নিজস্ব প্রতিবেদক:
দেশের বর্তমান রাজনৈতিক অস্থিরতা ও নির্বাচনী সংকট নিয়ে গভীর ক্ষোভ ও হতাশা প্রকাশ করেছেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস। বৃহস্পতিবার (২২ মে) দুপুরে উপদেষ্টা পরিষদের নিয়মিত বৈঠক শেষে অনির্ধারিত আলোচনায় তিনি বলেন, “এভাবে দায়িত্ব পালন সম্ভব হচ্ছে না। আমি যদি কাজ করতে না পারি, তাহলে এই পদে থেকে কী লাভ?”
বৈঠকে অংশ নেওয়া একাধিক উপদেষ্টা ও সরকারের উচ্চপর্যায়ের একজন কর্মকর্তার বরাতে এসব তথ্য জানিয়েছে বিবিসি বাংলা।
প্রধান উপদেষ্টা বলেন, নির্বাচন নিয়ে নানা দিক থেকে চাপ তৈরি হয়েছে। সুষ্ঠু পরিবেশ ছাড়া অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচন আয়োজন করা সম্ভব নয়। তিনি আশঙ্কা প্রকাশ করেন, এই পরিস্থিতিতে নির্বাচনে ব্যালট ছিনতাইয়ের মতো ঘটনা ঘটলেও আইনশৃঙ্খলা বাহিনী তা রুখে দিতে পারবে না। ফলে একটি বিশ্বাসযোগ্য নির্বাচন নিয়ে তিনি সন্দিহান।
এসময় তিনি প্রশ্ন তোলেন, “সংস্কারের দিকেও তো এখনো তেমন কিছু হয়নি। তাহলে আমি কেন থাকব?” বৈঠকে উপস্থিত সূত্রগুলো জানায়, একপর্যায়ে তিনি উপদেষ্টাদের বলেন, “তোমরা আরেকটি অন্তর্বর্তী সরকার গঠন করো, আমি চলে যেতে চাই।”
অন্তর্বর্তী সরকারের বিভিন্ন পর্যায়ে অসহযোগিতার প্রসঙ্গও বৈঠকে উঠে আসে। প্রধান উপদেষ্টা উল্লেখ করেন, রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে সমন্বয় না থাকায় সরকার কার্যকরভাবে কাজ করতে পারছে না।
এদিন সন্ধ্যায় যমুনায় প্রধান উপদেষ্টার বাসভবনে দেখা করেন জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম। তিনি বিবিসি বাংলাকে বলেন, “স্যার বলছেন, আমাকে গণ-অভ্যুত্থানের পর আনলে দেশের পরিবর্তনের প্রত্যাশায়। কিন্তু এখন যেভাবে আন্দোলন হচ্ছে বা আমাকে যেভাবে জিম্মি করা হচ্ছে, এভাবে তো কাজ করতে পারব না। পদত্যাগের বিষয়টি নিয়ে উনি ভাবছেন।”
নাহিদ ইসলাম আরও জানান, তিনি প্রধান উপদেষ্টাকে অনুরোধ করেছেন যেন তিনি পদত্যাগ না করেন এবং সব দলকে নিয়ে ঐক্য গড়ে তোলার উদ্যোগ অব্যাহত রাখেন।
একপর্যায়ে জাতির উদ্দেশে ভাষণ দেওয়ার কথাও আলোচনা হয়, যেখানে দেশের পরিস্থিতি ও অসহযোগিতার বিষয়টি তুলে ধরার পরিকল্পনা ছিল। তবে সেই ভাষণ এখনো চূড়ান্ত হয়নি।
বর্তমান পরিস্থিতিতে দেশ পরিচালনা ও সুষ্ঠু নির্বাচন আয়োজন নিয়ে অনিশ্চয়তা সৃষ্টি হওয়ায় প্রধান উপদেষ্টার এই অবস্থান দেশজুড়ে নতুন করে রাজনৈতিক আলোচনার জন্ম দিয়েছে।