২০শে জুন, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ | ৬ই আষাঢ়, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ | ২৪শে জিলহজ, ১৪৪৬ হিজরি

শিবগঞ্জ হাসপাতালে হাসপাতাল স্টাফের সহযোগিতায় দাদালের দৌরাত্ম চরমে

মোহাঃ রকিব উদ্দীন, চাঁপাইনবাবগঞ্জ প্রতিনিধি:

চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলার শিবগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স এখন দালালদের অভয়ারণ্যে পরিণত হয়েছে। বিভিন্ন ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারের এসব দালালদের সাথে হাসপাতালের স্টাফদের রয়েছে সখ্যতা। টাকার গন্ধ্যে চিকিৎসার নামে ব্যক্তিগত ক্লিনিক ব্যাবসায় নিয়োজিত হাসপাতালে দালাল চক্রের সদস্যরা। নানা প্রলোভন দেখিয়ে স্বল্প খরচে বিভিন্ন পরীক্ষা নিরীক্ষা করে দেওয়ার নাম করে রোগীদের ক্লিনিকে নিয়ে গিয়ে নানা বিভ্রান্তিতে পড়েন গ্রাম থেকে আসা সহজ সরল মনের অসহায় রোগীরা।

মানুষের মৌলিক চাহিদার মধ্যে অন্যতম ও গুরুত্বপূর্ণ চাহিদা হচ্ছে স্বাস্থ্য সেবা। আর স্বাস্থ্যসেবা নিতে সাধারণ রোগীরা ছুঁটে যান নিকটস্থ হাসপাতালে। চিকিৎসকেরাও রোগীদের সেবা দেন তাদের জ্ঞান ও দক্ষতা দিয়ে। এতো দূর পর্যন্ত ঠিক আছে, কিন্তু সমস্যা হচ্ছে সঠিক চিকিৎসা সহ বিভিন্ন প্রকার শারীরিক পরীক্ষা-নিরীক্ষা নিয়ে। একজন অসহায় ও গরীব রোগী বাইরে কোন ক্লিনিক বা মেডিকাল সেন্টারে চিকিৎসা নিতে সাধ্যের বাইরে। তাই বাধ্য হোন উপজেলা সরকার হাসপাতালের দ্বারপ্রান্তে। কিন্তু এখানেও সমস্যা রয়েছে। হাসপাতালে শারীরিক বিভিন্ন পরীক্ষা-নিরীক্ষা দেয়ার কথা থাকলেও নাম মাত্র ১/২ টি পরীক্ষা করে অসহায় ও গরীব রোগীদের পাঠিয়ে দেয়া হয় বিভিন্ন ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারের। এছাড়াও বিভিন্ন ক্লিনিকের ছেড়ে রাখা দালালদের তো দৌরাত্ম রয়েছে। এ যেনো দালালদের অত্যাচারে অতিষ্ঠ রোগী ও তার স্বজনরা।এমন-ই ঘটনা ঘটছে চাঁপাইনবাবগঞ্জে শিবগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে।

এ যেন রোগী ভাগানোর এক মহোৎসব। বিভিন্ন প্রলোভন দেখিয়ে বেসরকারি হাসপাতাল বা ক্লিনিকে রোগী পাঠানো, পরীক্ষা-নিরীক্ষার জন্য ডায়াগনস্টিক সেন্টারে নিয়ে যাওয়া, প্রয়োজনীয় ওষুধপত্রের জন্য ফার্মেসি—সবই নির্ধারিত করা রয়েছে তাদের। শিবগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে পা ফেললেই রোগী ও স্বজনদের মুখোমুখি হতে হয় দালালের। শুধু পুরুষ নয়, রোগীর মন ভোলাতে রয়েছে নারী দালালও।
গত দুই দিন সকালে সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, গ্রাম থেকে আসা দরিদ্র ও অসহায় রোগী এবং তাদের স্বজনকে নানা প্রতিশ্রুতি দিচ্ছেন দালালচক্রের সদস্যরা। প্রবেশদ্বার থেকে ভেতরের জরুরি বিভাগের দরজা পর্যন্ত পুরো হাসপাতালে দালালদের অবাধ বিচরণ ও আধিপত্য। স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ঘিরে অর্ধশতাধিক দালালের সক্রিয় উপস্থিতি দেখা গেছে। যাদের বেশির ভাগের বয়স ২৫ থেকে ৪৫ বছর। এছাড়াও হাসপাতালের কিছু কর্মকর্তা-কর্মচারীও নাম শোনা যায় দালাল চক্রের সাথে জড়িত বলে। হাসপাতালের চারপাশের বেসরকারি হাসপাতাল, ক্লিনিক, ডায়াগনস্টিক সেন্টার ও ফার্মেসির মালিকরা এসব দালালকে নিয়মিত দেখভাল করেন বলে অভিযোগ রোগীদের।

এব্যাপারে ধোবড়া এলাকার সাথী বেগম, সোনামসজিদ এলাকার বিউটি বেগম, মির্জাপুর এলাকার জেসমিন, গোলাপবাজার এলাকা সোমা বেগম, আমরা গরিব মানুষ, উপজেলা হাসপাতালে আসলে ডাক্তার দেখালে কিছু পরীক্ষা-নিরীক্ষা দেন। সরকারি পরীক্ষার করার স্লিপ নিতে গেলে তারা বলেন আজকে কোন পরীক্ষা হবে না। সরকারি পরীক্ষা-নিরীক্ষা হবে না বলে নিজ বাড়িতে ফোন দিয়ে কথা বলছিলাম। এমন সময় এক মহিলা এসে পরিচয় দিয়ে বলেন আমি মেডিকেলে স্টাফ। এখানে আল্টার মেশিন নষ্ট হয়ে গেছে। তাই আল্টা করে পাবেন না। চলেন, বাইরে থেকে আল্ট্রা করে নিয়ে আসি।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের এক কর্মচারী বলেন, ‘রোগী ভাগানোর ওপর দৈনিক, সাপ্তাহিক ও মাসিক ভিত্তিতে কমিশন পান এসব দালাল। দালালদের মধ্যে প্রতিযোগিতাপূর্ণ মনোভাব তৈরি করতে দেওয়া হয় লোভনীয় সব প্রস্তাব। যেসব বিভাগে রোগী বেশি, অস্ত্রোপচারের জন্য বেশি টাকার প্রয়োজন হয়, সেসব রোগী ভাগাতে দালালদের তৎপরতা বেশি দেখা যায়।
এদিকে, মেডিকেল টেকনোলোজিষ্ট (ফিজিওথেরাপীস) রওশন আরা বলেন, দু’দিনের মোট ৪টি আল্ট্রাসনোগ্রাফীর স্লিপ কেটেছি। আমাকে আল্ট্রা রুম থেকে জানানো হয়েছে আজ কোন আল্ট্রা হবে না। কেনো হবে সে ব্যাপারে আমি কিছু বলতে পারবো না। আমাকে যেভাবে বলা হয়েছে, আমি সেভাবে রোগীদের বলছি।

আল্ট্রাসনোগ্রাফী রুমে দায়িত¦রত কর্মকর্তা উপ-সহকারি কমিউনিটি মেডিকেল অফিসার ডাঃ শাপলা বলেন, কাউন্টার থেকে ১২টা পর্যন্ত টিকিট ছাড়ে, যতক্ষণ আল্ট্রা করার রোগী থাকবে ততক্ষণ আল্ট্রা করা যাবে। কিন্তিু আমাকে আরএমও স্যার দুপুর সাড়ে ১২টায় রুম বন্ধ করে দিতে বলায়, তা আমি করেছি।

তবে, এবিষয়ে আরএমও আজিজুর রহমান সুইটের সাথে যোগাযোগে চেষ্টা করা হলেও তাকে পাওয়া যায়নি হাসপাতালে।

শিবগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা মোঃ কামাল উদ্দিন বলেন, এই উপজেলায় প্রায় ৭ লক্ষ জনসংখ্যা। আমাদের হাসপতালে ২৪ ঘন্টা রোগীদের সেবা দিয়ে আসছে। সকল রোগী পরীক্ষা-নিরীক্ষা সরকারি নিয়ম মাধ্যমে করা হয়। আল্ট্রাসনোগ্রাফী সাপ্তাহিক ২দিন করা হয়। সোমাবার ও বুধবার। আল্ট্রা এই দু’দিন দুপুর ১টা পর্যন্ত যত রোগী হয়। সে সব রোগীর আল্ট্রা করা প্রয়োজন, সে সব রোগীর আল্ট্রা হবে হবে। এতে সংখ্যা যাই হোক। কিন্তু সময়ে আগে যদি আল্ট্রা রুম বন্ধ বা আল্ট্রা করা বন্ধ করে দেয় তাহলে তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।

এছাড়া মেডিকেলে দালালদের বিষয়ে যে অভিযোগ রয়েছে, দালাল হচ্ছে দুই রকম। একটি অভ্যন্তরী দালাল অর্থাৎ আমার হাসপাতালে অন্যটি হচ্ছে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে আশপাশে বেড়ে উঠঅ ক্লিনিকের।

ফেসবুকে আমরা

মন্তব্য করুন

guest
0 Comments
Oldest
Newest Most Voted
Inline Feedbacks
View all comments

সর্বাাধিক পঠিত নিউজ

Scroll to Top