৫ই জুলাই, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ | ২১শে আষাঢ়, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ | ১০ই মহর্‌রম, ১৪৪৭ হিজরি

এনবিআর কর্মকর্তাদের আন্দোলনের পরিণতি: বহিষ্কার ও দুদক তদন্তে আতঙ্ক

নিজস্ব প্রতিনিধি:

জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের জন্য সংস্কার আন্দোলন এখন গলার কাঁটা হয়ে দাঁড়িয়েছে। গত মে ও জুন মাসে এনবিআর বিলুপ্তির বিরুদ্ধে আন্দোলনকারী কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে এখন কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। ইতিমধ্যে ১৬ জন কর্মকর্তার বিরুদ্ধে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) অনুসন্ধান শুরু করেছে, ৫ জনকে বাধ্যতামূলক অবসরে পাঠানো হয়েছে এবং ৬ জনকে বদলি করা হয়েছে।

এনবিআর সূত্রে জানা গেছে, আন্দোলনে অংশ নেওয়া অনেক কর্মকর্তাই এখন ভুল স্বীকার করে চেয়ারম্যান মো. আবদুর রহমান খানের কাছে ক্ষমা চাইতে প্রস্তুত হচ্ছেন। একজন দ্বিতীয় সচিব মর্যাদার কর্মকর্তা বলেন, “আমরা কয়েকজন মিলে সিদ্ধান্ত নিয়েছি চেয়ারম্যানের কাছে ক্ষমা চাইব। ভুল তো সবাই করে।” অন্যদিকে একজন মহাপরিচালক পদমর্যাদার কর্মকর্তা আক্ষেপ করে বলেন, “আমি আন্দোলনে ছিলাম না, শুধু গ্রুপে যুক্ত ছিলাম। এখন খুব টেনশনে আছি।”

দুদকের মহাপরিচালক মো. আক্তার হোসেন জানান, অনুসন্ধান চলমান প্রক্রিয়ার অংশ হিসেবে করা হয়েছে এবং এতে সরকারের কোনো চাপ নেই। তবে এনবিআর কর্মকর্তাদের মধ্যে ব্যাপক আতঙ্ক দেখা যাচ্ছে। অনেকেই গণমাধ্যম এড়িয়ে চলছেন, ফোন বন্ধ রেখেছেন এবং বিভিন্ন গ্রুপ থেকে নিজেদের সরিয়ে নিয়েছেন।

আন্দোলনের নেতৃত্বে থাকা এনবিআর সংস্কার ঐক্য পরিষদের সভাপতি হাছান তারেক রিকাবদারসহ ৬ জনের বিরুদ্ধে দুদক ইতিমধ্যে অনুসন্ধান শুরু করেছে। এছাড়া ঢাকা পূর্বের কমিশনার কাজী মোহাম্মদ জিয়াউদ্দিন, বেনাপোল স্থলবন্দরের কমিশনার মো. কামরুজ্জামানসহ আরও বেশ কয়েকজন জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে তদন্ত চলছে।

এক কর্মকর্তা তার পরিবারের প্রস্তুতির কথা জানিয়ে বলেন, “বোনকে ঢাকায় এনেছি, তাকে সব বুঝিয়ে বলেছি। শুনেছি ২৬ জনের তালিকা হয়েছে, সবাইকে বরখাস্ত করা হবে।” অন্য এক কর্মকর্তা মন্তব্য করেন, “বদলি বা বহিষ্কারের চেয়ে দুদকের তদন্তই সবচেয়ে ভয়ঙ্কর।”

গত ২৮ ও ২৯ জুন সারাদেশের কাস্টম অফিস ও বন্দর বন্ধ রেখে শাটডাউন কর্মসূচি পালন করেছিলেন এনবিআর কর্মকর্তারা। ব্যবসায়ীদের মধ্যস্থতায় আন্দোলন স্থগিত করা হলেও এখন তার মারাত্মক পরিণতি ভোগ করতে হচ্ছে অংশগ্রহণকারীদের। প্রতিষ্ঠানটিতে এখন থমথমে ভাব বিরাজ করছে, যেখানে প্রতিটি কর্মকর্তাই শাস্তির আশঙ্কায় দিন কাটাচ্ছেন।

ফেসবুকে আমরা

মন্তব্য করুন

guest
0 Comments
Oldest
Newest Most Voted
Inline Feedbacks
View all comments

সর্বাাধিক পঠিত নিউজ

Scroll to Top