মোঃ আমিরুল হক, রাজবাড়ী প্রতিনিধি:
রাজবাড়ী সদর উপজেলার আলীপুর ও শহীদওহাবপুর ইউনিয়নের বিদ্যুৎ গ্রাহকদের বিদ্যুৎ বিল প্রতারণা ও অর্থ আত্নসাতের মামলায় ওজোপাডিকোর মিটার রিডারম্যান মোঃ রেজাউল ইসলাম মুক্তার (৪৩) কে গ্রেপ্তার করেছে। সে রাজবাড়ী সদর উপজেলার চর নারায়নপুর গ্রামের মৃত সেলিম রেজার ছেলে।
বৃহস্পতিবার (১০ জুলাই) সন্ধ্যা ৬টার সময় গাজীপুর মেট্রো সদর থানার শিমুলতলী এলাকা থেকে তাকে জেলা গোয়েন্দা শাখার একটি টিম গ্রেপ্তার করে।
জানা গেছে, রাজবাড়ী সদর উপজেলার মিজানপুর ইউনিয়নের চরনারায়নপুর গ্রামের সেলিম রেজা ওরফে সেলিম মাষ্টারের ছেলে মোঃ রেজাউল ইসলাম মুক্তার (৪৩) একজন প্রতারক ও ভূয়া বিদ্যুৎ মিটার রিডারম্যান। সে দীর্ঘ প্রায় ১৫ বছর ধরে আমাদের এলাকার সাধারণ মানুষের সঙ্গে প্রতারণা করে আসছে। অভিযুক্ত মুক্তার বিশ্বাস রাজবাড়ী জেলা ওয়েস্ট জোন পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেডের নিয়োগপ্রাপ্ত কর্মচারী মিটার রিডারম্যান হিসেবে পরিচয় দেন। তিনি রাজবাড়ী সদর উপজেলার আলীপুর ও শহীদওহাবপুর ইউনিয়নে বিদ্যুৎ বিল তৈরি, গ্রাহকদের কাছ থেকে বিল সংগ্রহ, বিকাশের মাধ্যমে বিল আদায় এবং নতুন সংযোগের নামে অর্থ গ্রহণ করে থাকেন। ২০২৩ সাল থেকে ২০২৫ সাল পর্যন্ত প্রায় দুই বছরে ২টি ইউনিয়নের শতাধিক গ্রাহকের কাছ থেকে মোবাইল ব্যাংকিং বিকাশের মাধ্যমে বিদ্যুৎ বিল পরিশোধের নামে লক্ষ লক্ষ টাকা হাতিয়ে নিয়ে গা ঢাকা দেয়।
অধিকাংশ গ্রাহককে সে ভুয়া বিল প্রদান করে, যা বিদ্যুৎ বিভাগের স্বাক্ষর ও লোগোসহ ছাপানো ছিল। এমনকি গ্রাহকদের মাসের পর মাস বকেয়া বিল থাকা সত্ত্বেও তাদের সংযোগ বিচ্ছিন্ন হয়নি। যা থেকে বোঝা যায় যে বিদ্যুৎ বিভাগের কিছু অসাধু কর্মকর্তা তাকে সহযোগিতা করে আসছে।
এ প্রতারণার ফলে আমরা ভুক্তভোগী গ্রাহকগণ এখন প্রকৃত বিদ্যুৎ বিলের বিপরীতে আবার অর্থ পরিশোধের চাপের মুখে রয়েছি। যা সম্পূর্ণ অনৈতিক ও অবিচার। প্রতারক মোঃ মুক্তার বিশ্বাস ও তার সহযোগীদের দ্রুত খুঁজে বের করে আইনের আওতায় আনার দাবী জানান।
গ্রাহক বরিনের ১লক্ষ ৬০ হাজার টাকা, জহিরুল ইসলামের ২লক্ষ ১২ হাজার টাকা, বাবুল শেখের ৭৫ হাজার ৫শত টাকা, কোরবানের ১লক্ষ ৩২ হাজার টাকা, আনোয়ারের ৯৩ হাজার টাকা, সেলিমের ২৮ হাজার টাকা, আব্বাসের ৫৩ হাজার টাকা, বিল্লালের ১৮ হাজার ৫শত টাকা, রফিকুল ইসলামের ৪০ হাজার টাকা, আবুল বাশারের ৩৯ হাজার ৫শত ৫১ টাকা, আব্দুর রবের ১১ হাজার ৮শত টাকা, ইসহাক মন্ডলের ৪ হাজার ৪৪৪ টাকা, সেলিম বেপারীর ৮ হাজার ৬৭১ টাকা, সাহিদা বেগমের ১০ হাজার ২৫১ টাকা, আব্দুর রব শেখের ২৭ হাজার ৫৪৬ টাকা, সাইফুল ইসলামের ১০ হাজার ৯১ টাকা, হাবীবের ৯ হাজার ৪৯৪ টাকা, মোতাহারের ৬ হাজার ৬শত টাকা, সাঈদের ৭ হাজার ১৪৫ টাকা, জালাল গাজীর ৬হাজার ৪২৮টাকা, শিপনের ১৮ হাজার ৮৭০টাকা, মজিবরের ১৫ হাজার টাকা, গাজী হোটেলের ৫৯ হাজার ৭৮৩ টাকা, জহিরের ১লক্ষ ১২ হাজার টাকা, আমেনা বেগমের ৩১ হাজার ১৫৬ টাকা, আনোয়ারের ৯৩ হাজার ৩৯৭ টাকা, সুলতানের ৭ হাজার ২৯৫ টাকা, সুকরা বেগমের ৩ হাজার ৫৭ টাকা, সিরাজের ১৩ হাজার টাকা, ইয়াছিনের ৭ হাজার টাকা, জামালের ১০ হাজার ৫শত টাকা, বাবুর ৯ হাজার টাকা, সেলিমের ৬ হাজার ৪৭০ টাকা, নুর জাহানের ৩ হাজার ৮শত টাকা, শহীদ বেপারীর ২ হাজার ৩শত টাকা, চাঁন মিয়ার ১ হাজার ৭৬৩ টাকা, মজিদ খানের ১০ হাজার ২শত টাকা, নুপুরের ১০ হাজার টাকা, আব্দুল মান্নানের ৮ হাজার টাকা, আব্দুল খালেকের ৪ হাজার ১শত টাকা, খলিলের ১৯ হাজার ৫৫২ টাকা, লতিফ শেখের ১লক্ষ ১১ হাজার ১৬ টাকা, আইয়ুব বেপারীর ৭৫ হাজার টাকা, রোজিনার ৭৫ হাজার টাকা, বাবুর ৮ হাজার ৮৯৩ টাকা,সফুর ৩ হাজার ৫৭ টাকা সহ অনেক গ্রাহকের টাকা আত্নসাৎ করে।
রাজবাড়ী ওজোপাডিকোর নির্বাহী প্রকৌশলী মামুন-অর রশীদ বলেন, মাষ্টারোল কর্মচারী রেজাউল ইসলাম মুক্তার বিশ^াসকে বরখাস্ত করা হয়েছে। তার বিরুদ্ধে রাজবাড়ী সদর থানায় গত ১ জুলাই মামলা দায়ের করা হয়েছে।
রাজবাড়ী জেলা গোয়েন্দা শাখার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মোঃ মফিজুল ইসলাম বলেন, রাজবাড়ী জেলা পুলিশের একটি আভিযানিক টিম সঙ্গীয় ফোর্সসহ বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা ৬টার সময় গাজীপুর মেট্রো সদর থানা শিমুলতলী এলাকা থেকে মোঃ রেজাউল ইসলাম মুক্তারকে গ্রেপ্তার করা হয়। তাকে শুক্রবার সকালে রাজবাড়ী আদালতে সোপর্দ করা হয়েছে।
 
								 
								 
								 
                                 
                                 
                                 
                                 
                                 
															 
                         
                         
                         
                         
                         
                         
                        