নিজস্ব প্রতিবেদক:
কাশ্মীর ইস্যুতে ভারত-পাকিস্তান সাময়িক উত্তেজনা কমলেও, এর প্রতিক্রিয়া এখনো ভারতজুড়ে ছড়িয়ে পড়ছে। দেশটির ক্ষমতাসীন উগ্র হিন্দুত্ববাদী বিজেপি সরকারের বিরুদ্ধে এখন মতপ্রকাশের স্বাধীনতা দমনের অভিযোগ উঠছে। সরকারের সমালোচনায় মুখ খুললেই পড়তে হচ্ছে রাষ্ট্রদ্রোহের অভিযোগে কড়া আইনি পদক্ষেপের মুখে।
আলজাজিরা ও এনডিটিভির তথ্য মতে, ১৫২, ১৯৬ ও ৩৫৩ ধারায় রাষ্ট্রদ্রোহের মামলা দায়ের করে মতপ্রকাশকারীদের দমন করা হচ্ছে। বুদ্ধিজীবী, লেখক, শিক্ষাবিদ, এমনকি সাংস্কৃতিক কর্মীরাও রেহাই পাচ্ছেন না।
সম্প্রতি ‘রাষ্ট্রবিরোধী মন্তব্য’-এর অভিযোগে গ্রেপ্তার করা হয়েছে শিক্ষাবিদ আলী খান মাহমুদাবাদকে। পাশাপাশি, মহারাষ্ট্রের নাগপুরে পাকিস্তানি কবি ফয়েজ আহমেদ ফয়েজের ‘হাম দেখেঙ্গে’ গান গাওয়ার দায়ে একদল সাংস্কৃতিক কর্মীর বিরুদ্ধে রাষ্ট্রদ্রোহের মামলা করা হয়েছে। এই গানটি দক্ষিণ এশিয়ায় স্বৈরশাসনের বিরুদ্ধে প্রতিরোধের প্রতীক হিসেবে পরিচিত।
আরও এক চাঞ্চল্যকর ঘটনা ঘটেছে কাশ্মীরি বংশোদ্ভূত ব্রিটিশ লেখক ও অধ্যাপক নীতাশা কৌলকে ঘিরে। ভারত সরকারের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, তার ওভারসিজ সিটিজেনশিপ অব ইন্ডিয়া (OCI) বাতিল করা হয়েছে। ফলে নিজের মাতৃভূমি ভারত এখন তার জন্য নিষিদ্ধ। নীতাশা জানিয়েছেন, মোদি সরকারের সংখ্যালঘু ও গণতন্ত্রবিরোধী নীতির সমালোচনার কারণেই তার বিরুদ্ধে এ পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। তিনি রোববার এক্সে (সাবেক টুইটার) ভারত সরকারের পাঠানো নোটিশ প্রকাশ করেন এবং এ ঘটনাকে ‘প্রতিশোধমূলক ও নিষ্ঠুর’ বলে মন্তব্য করেন।
নীতাশা বেঙ্গালুরুতে কর্নাটক রাজ্য সরকারের আয়োজিত এক সম্মেলনে যোগ দিতে এসেছিলেন। তবে বিমানবন্দরে অভিবাসন কর্মকর্তারা তাকে আটকান এবং দীর্ঘ জিজ্ঞাসাবাদের পর ইংল্যান্ডে ফেরত পাঠিয়ে দেন।
এদিকে, মোদি সরকারের কড়াকড়ির কারণে কাশ্মীরে আতঙ্ক ছড়িয়েছে সাধারণ মানুষের মাঝেও। অনেক তরুণ যারা একসময় রাজনৈতিক বা ধর্মীয় প্রতীক হিসেবে শরীরে ট্যাটু করেছিলেন, এখন তা মুছে ফেলছেন নিরাপত্তা ও চাকরি হারানোর আশঙ্কায়। ১৭ বছর বয়সী ইরফান ইয়াকুব বলেন, একসময় বিদ্রোহীর নাম ছিল হাতে, কিন্তু এখন ভবিষ্যতের কথা ভেবে তা মুছে ফেলাই শ্রেয় মনে করছেন। শোপিয়ানের রইস ওয়ানিও একই কারণে ট্যাটু মুছে ফেলেছেন।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ভারতের এই প্রবণতা দেশটির গণতান্ত্রিক কাঠামো এবং মতপ্রকাশের স্বাধীনতার জন্য মারাত্মক হুমকি। মতপ্রকাশের স্বাধীনতা রক্ষায় প্রয়োজন আরও সচেতনতা এবং আন্তর্জাতিক পর্যায়ের নজরদারি।