২০শে আগস্ট, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ | ৫ই ভাদ্র, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ | ২৬শে সফর, ১৪৪৭ হিজরি

প্রবাসে অস্বাভাবিক মৃত্যু বাড়ছে, গড় বয়স মাত্র ৩৭: মৃত্যুর প্রকৃত কারণ জানতে চায় পরিবারগুলো

নিজস্ব প্রতিনিধি:

বাংলাদেশি প্রবাসী কর্মীদের মৃত্যুর গড় বয়স মাত্র ৩৭ বছর—একটি উদ্বেগজনক পরিসংখ্যান উঠে এসেছে সম্প্রতি প্রকাশিত এক গবেষণায়। ২০১৭ থেকে ২০২১ সালের অক্টোবর পর্যন্ত সময়ের ৫৫৪ জন মৃত কর্মীর তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, তাদের মধ্যে ৩১ শতাংশের মৃত্যু অস্বাভাবিকভাবে হয়েছে। দুর্ঘটনায় মারা গেছেন ১৬ শতাংশ এবং আত্মহত্যা করেছেন ১৫ শতাংশ। বাকিরা স্বাভাবিক মৃত্যু ও বিভিন্ন রোগে মারা গেছেন। তবে অনেক ক্ষেত্রেই মৃত্যুর প্রকৃত কারণ নিয়ে সন্দিহান পরিবারগুলো সন্তুষ্ট নয়।

রাজধানীতে আয়োজিত এক সংলাপে রামরু (রিফিউজি অ্যান্ড মাইগ্রেটরি মুভমেন্টস রিসার্চ ইউনিট) এবং জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের উদ্যোগে এই গবেষণা প্রতিবেদন তুলে ধরা হয়। এতে জানানো হয়, শুধু ২০২৪ সালেই দেশে ফিরেছে ৪,৮১৩ প্রবাসী কর্মীর মরদেহ।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, কর্মীদের বিদেশে পাঠানোর আগে স্বাস্থ্য পরীক্ষা করা হলেও অনেকেই সেখানে গিয়ে গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়ছেন। অধিকাংশ ক্ষেত্রে, মৃত্যুসনদে যে কারণ দেখানো হয় তা বাস্তবের সঙ্গে মেলে না। অনেক মৃতদেহে আঘাতের চিহ্ন থাকার পরও সেটি স্বাভাবিক মৃত্যু হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে।

রামরুর ভারপ্রাপ্ত নির্বাহী পরিচালক তাসনিম সিদ্দিকী বলেন, বিভিন্ন দেশের মৃত্যুসনদে যে তথ্য দেওয়া হয়, তা অস্পষ্ট ও ভিন্ন রকমের। অনেক সময় মৃত্যুর প্রকৃত কারণ বোঝা যায় না। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার গাইডলাইন অনুযায়ী統 একটি統 একক মানের মৃত্যুসনদ চালুর প্রস্তাবও এসেছে।

সিনিয়র সচিব নেয়ামত উল্ল্যা ভূঁইয়া বলেন, দেশে মরদেহ আসার পর ময়নাতদন্ত সম্ভব হলেও, এতে সংশ্লিষ্ট দেশগুলোর সঙ্গে কূটনৈতিক টানাপড়েন তৈরি হতে পারে। তবু প্রবাসী কর্মীদের অধিকারের বিষয়টি উপেক্ষা করা উচিত নয়।

মরদেহের সঙ্গে পরিবারের অনাস্থার বিষয়টি প্রকট। গবেষণায় বলা হয়েছে, ৪৮ শতাংশ পরিবারই মৃত্যুসনদে দেওয়া তথ্য বিশ্বাস করে না। এজন্য বিমানবন্দরে হিমাগার নির্মাণ ও দেশে এসে ময়নাতদন্তের বাধ্যবাধকতা আরোপের সুপারিশ করা হয়।

অনুষ্ঠানে ফরেনসিক বিশেষজ্ঞ কামরুল হাসান বলেন, অল্প বয়সে মৃত্যুর প্রকৃত কারণ জানতে হলে প্রতিটি মরদেহের ময়নাতদন্ত হওয়া উচিত। অন্যদিকে, মানবাধিকার কমিশনের সাবেক সদস্য সেলিম রেজা জানান, মধ্যপ্রাচ্যে অঙ্গপ্রত্যঙ্গ বাণিজ্যের অভিযোগও রয়েছে, যা নিয়ে সতর্ক থাকার পরামর্শ দেন তিনি।

প্রবাসীদের মৃত্যুর প্রকৃত কারণ উদঘাটন এবং বিদেশে মানবিক ও নিরাপদ শ্রম পরিবেশ নিশ্চিত করতে এখনই জরুরি পদক্ষেপ গ্রহণের আহ্বান জানিয়েছেন উপস্থিত বক্তারা। না হলে মানবসম্পদ রপ্তানির অন্যতম বড় এই খাতে আস্থা হারাতে পারে জনগণ।

ফেসবুকে আমরা

মন্তব্য করুন

guest
0 Comments
Oldest
Newest Most Voted
Inline Feedbacks
View all comments

সর্বাাধিক পঠিত নিউজ

Scroll to Top