নিজস্ব প্রতিনিধি:
কুমিল্লার মুরাদনগর উপজেলার কড়ইবাড়ি গ্রামে এক মর্মান্তিক গণপিটুনিতে মা ও তার দুই সন্তান নিহত হয়েছেন। বৃহস্পতিবার সকালে ইউপি চেয়ারম্যান শিমুল বিল্লাহ ও ইউপি সদস্য বাচ্চু মিয়ার নেতৃত্বে একদল লোক রোকসানা আক্তার রুবির (৫৫) বাড়ি ঘেরাও করে নির্মমভাবে হত্যা করে তাকে ও তার দুই সন্তান তাসফিয়া আক্তার জোনাকি (২৯) এবং রাসেল মিয়াকে (২৮)। রুবির আরেক মেয়ে রুমা আক্তার (২৬) গুরুতর আহত অবস্থায় হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন।
ঘটনার পর নিহত রুবির মেয়ে রিক্তা আক্তার বাঙ্গরা বাজার থানায় হত্যা মামলা দায়ের করেন, যাতে ইউপি সদস্যসহ ৩৮ জনের নাম উল্লেখ করে আরও ২০-২৬ জন অজ্ঞাত আসামিকে অভিযুক্ত করা হয়েছে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী শনিবার সন্ধ্যা পর্যন্ত আটজনকে গ্রেপ্তার করেছে, যাদের মধ্যে ইউপি সদস্য বাচ্চু মিয়াসহ স্থানীয় প্রভাবশালী ব্যক্তিরাও রয়েছেন। গ্রেপ্তারকৃতদের কাছ থেকে চারটি মোবাইল ফোন ও একটি টর্চলাইট উদ্ধার করা হয়েছে।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, একটি মোবাইল ফোন চুরির ঘটনাকে কেন্দ্র করে এই হত্যাকাণ্ডের সূত্রপাত। বোরহান উদ্দিন ওরফে মারুফ নামে এক যুবকের বিরুদ্ধে ফোন চুরির অভিযোগ ওঠায় তাকে মারধর করা হয়। রুবি তাকে ছাড়াতে এলে ইউপি সদস্যদের সঙ্গে তার বাকবিতণ্ডা হয়, যা পরদিন পর্যন্ত উত্তেজনা বাড়িয়ে তোলে। শেষ পর্যন্ত বৃহস্পতিবার সকালে চেয়ারম্যান ও ইউপি সদস্যের নেতৃত্বে রুবির বাড়িতে হামলা চালানো হয়।
তদন্তে প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী, নিহতদের মাথায় ভারী বস্তুর আঘাত ও ধারালো অস্ত্রের চিহ্ন পাওয়া গেছে। র্যাব-১১–এর অধিনায়ক লে. কর্নেল এইচ এম সাজ্জাদ হোসেন নিশ্চিত করেছেন যে একটি মোবাইল চুরির ঘটনা এই হত্যাকাণ্ডের প্রধান কারণ।
গ্রেপ্তারের ভয়ে গ্রামের অধিকাংশ পুরুষ পালিয়ে যাওয়ায় নিহতদের জানাজা ও দাফনে মাত্র ৮-৯ জন অংশ নিতে পেরেছেন। এলাকায় নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে এবং অভিযান অব্যাহত রয়েছে বলে জানিয়েছে পুলিশ।
এই নৃশংস ঘটনা স্থানীয়ভাবে তীব্র ক্ষোভের সৃষ্টি করেছে এবং ন্যায়বিচারের দাবিতে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে আলোচনা চলছে। বিশ্লেষকরা মনে করছেন, একটি তুচ্ছ ঘটনা থেকে এমন ভয়াবহ হত্যাকাণ্ডের পেছনে দীর্ঘদিনের স্থানীয় দ্বন্দ্ব ও ক্ষমতার রাজনীতি কাজ করেছে।