নিজস্ব প্রতিবেদক:
প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের পদত্যাগের ভাবনা নিয়ে দেশের রাজনীতি ও জনমনে গভীর উদ্বেগের সৃষ্টি হয়েছে। রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, তার পদত্যাগ করলে দেশে একটি গুরুতর অস্থিরতা তৈরি হতে পারে, যার থেকে উত্তরণ সহজ হবে না। এমন শঙ্কার মধ্যেই বিশিষ্টজনেরা দ্রুত এই সংকট সমাধানে সকল পক্ষকে একসঙ্গে কাজ করার আহ্বান জানিয়েছেন।
বিশ্লেষকদের মতে, জুলাইয়ে গণ-অভ্যুত্থানের পর অন্তর্বর্তী সরকারের যে ভিত্তি তৈরি হয়েছিল, এখন সেই ভিত্তি নড়বড়ে হয়ে পড়েছে। সরকারি পক্ষ থেকে অভিযোগ উঠেছে, তাদের কাজে বাধা দেওয়া হচ্ছে। অপরদিকে বিএনপি ও জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) কিছু উপদেষ্টার পক্ষপাতের অভিযোগ এনে তাদের পদত্যাগ দাবি করেছে। এই দ্বন্দ্বের মধ্যেই অধ্যাপক ইউনূসের পদত্যাগ নিয়ে আলোচনার সূত্রপাত হয়।
প্রখ্যাত অর্থনীতিবিদ ও বিশ্লেষক অধ্যাপক ড. মাহবুব উল্লাহ একে দেশের জন্য ভয়ংকর সংকট বলে আখ্যা দিয়েছেন। তিনি বলেন, ‘‘এই মুহূর্তে যদি ড. ইউনূস পদত্যাগ করেন, তাহলে আমরা এমন এক সমস্যায় পড়বো, যার সমাধান সহজ নয়।’’
সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন)-এর সম্পাদক ড. বদিউল আলম মজুমদার বলেন, ‘‘বর্তমান রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক বাস্তবতায় ড. ইউনূসের পদত্যাগে দেশের রাষ্ট্রীয় কাঠামো দুর্বল হয়ে পড়বে। ভবিষ্যৎ প্রজন্মকেও এর মূল্য দিতে হবে।’’
বিশ্লেষকরা মনে করছেন, দেশে নতুন রাজনৈতিক স্বপ্ন ও পরিবর্তনের আশা নিয়ে যেসব শক্তি জুলাইয়ের আন্দোলনে এক হয়েছিল, এখন তাদের মধ্যেই দ্বন্দ্ব বাড়ছে। এই দ্বন্দ্বের সুযোগ নিচ্ছে প্রতিপক্ষ, যার ফলে ‘নতুন বাংলাদেশ’-এর স্বপ্ন ধূলিসাৎ হওয়ার শঙ্কা রয়েছে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক কাজী মোহাম্মদ মাহবুবুর রহমান বলেন, ‘‘সরকার রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে প্রয়োজনীয়ভাবে আলোচনা করছে না। কিছু উপদেষ্টার আচরণ থেকে মনে হচ্ছে, তারা একটি নিয়মিত সরকারের মতো আচরণ করছেন, যা বাস্তবতাকে অস্বীকার করে।’’
তিনি আরও বলেন, ‘‘নির্বাচন, গণহত্যার বিচার ও কাঠামোগত সংস্কারে সরকারের দৃশ্যমান পদক্ষেপ নেই। বরং এমন কিছু ‘নিরপেক্ষ’ উপদেষ্টাকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে, যারা অতীত ফ্যাসিস্ট সরকারের নীরব সমর্থক ছিলেন। এতে করে সরকারের কার্যক্রম নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে সন্দেহ তৈরি হচ্ছে।’’
সবাইকে ঐক্যের আহ্বান জানিয়ে বিশ্লেষকরা বলেন, দেশের স্বার্থে সরকার ও রাজনৈতিক দলগুলোকে আলোচনায় বসতে হবে। প্রয়োজন গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে সর্বদলীয় পরামর্শ এবং ক্ষমতার কাঠামোয় ভারসাম্য আনা। সেইসঙ্গে সরকারের গুরুত্বপূর্ণ পদে এমন মানুষদের রাখতে হবে, যারা অতীতে ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে সোচ্চার ছিলেন।
পরিস্থিতি ক্রমেই জটিল রূপ নিচ্ছে। এ অবস্থায় প্রধান উপদেষ্টার অবস্থান নিয়ে অনিশ্চয়তা বাড়লে দেশ আরও বড় সংকটে পড়তে পারে—এমনটাই আশঙ্কা দেশজুড়ে।