২৭শে আগস্ট, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ | ১২ই ভাদ্র, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ | ৪ঠা রবিউল আউয়াল, ১৪৪৭ হিজরি

ক্ষুধার্ত গাজাবাসী: ওদের আহাজারী কারা দেখবে?

ইমতিয়াজ উদ্দিন:

জাতিসংঘের সাম্প্রতিক সতর্কবার্তা নিঃসন্দেহে বিশ্ব বিবেককে নাড়া দিয়েছে—গাজা এখন বিশ্বের সবচেয়ে খাদ্যসংকটপূর্ণ ও দুর্ভিক্ষ-প্রবণ অঞ্চল। শুধু পরিসংখ্যান নয়, প্রতিটি সংখ্যার পেছনে লুকিয়ে আছে হাজারো কঙ্কালসার শিশু, প্রান্তিক নারী ও বৃদ্ধের করুণ আর্তি। কিন্তু এই সংকট কোনো আকস্মিক দুর্যোগ নয়, এটি মানবসৃষ্ট এক নির্মম ত্রাসজাল, যেখানে রাজনীতি, যুদ্ধ ও নিষ্পেষণের বলি হচ্ছে নিরীহ বেসামরিক জনগণ। প্রশ্ন হলো, গাজার এই দুঃসহ যন্ত্রণা দেখার দায়িত্ব কার?

মানবিক সংকট: যখন সহায়তা ট্রাকই যুদ্ধের অস্ত্র হয়

জাতিসংঘের তথ্যমতে, ইসরায়েলের নিষেধাজ্ঞার কারণে গাজায় সাহায্য প্রবেশে মারাত্মক বাধা সৃষ্টি হচ্ছে। অনুমোদিত ৯০০ ট্রাকের মধ্যে মাত্র ৬০০টি প্রবেশ করতে পেরেছে, আর তাও শুধু ময়দা—যা রান্না ছাড়া অখাদ্য। কিন্তু গাজার ১০০% মানুষই এখন দুর্ভিক্ষের ঝুঁকিতে। এখানে মানবিক সহায়তা রাজনৈতিক আলোচনার চিপ হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে, যা ন্যূনতম নৈতিকতাকেও প্রশ্নবিদ্ধ করে।

বাস্তুচ্যুতি ও ধ্বংসস্তূপে জীবন

গত দুই সপ্তাহে আরও ২ লাখ মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়েছে। যুদ্ধ, বোমাবর্ষণ ও অবরোধের কারণে গাজার অবকাঠামো প্রায় ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে। হাসপাতাল, স্কুল, পানির উৎস—কিছুই আর নিরাপদ নয়। এমন পরিস্থিতিতে খাদ্য ও চিকিৎসা সরবরাহ বন্ধ রাখা মানে গণহত্যাকে tacitly সমর্থন করা। জর্ডানের গুদামে মাসের প্রয়োজনীয় ত্রাণ মজুদ থাকলেও সীমান্ত বন্ধ থাকায় তা পৌঁছাচ্ছে না।

আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের নিষ্ক্রিয়তা: নীরবতা কি ষড়যন্ত্র?

জাতিসংঘ বারবার সতর্ক করলেও আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের পদক্ষেপ অত্যন্ত ধীরগতি ও অকার্যকর। মার্চ থেকে সাহায্য বন্ধ থাকায় অপুষ্টি ও মৃত্যুহার ভয়াবহ হারে বেড়েছে। বিশ্ব নেতারা কি শুধু বিবৃতি দিয়েই দায়িত্ব শেষ করবেন? নাকি গাজার মানুষের ভাগ্য নির্ধারণে তাদেরও কোনো রাজনৈতিক হিসাব কাজ করছে?

নৈতিক দায়িত্ব ও ভবিষ্যৎ

গাজার সংকট শুধু একটি ভূখণ্ডের সমস্যা নয়, এটি সমগ্র মানবতার জন্য একটি নৈতিক পরীক্ষা। ইতিহাস প্রশ্ন করবে: যখন গাজার শিশুরা ক্ষুধায় কাঁদছিল, তখন বিশ্ব কী করেছিল? মানবাধিকারের নামে যারা বুলেটের বদলে রুটি পাঠাতে পারেনি, তাদের নৈতিক জায়গাটি কোথায়?

গাজার মানুষের আহাজারি আজ আকাশে-বাতাসে মিশে যাচ্ছে। কিন্তু কেউ কি তা শুনবে? নাকি ক্ষুধার্তের কান্না রাজনীতির দেয়ালে বাধা পড়ে স্তব্ধ হয়ে যাবে? সময় এসেছে বিশ্বকে এই প্রশ্নের উত্তর দিতে।

লেখক: জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থী

ফেসবুকে আমরা

মন্তব্য করুন

guest
0 Comments
Oldest
Newest Most Voted
Inline Feedbacks
View all comments

সর্বাাধিক পঠিত নিউজ

Scroll to Top