জাহেদুল ইসলাম আল রাইয়ান:
সোনালি দুপুরের কোমল আলো গায়ে মেখে আজ যেন আল-আজহারের প্রাচীন প্রাঙ্গণও নিঃশব্দে হাসছে। হাজার বছরের ঐতিহ্যে গাঁথা এই বিদ্যাপীঠের ইসলামি থিওলজি বিভাগে ২১শে জুন, শনিবার, শেষ হলো এক দীর্ঘ একাডেমিক যাত্রার আনুষ্ঠানিক পাঠ। পরীক্ষার শেষ ঘণ্টা বাজতেই করিডোরজুড়ে নেমে এলো মুক্তির উচ্ছ্বাস, আকাশ ছোঁয়া আনন্দ আর চিরচেনা দেশমাতৃকার টান।
সেদিন আর কেবল এক পরীক্ষা শেষ হলো না—সেদিন যেন শেষ হলো কষ্ট, পরিশ্রম আর নিরব অধ্যবসায়ের এক অধ্যায়। ছাত্রদের চোখে-মুখে হাসির আলো, হৃদয়ে ছুটির সুবাতাস। তিন মাসের ছুটি যেন এক আশীর্বাদের মত এসে ধরা দিয়েছে প্রত্যেকের জীবনে। ব্যাগ গোছানো, টিকিট কাটার ব্যস্ততা—সবকিছুর মাঝে যেন লুকিয়ে আছে এক দীর্ঘ প্রতীক্ষার অবসান।
বিশ্বের নানা প্রান্ত থেকে আসা ছাত্রদের ভিড়ে বাংলাদেশি শিক্ষার্থীরাও যেন আজ একটু বেশিই আবেগাপ্লুত। অনেকেই বছরজুড়ে অপেক্ষা করেছে এই দিনটির জন্য—দেশে ফেরার, পরিবারের সান্নিধ্যে ফেরার, মায়ের হাতের খাবারে তৃপ্তি খোঁজার। ছাত্রদের কারও মুখে চাপা আনন্দের হাসি, কারও চোখে ঝিলিক দেওয়া সোনালি স্বপ্ন।
শিক্ষার্থীরা বললেন, “কয়েক মাস পর মা’কে জড়িয়ে ধরবো, ছোট ভাইটা হয়তো ছুটে আসবে বুকে। দেশের বাতাস, গ্রামের মসজিদ, সন্ধ্যার আজান—সব যেন চোখের সামনে ভেসে উঠছে।”
আল-আজহারের ঐতিহাসিক গেটের নিচে দাঁড়িয়ে কেউ তুলছে স্মৃতির ছবি, কেউ বন্ধুদের নিয়ে হাসির ফোয়ারায় ভিজে যাচ্ছে একসাথে। ছবিগুলো কেবল মুহূর্তের নয়, সেগুলো হয়ে থাকবে জীবনের গোপন অ্যালবামে—যেখানে একদিন দেখা যাবে আজকের হাসিমাখা মুখ, চোখের ছলছল স্মৃতি।
এই বিদ্যাপীঠ কেবল একটি বিশ্ববিদ্যালয় নয়—এ এক আত্মার বিদ্যালয়, চিন্তার আলো, হৃদয়ের প্রহরী। এখানকার প্রতিটি ক্লাস, প্রতিটি বক্তৃতা, এমনকি কঠিন পরীক্ষার রাতগুলোও হয়ে উঠেছে আত্মপ্রসাদে পূর্ণ স্মৃতি। আজ সেই অধ্যায় শেষ করে সবাই ছুটছে এক নতুন সূর্যোদয়ের দিকে।
ইসলামি থিওলজি বিভাগের আঙিনায় আজ যেন সময় থেমে গেছে এক মুহূর্তের জন্য। পায়ের নিচে আল-আজহারের পাথুরে পথ, মাথার উপর নীল আকাশ, আর মাঝখানে দাঁড়িয়ে থাকা হাজারো ছাত্র—সবাই একসাথে বলছে: বিদায়, আবার দেখা হবে।