নিজস্ব প্রতিবেদক:
মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে সহিংসতা ও মানবিক সংকট মোকাবিলায় বাংলাদেশ ‘মানবিক করিডর’ দিয়েছে—এমন তথ্য ভিত্তিহীন ও গুজব বলে জানিয়েছেন অন্তর্বর্তী সরকারের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা খলিলুর রহমান। বুধবার রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে এক প্রেস ব্রিফিংয়ে তিনি বলেন, এ বিষয়ে বাংলাদেশ কারো সঙ্গে আলোচনা করেনি।
তিনি বলেন, “বাংলাদেশের ভেতর দিয়ে ত্রাণ সরবরাহের জন্য জাতিসংঘ একটি চ্যানেল তৈরির প্রস্তাব দিয়েছে, যা বাংলাদেশ বিবেচনা করছে। কিন্তু কোনো ধরনের মানবিক করিডর নিয়ে আলোচনা হয়নি, কারণ যার অস্তিত্বই নেই তা নিয়ে কথা বলার প্রশ্ন ওঠে না।”
নিরাপত্তা উপদেষ্টা বলেন, “জাতিসংঘের সহযোগিতায় রাখাইনে ত্রাণ পাঠানোর বিষয়ে নানা গুজব ছড়ানো হচ্ছে। দ্ব্যর্থহীনভাবে বলছি, আমরা করিডর নিয়ে কারো সঙ্গে কথা বলিনি, এবং বলবও না।”
তিনি আরও জানান, করিডরের কোনো প্রয়োজন নেই, বরং প্রয়োজন হচ্ছে ত্রাণ সহায়তা পৌঁছে দেওয়া। বিষয়টি এখনো বিবেচনার স্তরে পৌঁছায়নি, তবে হলে সব পক্ষের সঙ্গে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।
আরাকান আর্মি এবং আন্তর্জাতিক সম্মেলন প্রসঙ্গে
আরাকান আর্মির ‘এথনিক ক্লিনজিং’ নীতির প্রতি ইঙ্গিত করে খলিলুর রহমান বলেন, “যদি তারা এমন পলিসি নেয়, তাহলে তাদের সঙ্গে বাংলাদেশের কোনো ধরনের বাণিজ্য বা সম্পর্ক থাকবে না।”
তিনি জানান, জাতিসংঘ আগামী ৩০ সেপ্টেম্বর একটি আন্তর্জাতিক রোহিঙ্গা সম্মেলনের আয়োজন করবে, যেখানে ১০৬টি দেশ অংশগ্রহণ করবে। এই সম্মেলন রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়াকে এগিয়ে নেওয়ার লক্ষ্যে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
সেনাবাহিনী ও আন্তর্জাতিক চাপ প্রসঙ্গে মন্তব্য
প্রেস ব্রিফিংয়ে জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা বলেন, “মিয়ানমার ইস্যুতে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও সরকারের মধ্যে কোনো মতপার্থক্য নেই। সবাই এক প্ল্যাটফর্মে কাজ করছে।”
তিনি যুক্তরাষ্ট্র বা অন্য কোনো দেশের চাপ প্রসঙ্গে বলেন, “আমরা কোনো দেশের চাপের মধ্যে নেই। বাংলাদেশ তার নিজস্ব নীতিতে অটল রয়েছে। প্রত্যাবাসনের ব্যাপারে আমরা তাড়াহুড়ো করব না। আমরা চাই টেকসই সমাধান।”
গুজবের উৎস সম্পর্কে সতর্কতা
খলিলুর রহমান জানান, ‘মানবিক করিডর’ সংক্রান্ত গুজব একটি প্রতিবেশী দেশের গণমাধ্যম থেকে এসেছে। তারা এমনকি দাবি করছে, বাংলাদেশ নাকি যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ থেকে ‘প্রক্সি যুদ্ধ’ চালাবে, যা সম্পূর্ণ মিথ্যা ও ভিত্তিহীন।
তিনি বলেন, “আমরা আশা করেছিলাম, এই ধরনের অপপ্রচারের বিরুদ্ধে সচেতন মহল এগিয়ে আসবে। সরকার সব বিষয়ে সবসময় মুখ খুলবে—তা বাস্তবসম্মত নয়।”
উপস্থিতি
ব্রিফিংয়ে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলমও উপস্থিত ছিলেন।