মোঃ বাদশা প্রামানিক, নীলফামারী প্রতিনিধিঃ
নীলফামারীর ডিমলা উপজেলার স্বনামধন্য বিদ্যাপীঠ নাউতারা আবিউন্নেছা দ্বিমুখী উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষিকা নাসিরা আক্তারের বিরুদ্ধে একটি কুচক্রিমহল মিথ্যা অনিয়ম, দুর্নীতি ও স্বেচ্ছাচারিতার অভিযোগ তুলেছে।এর সাথে জড়িত বিদ্যালয়ে কয়েকজন স্বার্থন্বেষী শিক্ষক ও কর্মচারী জড়িত রয়েছে। এরা গত ২৩-৬-২৫ইং উপজেলা প্রশাসন বরাবর অভিযোগ করেন, প্রধান শিক্ষিকা নিজের ক্ষমতার অপব্যবহার করে গোপনে কমিটি গঠন, বিভিন্ন সরকারি ও উন্নয়ন ফান্ডের অর্থ আত্মসাৎসহ নানা অনিয়ম চালিয়ে যাচ্ছেন।
অভিযোগপত্রে বলা হয়, দীর্ঘ ১০ বছর ধরে শিক্ষক-কর্মচারীদের কোনো প্রকার সম্পৃক্ততা বা অনুমতি ছাড়াই প্রধান শিক্ষিকা এককভাবে বিদ্যালয় পরিচালনা করছেন। বিদ্যালয়ের আয়-ব্যয়ের হিসাব চাওয়া হলেও তা গোপন রাখা হয়। এসব অভিযোগের ভিত্তিতে তারা গত সোমবার (২৩ জুন) ডিমলা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বরাবর লিখিত অভিযোগ জমা দিয়েছেন। দীর্ঘদিন ধরেই বিদ্যালয়ের আয়-ব্যয়ের হিসাব গোপন রাখা হচ্ছে। শিক্ষক-কর্মচারীরা জানতে চাইলেও তাদের দেওয়া হয় না কোনো তথ্য। উপরন্তু প্রধান শিক্ষিকা নিজের পছন্দের কয়েকজনকে নিয়ে একটি ‘মনগড়া কমিটি’ গঠন করে দপ্তর ও আর্থিক সকল কার্যক্রম পরিচালনা করছেন, যা শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের নীতিমালার সম্পূর্ণ পরিপন্থী।
এ বিষয়ে অভিযোগকারী শিক্ষকদের মধ্যে মোঃ মমিনুর রহমান, শ্রীপুলিন বাবু, আব্দুর রহিম এই তিনজনের সাথে কথা বললে, অভিযোগের ব্যাপারে তারা সঠিক কোন তথ্য ও প্রমাণ দিতে ব্যর্থ হয়ে প্রসঙ্গ ছেড়ে বারবার অন্য প্রসঙ্গ নিয়ে কথাবাত্রা বলেন।
প্রধান শিক্ষক নাসিরা আখতারের সাথে কথা বললে তিনি জানান, ২০১৫ সালে আমি যখন নাউতারা আবিউন্নেছা দ্বি মুখী উচ্চ বিদ্যালয়ে প্রধান শিক্ষকা হিসেবে যোগদান করি সে সময় অত্র প্রতিষ্ঠানে শ্রেণী কক্ষ থেকে শুরু করে সর্বদিকেই ছিল জরাজীর্ণ অবস্থা। ছিল না ছাত্র- ছাত্রীদের, মানসম্মত টয়লেট। ছাত্র-ছাত্রী সবাই একটা টয়লেট ব্যবহার করত।সীমানা প্রাচীর, বহুতল ভবন, প্রধান শিক্ষকের অফিস কক্ষ, সহকারী শিক্ষকদের কমনরুম , নিরাপদ বিদ্যুৎ ব্যবস্থাসহ শ্রেণী কক্ষে সিসি ক্যামেরা কোন কিছুই ছিল না। শিক্ষার্থীদের শ্রেণিকক্ষ ছিল মাত্র নয়টি এগুলোর মধ্যে দুইটির মেঝে ঢালাই ছিল না। মাঠ ছিল অবৈধ দখলদারের কবলে। মাঠের এক পাশে ছিল একটি বড় পুকুর।
বর্তমানে বিদ্যালয়টি বহুতল ভবনসহ, বিদ্যালয় অর্থে উন্নত বিদ্যুৎ ব্যবস্থা, মাঠ সংস্কার, মাঠের পুকুর ভরাট, চারদিকেই সীমানা প্রাচীর নির্মান, উন্নত মানের ওয়াশব্লক স্থাপন করা, ছাত্রীদের জন্য উন্নত মানের সেবা কর্ণার স্থাপন,অসংখ্য টয়লেট, আধুনিক মানের শ্রেণিকক্ষ, আধুনিক বিজ্ঞানাগার।
জরাজীর্ণ শহীদ মিনার ভেঙ্গে আধুনিক মানের শহীদ মিনার স্থাপন, প্রধান শিক্ষক ও সহকারী শিক্ষকদের জন্য পৃথক অফিস কক্ষ নির্মান ও পর্যাপ্ত আসবাবপত্র ক্রয় করা হয়।
পকেট কমিটির ব্যাপারে তিনি বলেন, শিক্ষা বোর্ডের নিয়মের বাইরে কমিটি গঠনের কোন সুযোগ নাই। নিয়ম মেনে সুদক্ষ ম্যানেজিং কমিটির দ্বারা বিদ্যালয়টি পরিচালনা করা হয়। অত্র বিদ্যালয়ে অনুমোদিত দশটি শাখা বিদ্যমান আছে। ষষ্ঠ শ্রেণি থেকে দশম শ্রেণী পর্যন্ত প্রতিটি শ্রেণীকক্ষ সিসি ক্যামেরার আওতায় আনা হয়েছে। পূর্বের তুলনায় বর্তমান ছাত্র-ছাত্রীর সংখ্যা উল্লেখযোগ্য হারে বৃদ্ধি পেয়েছে। ২০২৫ইং শিক্ষাবর্ষে প্রায় ১২’শ অধিক শিক্ষার্থী অধ্যয়নরত আছে।
শিক্ষার মান উন্নয়নের লক্ষ্যে বিদ্যালয়ের কর্মরত শিক্ষক ব্যতিত একাধিক খন্ডকালীন শিক্ষক ও পরিচ্ছন্ন কর্মী নিয়োগ করা হয় এবং বিদ্যালয় তহবিল থেকে খন্ডকালীন শিক্ষক ও পরিচ্ছন্ন কর্মীদের বেতন ভাতা প্রদান করা হয়। শিক্ষক ও কর্মচারীগণকে বিদ্যালয় তহবিল থেকে উত্তরপত্র মূল্যায়ন বাবদ সম্মানী, অন্যান্য ভাতাসহ বাৎসরিক দুই ঈদে উৎসব ভাতা প্রদান করা হয়।
সরকারি বরাদ্দ, বিভিন্ন সংস্থা ও বিদ্যালয়ের নিজস্ব তহবিল থেকে বিদ্যালয়ের উন্নয়ন মূলক বিভিন্ন কাজ করা হয়। আমি যখন বিদ্যালয়ে জয়েন করি তখন বিদ্যালয়ের একাউন্টে ৩লক্ষ টাকা। এসব কাজ করার পরেও ২০২৫ ইং শিক্ষাবর্ষে বিদ্যালয়ের ব্যাংক একাউন্টে প্রায় ১৫ লক্ষ টাকার অধিক জমা রয়েছে।সরকারি গাইডলাইন ও বিদ্যালয় পরিচালনার নীতিমালা মেনে বিদ্যালয় পরিচালনা করে আসছি।
অভিযোগের প্রেক্ষিতে প্রধান শিক্ষকা নাসিরা আখতার দাবী করেন যে তার বিরুদ্ধে আনিত অভিযোগ সম্পূর্ণ মিথ্যা, উদ্দেশ্যপ্রণোদিত এবং ভিত্তিহীন। আমি এর তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাই। বিগত ১০ বছরে আমি বিদ্যালয়ের আকাশচুম্বি উন্নয়ন করেছি।অত্র উপজেলার অনেক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান যখন অস্তিত্ব সংকটের মুখে পড়েছে তখন এই বিদ্যালয়টি সর্বোচ্চ উন্নয়ন করে সুনামের সাথে পরিচালনা করছি। একটি স্বার্থন্বেষী মহল ও আমাদের কিছু শিক্ষক কর্মচারী তাদের ব্যক্তিগত স্বার্থ পরিতার্থ করতে না পেরে বিদ্যালয়টির সুনাম ক্ষুন্ন করার জন্য ষড়যন্ত্র চালিয়ে যাচ্ছে।
অভিযোগের প্রেক্ষিতে ডিমলা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ইমরানুজ্জামান বলেন, “অভিযোগ পেয়েছি। বিষয়টি খতিয়ে দেখতে উপজেলা একাডেমিক সুপারভাইজার আমির বোরহানকে, মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসারমহ তিন সদস্যবিশিষ্ট তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। তদন্ত সাপেক্ষে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
এ বিষয়ে আমাদের প্রতিনিধি তদন্ত কর্মকর্তা উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তার সাথে মুঠোফোনে কথা বললে, তিনি বলেন বিষয়টি গুরুত্ব সহকারে দেখা হচ্ছে। দ্রুত একটি সমাধানের পথ বের করা হবে।