নিজস্ব প্রতিনিধি:
কুমিল্লার মুরাদনগর উপজেলায় বৃহঃস্পতিবারে এক নৃশংস গণপিটুনিতে মা ও তার দুই সন্তান নিহত হওয়ার ঘটনায় চাঞ্চল্য ছড়িয়েছে। স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, এই হত্যাকাণ্ডের পরিকল্পনা করা হয়েছিল আগের রাতের একাধিক বৈঠকে, যার নেতৃত্ব দিয়েছিলেন কড়ইবাড়ী গ্রামের বাছির মিয়া। পুলিশ এখন তাকে এবং অন্যান্য সন্দেহভাজনদের খুঁজছে। ঘটনার পর থেকে গ্রামের পুরুষরা বাড়িঘর ছেড়ে পালিয়েছেন বলে জানা গেছে।
ঘটনার সূত্রপাত হয়েছিল একটি মোবাইল চুরির ঘটনাকে কেন্দ্র করে। স্থানীয় মাদক ব্যবসায়ী রোকসানা বেগম রুবির জামাই মনির হোসেনের সহযোগী মারুফ একটি মোবাইল ফোন চুরি করলে, ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান শিমুল বিল্লাল ও সদস্য বাচ্চু মিয়াকে হেনস্তা করে রুবি। এ ঘটনাকে কেন্দ্র করে দীর্ঘদিনের জমে থাকা ক্ষোভ প্রকাশ পায়। বুধবার রাতে গ্রামে একাধিক বৈঠক ডাকা হয়, যেখানে রুবি ও তার পরিবারকে গণপিটুনিতে হত্যার পরিকল্পনা করা হয়।
বৃহস্পতিবার সকালে রুবি, তার মেয়ে জোনাকি ও ছেলে রাসেলকে নির্মমভাবে পিটিয়ে হত্যা করা হয়। রুবির আরেক মেয়ে রুমা আক্তার গুরুতর আহত অবস্থায় বেঁচে গেছেন। নিহত রাসেলের স্ত্রী মীম আক্তার অভিযোগ করেছেন, “বাছির মিয়া আগের রাতে আমার স্বামীকে ফোন করে হুমকি দিয়েছিল। তারা পরিকল্পনা করেই আমার পরিবারকে হত্যা করেছে।”
স্থানীয়রা জানিয়েছেন, রুবির পরিবার দীর্ঘদিন ধরে মাদক ব্যবসার সাথে জড়িত ছিল এবং এলাকাবাসীর বিরুদ্ধে একাধিক মামলা করেছিল। তবে অনেকেই এই হত্যাকাণ্ডের নিন্দা জানিয়ে তদন্তের দাবি করেছেন।
পুলিশ জানিয়েছে, তারা ঘটনার সিসিটিভি ফুটেজ পরীক্ষা করছে এবং মাস্টারমাইন্ডসহ সকল সন্দেহভাজনকে খুঁজছে। বাঙ্গরা বাজার থানার ওসি মাহফুজুর রহমান বলেন, “আমরা বিভিন্ন দিক থেকে তদন্ত করছি। দোষীদের গ্রেফতারের জন্য কাজ চলছে।”
এদিকে, ঘটনায় জড়িত থাকার আশঙ্কায় ইউপি চেয়ারম্যান শিমুল বিল্লাল, সদস্য বাচ্চু মিয়া এবং স্থানীয় কয়েকজন প্রভাবশালী ব্যক্তি আত্মগোপনে রয়েছেন বলে জানা গেছে। গ্রামের অধিকাংশ বাড়িতে এখন শুধু নারী ও শিশুরা রয়েছেন।
ময়নাতদন্ত শেষে নিহতদের লাশ পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। এই নৃশংস ঘটনায় এলাকায় তীব্র উত্তেজনা বিরাজ করছে।