদের চাটুকারিতা, ফজলী,কলম,আশিনা গুঠি সহ বিভিন্ন জাতের বড় বড় আম গাছ কেটে ফেলা সহ বিভিন্ন কারণে আম চাষী ও ব্যবসায়ীরা হতাশ।বিশেষ করে কমছে ফজলী আমের যোগান। যদিও এখনো ফজলী আমের ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। নিম্নলিখিত প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহনের মাধ্যমে আমকে জাতীয় সম্পদ হিসাবে রুপদান করা যেতে পারে।

মেগা প্রকল্প বা জাতীয় প্রকল্পের মাধ্যমে আমকে জাতীয় সম্পদ ও আম অঞ্চলকে আম এস্টেট নাম করনের মাধ্যমে জাতীয় মর্যদা প্রদান, বিদেশ থেকে বিভিন্ন প্রজাতির আমের চারা আমদানী বন্ধ করা, আম নিয়ে বিভিন্ন সিন্ডিকেট ভেঙ্গে ফলা, প্রশাসনিক দপ্তরে ধুরন্দরদের চাটুকারিতা বন্ধ করা,আম সম্পদের উন্নয়নের জন্য একটি শক্তিশালী সংস্থা গঠন করে বিভাগীয় কমিশনার ও তার মনোনীত প্রার্থীকে উক্ত সংস্থার চেয়ারম্যান করা, কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগের উপপরিচালক, চাঁপাইনবাবগঞ্জ ও রাজশাহীর জেলা প্রশাসক, স্থানীয় সংসদ সদস্য, উপজেলা চেয়ারম্যান ও প্রত্যেক উপজেলা থেকে একজন করে আম চাষীকে সদস্য করে এর সদর দফতর চাঁপাইনবাবগঞ্জ আম গবেষণাকে ,অফিসে বসে গবেষণার কাজ না করে সরাসরি আম বাগানে পরীক্ষা –নিরীক্ষা করে গবেষণার জন্য প্রশিক্ষণ প্রাপ্ত একদল টেকনিশিয়ান মোতায়েন রাখা। প্রত্যেক উপজেলা ও কানসাট আম বাজারে এর উপকেন্দ্র স্থাপণ করা,রাসায়নিক ও কীটনাশক প্রয়োগ সহজ লভ্য করা, আম চাষী ও আম ব্যবসায়ীদের জন্য সহজলভ্য ফ্রুট স্প্রেয়ার সরবরাহ করা,আমের গাছে মুকুল আসার সময় এক প্রকার আঠা বের হয়ে মুকুল কালো হয়ে যায় ।

এটিকে মহালাগা বলে। এটি রোধ করার জন্য কৃত্রিম বৃষ্টির ব্যবস্থা গ্রহন করা, সারা বছর আম সংরক্ষনে হিমাগার স্থাপণ, আম অঞ্চলে ছোট ছোট ইউনিট তৈরী করে আভ্যন্তরিন ব্যবহার ও রপ্তানী করার জন্য আচার, জেলী, আমচুর জুস মোরব্বা, স্কোয়াস, আমসত্ত¡ ইত্যাদি পণ্য তৈরীর ব্যবস্থা করা,সরকারী পৃষ্টপোষকতায় ব্যক্তিগত উদ্যোগে শিল্প ইউনিট স্থাপণ,আম অঞ্চলের যোগাযোগ ব্যবস্থা আরো উন্নত করা ও সর্বাধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে আমের উৎ্পাদন বৃদ্ধি করতে হবে। এসমস্ত উপায়ে আমের উৎ্পাদন ও শিল্প কারখানা স্থাপনের মাধ্যমে অর্থনৈতিক ও সামাজিকভাবে উন্নয়ন হতে পারে।#

guest
0 Comments
Oldest
Newest Most Voted
Inline Feedbacks
View all comments

এই বিভাগের আরও খবর

নীলফামারীতে ফ্রি চক্ষু ক্যাম্প

মো. সাইফুল ইসলাম, নীলফামারী প্রতিনিধিঃ নীলফামারীর ডোমারে ডিসিআই ও আরএসসির উদ্যোগে ‘বিনামূল্যে চক্ষু চিকিৎসা ক্যাম্প’ অনুষ্ঠিত হয়েছে। মঙ্গলবার (২০ মে) জেলা পরিষদ ডোমার ডাক বাংলো

উজিরপুর উপজেলা প্রেসক্লাবের কমিটি গঠন, সভাপতি মাসুম সম্পাদক মুন্না

মোঃ মাহফুজুর রহমান মাসুম, উজিরপুর প্রতিনিধিঃ উজিরপুর উপজেলায় কর্মরত সাংবাদিকদের পেশাদারী সংগঠন উজিরপুর উপজেলা প্রেসক্লাবের কমিটি গঠন করা হয়েছে। ১৯ মে সোমবার সন্ধা ৭ টায়

সংগ্রামী মায়ের গল্প: বৃষ্টির মধ্যেও চলমান এক জীবনযুদ্ধ

মাসফিকুল হাসান, বেরোবি প্রতিনিধি: বৃষ্টির দিনে আমরা যখন জানালার পাশে দাঁড়িয়ে প্রকৃতি উপভোগ করি, তখনই বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়, রংপুর-এর প্রশাসনিক ভবনের পাশের খালি জায়গায় কিছু

ঈশ্বরগঞ্জে সাংবাদিকদের সাথে নবাগত ইউএনও’র পরিচিত ও মতবিনিময় সভা

শাহ আলম কৌশিক,ঈশ্বরগঞ্জ (ময়মনসিংহ): ময়মনসিংহের ঈশ্বরগঞ্জ উপজেলায় নব যোগদানকৃত উপজেলা নির্বাহী অফিসার সানজিদা রহমানের সাথে সাংবাদিকদদের পরিচিতি ও মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। সোমবার (১৯ মে),

Scroll to Top