নিজস্ব প্রতিবেদক:
জাতীয় বাজেটে কৃষি খাতে ৪০ শতাংশ উন্নয়ন বরাদ্দসহ কৃষকের স্বার্থে ১২ দফা দাবি জানিয়েছে সমাজতান্ত্রিক ক্ষেতমজুর ও কৃষক ফ্রন্ট। বৃহস্পতিবার রাজধানীর জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে আয়োজিত এক সমাবেশে এসব দাবি জানানো হয়।
সমাবেশ শেষে একটি মিছিল অর্থ উপদেষ্টার কার্যালয়ে গিয়ে দাবিসংবলিত স্মারকলিপি জমা দেয়।
সংগঠনের কেন্দ্রীয় সভাপতি বজলুর রশীদ ফিরোজের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক আব্দুল কুদ্দুস, সহ-সভাপতি জয়নাল আবেদীন মুকুল, শফিউর রহমান শফি, অ্যাডভোকেট সাইফুল ইসলাম পল্টু ও অ্যাডভোকেট আসাদুল ইসলাম।
সমাবেশে বজলুর রশীদ ফিরোজ বলেন, দেশের ৪৫ শতাংশ শ্রমশক্তি কৃষি খাতে নিয়োজিত, যার মধ্যে প্রায় ৬০ শতাংশ গ্রামীণ নারী। তবুও কৃষি খাত দীর্ঘদিন ধরে অবহেলিত। জিডিপিতে কৃষির অবদান ১১.২ শতাংশ হলেও সরকারিভাবে এর প্রতি গুরুত্ব নেই বললেই চলে।
তিনি আরও বলেন, কৃষি উপকরণের দাম বাড়ছে, অথচ কৃষক তাদের উৎপাদিত পণ্যের ন্যায্য মূল্য পাচ্ছে না। প্রতি বছর প্রায় ১১ লাখ কৃষক জমি হারিয়ে ভূমিহীন হচ্ছেন। বাজারে ভেজাল সার, বীজ ও কীটনাশকের ছড়াছড়িতে কৃষকরা চরম ক্ষতির মুখে পড়ছে। ক্ষেতমজুরদের বার্ষিক গড় কাজ ১৮০ দিনেরও কম।
তিনি খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে এবং দেশের অর্থনীতিকে টিকিয়ে রাখতে কৃষিকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দেওয়ার আহ্বান জানান এবং কৃষি খাতে ৪০ শতাংশ উন্নয়ন বাজেট বরাদ্দের দাবি পুনর্ব্যক্ত করেন।
সংগঠনের ১২ দফা দাবির মধ্যে রয়েছে:
১. উন্নয়ন বাজেটের ৪০% কৃষি খাতে বরাদ্দ।
২. কৃষিশ্রমিকদের রেশন, স্বাস্থ্যসেবা, রেজিস্ট্রেশন কার্ড এবং ভূমিহীনদের কৃষি কার্ড।
৩. সারা বছর কর্মসংস্থান, ১২০ দিনের কর্মসূচি, দৈনিক ৮০০ টাকা ন্যূনতম মজুরি ও নিরাপদ আবাসন।
৪. নারী শ্রমিকদের জন্য সমান মজুরি ও স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিতকরণ।
৫. বিএডিসিকে কার্যকর করে কৃষি উপকরণ সরবরাহ ও ভেজালের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা।
৬. কৃষিপণ্যের লাভজনক দাম ও সরাসরি কৃষকের কাছ থেকে সরকারি ক্রয়।
৭. প্রাকৃতিক দুর্যোগে ক্ষতিগ্রস্তদের আর্থিক সহায়তা ও পুনর্বাসন।
৮. খাসজমি ভূমিহীনদের মাঝে বিতরণ ও গৃহহীনদের আবাসন।
৯. ১০ হাজার টাকা পর্যন্ত কৃষিঋণ মওকুফ ও বিনা সুদে ঋণ প্রদান।
১০. নিত্যপণ্যের দাম কমানো ও আর্মি রেটে রেশন।
১১. দুর্নীতি, ঘুষ ও দলীয়করণ বন্ধ এবং এনজিও ঋণের সুদ হ্রাস।
১২. আদিবাসীদের সাংবিধানিক স্বীকৃতি ও ভূমি নিরাপত্তা নিশ্চিত।
এই দাবিগুলো দ্রুত বাস্তবায়নের আহ্বান জানিয়ে বক্তারা বলেন, কৃষক ও ক্ষেতমজুরদের অধিকার রক্ষা করা না গেলে দেশের খাদ্য নিরাপত্তা ও অর্থনীতি হুমকির মুখে পড়বে।