নিজস্ব প্রতিনিধি:
ঢাকার ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে বৃহস্পতিবার অনুষ্ঠিত জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের দ্বিতীয় পর্যায়ের নবম দিনের আলোচনায় রাষ্ট্রপতির ক্ষমা প্রদর্শনের ক্ষমতা সংশোধন এবং বিচার বিভাগ বিকেন্দ্রীকরণে সব রাজনৈতিক দল ঐকমত্য পোষণ করেছে। কমিশনের সহ-সভাপতি অধ্যাপক আলী রীয়াজ এক প্রেস ব্রিফিংয়ে জানান, রাষ্ট্রপতির ক্ষমা প্রদর্শন সংক্রান্ত সংবিধানের ৪৯নং অনুচ্ছেদ সংশোধন করে ভুক্তভোগী পরিবারের মতামত নেওয়া বাধ্যতামূলক করা হবে।
অধ্যাপক রীয়াজ বলেন, “গত কয়েক দশকে রাষ্ট্রপতির এই ক্ষমতার ব্যাপক অপব্যবহার হয়েছে। নতুন প্রস্তাবে দণ্ড মওকুফের ক্ষেত্রে আইনগত মানদণ্ড, নীতি ও পদ্ধতি অনুসরণের বাধ্যবাধকতা রাখা হবে।” সংশোধিত প্রস্তাবে উল্লেখ করা হয়েছে, ‘যেকোনো দণ্ডের মার্জনা, বিলম্বন ও বিরাম মঞ্জুর করার এবং দণ্ড মওকুফ, স্থগিত বা হ্রাস করার ক্ষমতা রাষ্ট্রপতির থাকবে, তবে তা আইন দ্বারা নির্ধারিত পদ্ধতিতে প্রয়োগ করতে হবে।’
বিচার বিভাগের বিকেন্দ্রীকরণ প্রসঙ্গে কমিশন জানায়, সুপ্রিম কোর্টের মূল আসন ঢাকায় থাকলেও প্রতিটি বিভাগীয় শহরে হাইকোর্টের স্থায়ী বেঞ্চ প্রতিষ্ঠার বিষয়ে ঐকমত্য হয়েছে। এ জন্য সংবিধানের ১০০নং অনুচ্ছেদ সংশোধন করা হবে। নতুন ব্যবস্থায় প্রধান বিচারপতি প্রতিটি বিভাগে এক বা একাধিক স্থায়ী বেঞ্চ গঠন করতে পারবেন, যা আগের সার্কিট বেঞ্চ পদ্ধতির পরিবর্তে স্থায়ী রূপ পাবে।
বৃহস্পতিবারের আলোচনায় বিএনপি, জামায়াতে ইসলামী, জাতীয় নাগরিক পার্টি, সিপিবিসহ ৩০টি রাজনৈতিক দলের প্রতিনিধিরা অংশ নেন। কমিশন ইতিমধ্যে সংবিধানের ৭০নং অনুচ্ছেদ, সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতিত্ব, নির্বাচনী এলাকা পুনর্নির্ধারণসহ বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ ইস্যুতে আলোচনা সম্পন্ন করেছে।
জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের লক্ষ্য ‘জুলাই ঘোষণাপত্র’ প্রণয়নের মাধ্যমে রাষ্ট্রীয় সংস্কারের রূপরেখা নির্ধারণ করা। আগামী ৭ জুলাই পরবর্তী আলোচনা অনুষ্ঠিত হবে বলে জানানো হয়েছে। বিশ্লেষকরা মনে করছেন, রাষ্ট্রপতির ক্ষমা প্রদর্শনের ক্ষমতা সংস্কার এবং বিচার বিভাগের বিকেন্দ্রীকরণ বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক কাঠামোকে শক্তিশালী করবে।