২২শে মে, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ | ৮ই জ্যৈষ্ঠ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ | ২৪শে জিলকদ, ১৪৪৬ হিজরি

ইসলামী মূল্যবোধবিরোধী রাজনীতির পরিণতি : এনসিপির জন্য সতর্ক সংকেত

বাংলাদেশের রাজনীতির বাস্তবতা হলো, এই ভূখণ্ডের মানুষ আত্মিকভাবে ধর্মানুরাগী। ধর্ম ও জাতীয়তাবাদ মিশ্রিত এক আবেগ এখানে শতাব্দীর পর শতাব্দী ধরে সমাজের চালিকাশক্তি হিসেবে কাজ করেছে। যারা এই বাস্তবতা বুঝতে ব্যর্থ হয়, তারা রাজনীতির মাঠে বেশি দিন টিকতে পারে না। এদেশের ইতিহাসের দিকে তাকালেই তার প্রমাণ মেলে।

এনসিপি নামক নতুন রাজনৈতিক উদ্যোগটি প্রথমদিকে তরুণ-ছাত্র জনতার স্বতঃস্ফূর্ত আন্দোলনের সুযোগ নিয়ে নিজেদের রাজনৈতিক অবস্থান তৈরি করেছিল। ফ্যাসিস্ট শাসনের বিরুদ্ধে জনগণের ক্ষোভকে পুঁজি করে তারা জনসমর্থন আদায়ের চেষ্টা করেছে। কিন্তু পরবর্তীতে তাদের আদর্শিক অবস্থান, নেতৃত্বের চরিত্র এবং ধর্ম-রাজনীতি সম্পর্কে নেতিবাচক মনোভাব অতি দ্রুতই ইসলামপন্থী জনতার মধ্যে বিরূপ প্রতিক্রিয়া তৈরি করেছে।

এদেশের সাধারণ মানুষের ধর্মানুভূতিকে উপেক্ষা করে, ইসলামবিরোধী এজেন্ডা বাস্তবায়ন করা, বিশেষ করে সমকামিতার বৈধতা, পতিতাবৃত্তির স্বীকৃতি ও ইসলামী বিধান নিয়ে উপহাস, সমাজে কখনোই গ্রহণযোগ্যতা পাবে না। এনসিপির কিছু নেত্রী যখন প্রকাশ্যে কুরআনের বিধানকে অস্বীকার করে রাস্তায় নামেন, তখন তারা জানেন না, এদেশের ৯০ ভাগ মানুষের হৃদয়ে কুরআনের প্রতি কী সম্মানবোধ বিরাজ করে।

অপরদিকে, এনসিপির অভ্যন্তরে ধর্মীয় মূল্যবোধসম্পন্ন নেতাকর্মীদের অবমূল্যায়ন এবং তাদের বিরুদ্ধে কটূক্তি সংগঠনের ভেতরেই দ্বন্দ্ব তৈরি করেছে। ছাত্র আন্দোলনের নামে যারা শাহবাগী, বামপন্থী ও বিদেশপন্থী এজেন্ডা বাস্তবায়নের চেষ্টা করবে, তারা হয়তো সাময়িক মিডিয়া লাইমলাইট পাবে, কিন্তু দীর্ঘমেয়াদে রাজনীতির ময়দানে টিকে থাকতে পারবে না।

একই ভুল অতীতে বহু দল করেছে। শাহবাগের আন্দোলনের ইতিহাস দেখলেই বোঝা যায়, ধর্মানুভূতির প্রতি অবজ্ঞা কখনো জনগণ গ্রহণ করেনি। এনসিপিও একই পথের যাত্রী। বর্তমানে তাদের সমাবেশে জনসংখ্যার ভাটা, ইসলামী ঘরানার ছাত্র-তরুণদের অনীহা এবং সামাজিক মাধ্যমে সমালোচনার ঝড় এ কথারই ইঙ্গিত দিচ্ছে।

এনসিপির উচিত অবিলম্বে তাদের আদর্শিক অবস্থান পর্যালোচনা করা। এই ভূখণ্ডের জনগণের আকাঙ্ক্ষা, ধর্মানুভূতি ও মূল্যবোধকে অস্বীকার করে কোনো দল কখনো জনপ্রিয়তা ধরে রাখতে পারেনি। তারা যদি তাওহিদি জনতার মূল্যবোধের প্রতি শ্রদ্ধাশীল না হয়, তবে এই অনাস্থা অতি দ্রুতই তাদের রাজনৈতিক পরিণতির কারণ হয়ে দাঁড়াবে। রাজনীতির মাঠে একবার জনসমর্থন হারালে, তা পুনরুদ্ধার করা প্রায় অসম্ভব হয়ে যায়।

এনসিপির মতো নতুন রাজনৈতিক উদ্যোগের সামনে এখন দুটি পথ, হয় ইসলামী মূল্যবোধ ও জাতীয় স্বার্থকে সম্মান জানিয়ে জনতার আস্থা অর্জন করা, নতুবা ধর্মবিরোধী ও পশ্চিমা এজেন্ডার পথ ধরে একেবারে জনবিচ্ছিন্ন হয়ে পড়া। সময় খুব বেশি নেই।

এম. আসগর সালেহী
ফটিকছড়ি, চট্টগ্রাম।

guest
0 Comments
Oldest
Newest Most Voted
Inline Feedbacks
View all comments

এই বিভাগের আরও খবর

সৈকতের নিচে শাদা ছায়া

লেখক জাহেদুল ইসলাম আল রাইয়ান কক্সবাজারের আকাশে এখনো সূর্য নামে প্রতিদিন, কিন্তু সম্প্রতি সেই আলোয় যেন এক অচেনা ছায়া পড়েছে। বালুকাবেলার ওপর যেসব পায়ের ছাপ

হজ্জ: হৃদয়ের দিগন্তে আলেয়ার মতো জ্বলে ওঠা আত্মশুদ্ধির আলোকপাঁজর

লেখক জাহেদুল ইসলাম আল রাইয়ান যখন কোটি কোটি হৃদয় এক সুরে উচ্চারণ করে—”লাব্বাইকা আল্লাহুম্মা লাব্বাইক”, তখন আকাশ-বাতাসও থমকে দাঁড়ায়। হজ্জ তখন আর শুধু একটি ধর্মীয়

আদর্শিক নেতৃত্বের আলোকবর্তিকা মোহাম্মদ মুনতাসীর আহমেদ

আব্দুল মাবুদ মোহাম্মদ ইউসুফ, নরসিংদী প্রতিনিধি: ইসলামী ছাত্র আন্দোলন বাংলাদেশের কেন্দ্রীয় সহ-সভাপতি মোহাম্মদ মুনতাসীর আহমেদ—একটি নাম, যা আজ হাজারো তরুণের অন্তরে এক সাহস, এক অনুপ্রেরণা।

পাকিস্তান-ভারত, বিচারহীন ঘৃণার রাজনীতি নয়, চাই সুস্থ দৃষ্টিভঙ্গি

মোঃ নুর আলম পাপ্পু, সাংবাদিক বর্তমান সময়ের রাজনৈতিক ও সামাজিক বাস্তবতায় আমরা প্রায়শই এমন কিছু বিতর্কে জড়িয়ে পড়ি, যেগুলোর মূলত গভীরতা নেই, কিন্তু আবেগ-উত্তেজনায় ভরপুর।

Scroll to Top