নিজস্ব প্রতিবেদক:
দেশের বর্তমান রাজনৈতিক অস্থিরতা ও নির্বাচন নিয়ে তৈরি চাপের মুখে আন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস দায়িত্ব পালনে অপারগতা প্রকাশ করে পদত্যাগের ঘোষণা দিয়েছেন। বৃহস্পতিবার উপদেষ্টা পরিষদের নিয়মিত বৈঠকে অনির্ধারিত আলোচনায় এ ঘোষণার কথা জানান তিনি।
অধ্যাপক ইউনূস বলেন, “এভাবে দায়িত্ব পালন সম্ভব হচ্ছে না। নির্বাচন নিয়ে প্রচণ্ড চাপ তৈরি হয়েছে। দেশের বিরাজমান পরিস্থিতিতে যদি ঠিকভাবে কাজ করতে না পারি, তাহলে এই পদে থেকে কোনো লাভ নেই।”
এই ঘোষণার পর বিশ্ব গণমাধ্যমে বিষয়টি গুরুত্ব সহকারে প্রকাশ পায়। যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক প্রভাবশালী সংবাদমাধ্যম নিউইয়র্ক টাইমস তাদের প্রতিবেদনে শিরোনাম করে: ‘নির্বাচন নিয়ে চাপের মুখে অধ্যাপক ইউনূসের পদত্যাগের হুমকি।’
প্রতিবেদনে বলা হয়, গত আগস্টে শিক্ষার্থীদের নেতৃত্বে একটি আদর্শবাদী আন্দোলনের মধ্য দিয়ে শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর দেশের মানুষ গণতন্ত্রের প্রত্যাবর্তনের স্বপ্ন দেখেছিল। তবে ৯ মাস পেরিয়ে গেলেও অন্তর্বর্তী সরকার প্রত্যাশা পূরণে ব্যর্থ হয়েছে। এমন প্রেক্ষাপটে মুহাম্মদ ইউনূস বাধাহীনভাবে কাজ করতে না পারলে পদত্যাগ করবেন বলে হুঁশিয়ারি দেন।
সরকারের এক জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা জানান, ইউনূস পদত্যাগপত্রের খসড়াও প্রস্তুত করেছিলেন। উপদেষ্টারা তাকে বোঝান, তার পদত্যাগ দেশকে আরও অস্থিতিশীল করে তুলবে।
বিশ্লেষকরা মনে করছেন, রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে ঐকমত্যের অভাব, সেনাবাহিনী ও বিএনপির চাপ, এবং রাষ্ট্রীয় কাজে বিভিন্ন মহলের অসহযোগিতার কারণে অধ্যাপক ইউনূস নিজেকে বিচ্ছিন্ন ও বাধাগ্রস্ত মনে করছেন।
বিশ্লেষক মোবাশ্বার হাসান মন্তব্য করেন, “অধ্যাপক ইউনূস একজন সফল ব্যাংকার হলেও, রাজনীতিতে দৃঢ় নেতৃত্বের অভাব তার দুর্বলতা হিসেবে চিহ্নিত হচ্ছে। তিনি উপদেষ্টাদের দ্বারা অতিমাত্রায় প্রভাবিত হন।”
প্রধান উপদেষ্টার ঘনিষ্ঠ এক কর্মকর্তা জানান, সাম্প্রতিক সেনাপ্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামানের ‘এই বছরেই নির্বাচন হওয়া উচিত’—এই মন্তব্যে ইউনূস ক্ষুব্ধ হয়েছেন। তিনি মনে করছেন, একটি সুষ্ঠু নির্বাচন আয়োজনের জন্য দেশে এখনো পরিবেশ তৈরি হয়নি।
তবে বিএনপি দাবি করে আসছে, নতুন গণতান্ত্রিক ম্যান্ডেট ছাড়া দেশের ভবিষ্যৎ নির্ধারণ করা উচিত নয়। আওয়ামী লীগের কার্যক্রম নিষিদ্ধ হওয়ার পর তারা ক্ষমতায় আসার জন্য প্রস্তুত।
এর আগে অধ্যাপক ইউনূস জানিয়েছিলেন, ২০২৬ সালের জুন নাগাদ নির্বাচন আয়োজন সম্ভব হতে পারে, তবে তিনি নির্দিষ্ট সময় উল্লেখ করেননি।
বৃহস্পতিবার বৈঠকের পর তার সঙ্গে দেখা করেন জাতীয় নাগরিক পার্টির আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম। তিনি জানান, ইউনূস পদত্যাগের বিষয়টি সক্রিয়ভাবে বিবেচনা করছেন।
বর্তমান পরিস্থিতিতে অধ্যাপক ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তী সরকারের ভবিষ্যৎ নিয়ে নতুন করে প্রশ্ন উঠেছে।