২১শে মে, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ | ৭ই জ্যৈষ্ঠ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ | ২৩শে জিলকদ, ১৪৪৬ হিজরি

চাহিদা মিটিয়ে নীলফামারীতে কোরবানির জন্য উদ্বৃত্ত ৬৫ হাজার পশু

মো. সাইফুল ইসলাম, নীলফামারী প্রতিনিধি

আসন্ন পবিত্র ঈদুল আজহাকে সামনে রেখে নীলফামারীতে গরু পালনকারী ও খামারিদের প্রস্তুতি প্রায় শেষপর্যায়ে। এখন খামারিদের কাছে আসছেন পশু ব্যবসায়ীরা। তবে হাটবাজার জমতে আরও কয়েক দিন দেরি হবে বলে খামারি ও গৃহস্থরা জানান। এরই মধ্যে গরু ব্যবসায়ী ও বিভিন্ন এলাকার ব্যাপারী খামারে খামারে গিয়ে চাহিদামতো গরু দরদাম করে কিনতে শুরু করেছেন। কোরবানির হাটে স্বাস্থ্যসম্মত ও মোটা-তাজা গরু-ছাগলের চাহিদা থাকায় খামারিরা প্রাকৃতিক উপায়ে সেগুলোকে প্রস্তুত করছেন এমনটি জানিয়েছেন খামারিরা।

এদিকে, পশু খাদ্যের মূল্যবৃদ্ধিতে খামারিরা কিছুটা উদ্বিগ্ন হলেও ঈদের বাজারে ভালো দামের আশায় খামারিরা শেষ সময়ের পরিচর্যায় ব্যস্ত। অনেকে খামার থেকেই বিক্রি শুরু করেছেন, আবার কেউ কেউ অনলাইন প্ল্যাটফর্মে বিক্রির পথ বেছে নিচ্ছেন।

জেলা প্রাণী সম্পদ বিভাগের তথ্যানুযায়ী, এবার কোরবানির ঈদের জন্য জেলায় বাণিজ্যিক ও পারিবারিক খামার রয়েছে ৩৪ হাজার ৩৮৩টি। এসব খামারে গরু-ছাগল রয়েছে ২ লাখ ৮৯ হাজার ১৫৭টি। এ বছর জেলায় গরুর চাহিদা ২ লাখ ২৩ হাজার ১৬৬টি, যা চাহিদার চেয়ে ১ লাখ ৩৩ হাজার ৯২ টি গরু-ছাগল বেশি। এর মধ্যে ষাঁড় ৫২ হাজার ১০টি, বলদ ৪ হাজার ২৩১টি, গাভী ২৫ হাজার ৭৯৮টি, মহিষ ৮৯টি, ছাগল ১ লাখ ৯১ হাজার ৯৫৭টি ও ভেড়া রয়েছে ১৪ হাজার ৯৭২টি। এছাড়াও ৬৫ হাজার ৯৯১টি পশু উদ্বৃত্ত থাকায় সেগুলো পাশের জেলায় সরবরাহ করা হবে।

সরেজমিন পরিদর্শনে গেলে খামারিরা জানান, আর কয়েকদিন পরেই পুরোদমে শুরু হবে কোরবানির পশু কেনা-বেচা। তাই আগাম প্রস্তুতি হিসেবে পশুর পরিচর্যায় ব্যস্ত সময় পার করছেন তারা। গরুকে খাবার হিসেবে কাঁচা ঘাস, খৈল, ভুট্টা এবং ধানের কুড়াসহ প্রাকৃতিক খাবার খাওয়ানো হচ্ছে। তবে পশুখাদ্যের দাম বেশি হওয়ায় গরু পালনে খরচ অনেকটা বেড়েছে বলে জানিয়েছেন খামারিরা।

নীলফামারী বনবিভাগ এলাকার বাসিন্দা জাহাঙ্গীর আলম নামে এক খামারি বলেন, ‘প্রতিবছরই কোরবানিকে সামনে রেখে কিছু গরু পালন করি। এ বছর ২৩টি গরু পালন করেছি। গরু ব্যবসায়ীরা বাড়িতে এসে দরদাম করছেন। তবে আশা করছি কোন প্রাকৃতিক দূর্যোগ না থাকলে ভালো দামে বিক্রি হবে গরুগুলি।

জেলা শহরের খামারি গোলাম মোস্তফা কামাল জানান, প্রতি বছর কোরবানির জন্য ১০-১২টি ষাঁড় দেশীয় পদ্ধতিতে লালন-পালন করি। বাজারে দেশি গরুর চাহিদা বেশি থাকায় এবার লাভের মুখ দেখা যাবে। তিনি আশা করছেন, ভারতের গরু ছাড়াই আমাদের দেশি গরু দিয়ে কোরবানির হাট-বাজারগুলো ভরে যাবে।

নীলফামারী সদরের সিংদই এলাকার আদিল এগ্রো ফার্মের স্বত্তাধিকারী আজমাইন আদিল সাকিব প্রতিবেদককে জানান, শখের বসে খামার শুরু করলেও এখন বাণিজ্যিকভাবে পালন করছেন। গত ৩ বছর ধরে কোরবানির পশু বাজারজাত করে আসছি। গত বছর ১৫০টি দেশি জাতের ষাঁড় গরু বাজারজাত করেছি। এবছর খামারে কোরবানির জন্য দেশি জাতের ২০০টি ষাঁড় গরু প্রস্তুত আছে। তবে কোরবানির জন্য প্রস্তুত এসব গরু দেশের বিভিন্ন প্রান্তের ব্যবসায়ীরা ক্রয় করতে আসছেন। অনেকে আবার বুকিং দিয়েও রাখছেন। তিনি আশাবাদী এবছরও তাদের খামারের উৎপাদিত গরু শতভাগ বিক্রি হবে।

তিনি বলেন, দ্রব্যমূল্যের দাম বৃদ্ধি পাওয়ায় পশু-খাদ্যের দাম অনেক বেড়েছে। যার কারনে গরু পালনে খরচও বেড়েছে। গরুগুলোকে প্রতিদিন দুই বেলা (অর্গানিক) প্রাকৃতিক খাদ্য যেমন ভুট্টার খৈল, সরিষার খৈল, ব্রান্ড, কাঁচা ঘাস, গমের ভুসি, চালের কুঁড়া, খুঁদ ও খড় খাওয়ানো হয়। দিনে দুই-তিনবার গোসল করানো হয়। পশুর থাকার জায়গা সবসময় পরিষ্কার রাখাসহ সার্বক্ষণিক ফ্যান চালিয়ে পরিবেশ ঠান্ডা রাখা হচ্ছে।

তিনি আরো বলেন, নীলফামারী সদর উপজেলা প্রাণী সম্পদ কর্মকর্তার সার্বিক দিক নির্দেশনা ও তদারকিতে সময়মত ভ্যাকসিন, ভিটামিন ও প্রয়োজনীয় চিকিৎসা পাওয়ায় কোরবানির পশুগুলো সুস্থ রয়েছে।

সৈয়দপুর উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. এ কে এম ফরহাদ নোমান প্রতিবেদককে জানান, গরুকে দানাদার খাদ্য ও কাঁচা ঘাস খাওয়ানোর জন্য খামারিদের নিয়মিত পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে। পাশাপাশি ভিটামিন খাওয়াতেও বলা হচ্ছে খামারিদের। তবে গরুকে নিষিদ্ধ কোনো রাসায়নিক ও হরমোন ওষুধ খাওয়ানো থেকে বিরত থাকার পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে বলেও জানান তিনি। তিনি আরো জানান, এ জেলার খামারি ও গৃহস্থরা প্রাকৃতিক খাবার খাইয়ে গরু মোটাতাজা করায় এই জেলার পশুর চাহিদা সারাদেশে। এখানকার লোকজন খামার ছাড়াও প্রায় প্রতিটি বাড়িতে পারিবারিকভাবে পশু পালন করে থাকেন। এবার ভারত থেকে গরু আমদানি না হলে লাভের আশা করছেন খামারিরা।

নীলফামারী জেলা প্রাণী সম্পদ কর্মকর্তা ডা. মো. সিরাজুল হক প্রতিবেদককে জানান, এবার চাহিদার চেয়ে পর্যাপ্ত কোরবানির পশু প্রস্তুত আছে। যা জেলার চাহিদা মিটিয়ে জেলার বাইরেও বিক্রি করতে পারবেন খামারিরা। এবছর প্রাকৃতিক উপায়ে গরু মোটাতাজাকরণের জন্য উপজেলাভিত্তিক তালিকাভুক্ত খামারিদের সারা বছর প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে। তিনি বলেন, আসন্ন কোরবানির ঈদে হাটে আগত ব্যবসায়ী ও খামারিরা যাতে নির্বিঘ্নে তাঁদের পশু বিক্রি করতে পারে সেদিকে সজাগ দৃষ্টি রাখা হবে। এছাড়াও ক্রেতা-বিক্রেতার সার্বিক নিরাপত্তা দিতে পুলিশ ও প্রশাসন প্রস্তুত রয়েছে। তিনি আরো বলেন, পশু হাটে পশু অসুস্থ হয়ে পড়লে তাৎক্ষণিক চিকিৎসার জন্য পর্যাপ্ত পশু চিকিৎসক নিয়োজিত থাকবে।

guest
0 Comments
Oldest
Newest Most Voted
Inline Feedbacks
View all comments

এই বিভাগের আরও খবর

নীলফামারীতে বিদ্যুৎস্পৃষ্টে একই পরিবারের ২ জনের মৃত্যু

মো. সাইফুল ইসলাম, নীলফামারী প্রতিনিধি নীলফামারীতে ঘরের কাজ করার সময় বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে একই পরিবারের দু’জনের মর্মান্তিক মৃত্যু হয়েছে। এ ঘটনায় গুরুতর আহত হয়েছেন আরও একজন।

বাধ ভেঙে নদীতে বিলীন,নলছিটির রানাপাশা ও মোল্লারহাট এলাকার ভাঙন কবলিত এলাকা পরিদর্শনে ইউএনও ও পানি উন্নয়ন বোর্ড

ঝালকাঠি প্রতিনিধিঃ মোঃ নাঈম মল্লিক ঝালকাঠির নলছিটি উপজেলার রানাপাশা ও মোল্লারহাট ইউনিয়নের সীমানা ঘেষা হদুয়া লঞ্চ ঘাট,ইসলামাবাদ সহ ভাঙন কবলিত কয়েকটি এলাকা পরিদর্শন করেন নলছিটি

শিবগঞ্জে বজ্রপাতে নিহতের পরিবারদের মাঝে নগদ অর্থ প্রদান

মোহাঃ রকিব উদ্দীন, চাঁপাইনবাবগঞ্জ প্রতিনিধি চাঁপাইনবাবগঞ্জের শিবগঞ্জে বজ্রপাতে নিহত দুই পরিবারের মাঝে নগদ অর্থ সহায়তা প্রদান করা হয়েছে। বুধবার সকালে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তর ও উপজেলা

দুমকিতে বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে শ্রমিকের মৃত্যু

জাকির হোসেন হাওলাদার, পটুয়াখালী প্রতিনিধিঃ পটুয়াখালী জেলার দুমকি উপজেলায় মোটরের কাজ করতে গিয়ে বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে মোঃ নজরুল ইসলাম (২৬) নামে এক শ্রমিকের মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছে।

Scroll to Top