১৭ই জুন, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ | ৩রা আষাঢ়, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ | ২১শে জিলহজ, ১৪৪৬ হিজরি

“ভাঙ্গুড়ায় যৌথ সম্পত্তিতে ভবন নির্মাণ বন্ধ করলো পৌরসভা” বিএনপি নেতাদের বিরুদ্ধে চাঁদাবাজির পাল্টা অভিযোগ

খালিদ হোসেন হৃদয়, ভাঙ্গুড়া প্রতিনিধি

পাবনার ভাঙ্গুড়া পৌরসভার কালিবাড়ী বাজার এলাকায় যৌথ মালিকানাধীন বসত বাড়িতে জোর পূর্বক একক ভাবে বহুতল ভবন নির্মাণের অভিযোগে ২০ মে সকালে নির্মাণ কাজ বন্ধ করে দিয়েছে পৌর প্রশাসন। এ ঘটনায় রাজনৈতিক রূপ নিয়েছে পরিস্থিতি। অভিযুক্ত ব্যক্তির স্ত্রীর পাল্টা অভিযোগ স্থানীয় বিএনপি নেতাকর্মীরা তার কাছে চাঁদা দাবি করেছিলেন। পরে কিছু টাকা দিয়েছি, বাকি টাকা না দেওয়ায় রাজনৈতিক প্রভাব খাটিয়ে কাজ বন্ধ করে দিয়েছে।

স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, কালিবাড়ী বাজার এলাকায় একটি যৌথ বসত বাড়ি একক ভাবে ভবন নির্মাণ শুরু করেন আসরাফুল আলম আরিফ নামের এক ব্যক্তি। আরিফ তার বোনদের সম্মতি ও অংশীদারিত্ব উপেক্ষা করে কাজ চলমান রাখায় পরিবারিক বিরোধের সৃষ্টি হয়। পরে ভুক্তভোগী ৪ বোন ও তাদের মা স্থানীয় গণ্যমান্য ও রাজনৈতিক নেতাদের সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমে সমাধানের চেষ্টা করেন। সমাধান না পেয়ে ভুক্তভোগী ৪ বোন ও তাদের মায়ের যৌথ স্বাক্ষরে ২০ ফেব্রুয়ারি জেলা প্রসাশক, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা, উপজেলা সহকারি কমিশনার (ভূমি), ভাঙ্গুড়া থানা অফিসার ইনচার্জ ও ভাঙ্গুড়া সেনা ক্যাম্প কমান্ডার বরাবর একটি লিখিত অভিযোগ দেন। এতে সাময়িক ভাবে কাজ বন্ধ হলেও স্থায়ী সমাধান না পেয়ে তারা ৫ মে আবারো ভাঙ্গুড়া পৌরসভায় আরেকটি লিখিত অভিযোগ দেন। অভিযোগটি পেয়ে পৌর প্রশাসন ২০ মে সকালে কাজ বন্ধ করে দেন। কাজ বন্ধের পর আরিফের স্ত্রী এক বিস্ফোরক অভিযোগ তুলে বলেন, ৫ মে স্থানীয় বিএনপি নেতা রফিকুল ইসলামের নেতৃত্বে মানিক নামের একজন নির্মাণ কাজ চালিয়ে যেতে ২০ হাজার টাকা চাঁদা দাবি করেন। এ ঘনটায় তিনি ২০ মে সন্ধায় ভাঙ্গুড়া থানায় একটি চাঁদাবাজির লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন।

যৌথ সম্পত্তির অংশীদার সালমা খাতুন বলেন, ২০১৫ সালে আমার বাবার মৃত্যুর পর আমার ভাই আরিফ এর কাছ থেকে বাবার সম্পত্তি বুঝিয়া চাইলে স্থানীয়ভাবে একটি সালিশ বৈঠক হয়। সালিশে আমার ভাই আরিফের স্ত্রী মাকসুদা পারভীন ভাড়াটিয়া গুন্ডা দ্বারা আমাদেরকে মারধর করে বাড়ি থেকে বের করে দেন। বর্তমানে আবারও আমার ভাই আমার বাবার ঘর ভেঙ্গে নতুন করে বহুতল ভবন নির্মাণ করছে। এই বিষয়টা নিয়ে পৌর বিএনপি’র সভাপতি রফিকুল ইসলামের কাছে অভিযোগ করি। তিনি সালিশের জন্য একাধিকবার সালিশের জন্য তারিখ দিলেও আমার ভাই আরিফ উপস্থিত হয় না। পরে রফিকুল ইসলামের পরামর্শে পৌর প্রশাসক ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বরাবর ৫ মে একটি লিখিত অভিযোগ দেই। অভিযোগের ভিত্তিতে পৌরসভা কতৃপর্ক্ষ নির্মাণাধীন কাজ বন্ধ করে দেন।

এ বিষয়ে আরিফের স্ত্রী মাকসুদা পারভীন তার ননদ কে মারধরের বিষয় অস্বীকার করে বলেন, আমার ননদরা এই সম্পত্তির উপর পাবনা কোটে একটি মামলা দায়ের করে ১৪৪ ধারা জারি করেছিল। আমরা হাইকোর্টে রিট করলে হাইকোর্ট ঘর নির্মাণের অনুমতি দেন। পরে আমার ননদেরা আবারো পৌরসভায় লিখিত অভিযোগ দিলে পৌর কর্তৃপক্ষ কাজ বন্ধ করে দেন। তিনি আরো বলেন, নির্মাণ কাজ চালু রাখার জন্য কিছু লোক চাঁদা চেয়েছিল আমি তাদের নামে থানায় অভিযোগ দিয়েছি।

এ প্রসঙ্গে ভাঙ্গুড়া পৌর বিএনপির সভাপতি রফিকুল ইসলাম বলেন, আরিফ ও তার স্ত্রী মানিক নামের এক ব্যক্তিকে সাথে নিয়ে আমার কাছে আসে তখন আমি আরিফের বোনদেরসহ সালিশের মাধ্যমে সমাধানের চেষ্টা করি। সমাধান না হওয়ায় পৌরসভায় অভিযোগ দিতে পরামর্শ দেই। তারা ৫ মে পৌরসভায় লিখিত অভিযোগ দিলে পৌরসভা ২০ মে সকালে আইনি ব্যবস্থা নিয়ে কাজ বন্ধ করে দেয়। কাজ বন্ধ হওয়ার পরে আরিফের স্ত্রী আমাদের উপর ক্ষুব্ধ হয়ে ২০ মে সন্ধায় থানায় একটি মিথ্যা চাঁদাবাজির অভিযোগ দায়ের করেন। এ ঘটনায় বিএনপির কেউ চাঁদা চেয়েছে এমন অভিযোগ সম্পূর্ণ মিথ্যা ও ভিত্তিহীন। মানিক ঐ নারীর সম্পর্কে ভাই তাই মানিক ব্যক্তিগত ভাবে কোন সুবিধা নিয়ে থাকলে তার দায় আমরা নেবো কেন?

এ বিষয়ে ভাঙ্গুড়া পৌর বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক মো: মোতালেব হোসেন বলেন, একটি মহল বিএনপিকে বিতর্কিত করার উদ্দেশ্যে চাঁদাবাজির অভিযোগ দিয়েছে। আমি ও আমার পৌর বিএনপি এর তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছি।

চাঁদা নেওয়া অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে মানিক বলেন, আরিফের বোনদের ম্যানেজ করার জন্য খরচ বাবদ ১০ হাজার টাকা দিয়েছিল আমি সেই টাকা দিয়ে তার বোনদের বাড়িতে ফল-মুল নিয়ে একাধিক বার আরিফের প্রতিনিধি হয়ে তাদেরি সমস্যা সমাধানের জন্য গিয়েছিলাম। এটা কে চাঁদা বলেনা।

এ বিষয়ে ভাঙ্গুড়া পৌর সভার সহকারি প্রকৌশলী মো: খোরশেদ আলম বলেন, লিখিত অভিযোগের ভিত্তিতে পৌর প্রসাশক আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করেছেন।

ভাঙ্গুড়া থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) শফিকুল ইসলাম জানান, চাঁদাবাজির অভিযোগটি তদন্তাধীন রয়েছে। তদন্ত শেষে প্রয়োজনীয় আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

ফেসবুকে আমরা

মন্তব্য করুন

guest
0 Comments
Oldest
Newest Most Voted
Inline Feedbacks
View all comments

সর্বাাধিক পঠিত নিউজ

Scroll to Top