নিজস্ব প্রতিনিধি:
পুরান ঢাকার মিটফোর্ড হাসপাতালের সামনে প্রকাশ্যে পাথর ও লোহার রড দিয়ে নির্মমভাবে ভাঙারি ব্যবসায়ী লাল চাঁদ সোহাগকে হত্যার ঘটনায় দেশজুড়ে রাজনৈতিক অস্থিরতা তৈরি হয়েছে। এ ঘটনায় বিএনপির বিরুদ্ধে সরব হয়েছে জামায়াতে ইসলামীসহ বিভিন্ন দল, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে তীব্র সমালোচনা হচ্ছে, আবার সরকারের ভূমিকাও প্রশ্নের মুখে। বিএনপি নেতৃত্ব দাবি করছে, তাদের দলীয় নীতি সহিংসতার বিরুদ্ধে, অপরাধীদের বিচার চাইছে। তবে বিরোধী মহল বলছে, সরকার আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় ব্যর্থ।
গত বুধবার স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের সামনের ব্যস্ত সড়কে সোহাগকে পিটিয়ে, পাথর মেরে ও বিবস্ত্র করে হত্যা করা হয়। সিসিটিভি ফুটেজ ও প্রত্যক্ষদর্শীদের বর্ণনায় উঠে এসেছে, একদল লোক তাকে ধরে এনে নির্মমভাবে পিটিয়ে মাথা থেঁতলে দেয়। এ ঘটনায় পাঁচজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে, এক আসামি আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছে। নিহত সোহাগ যুবদলের কর্মী ছিলেন বলে পুলিশ সূত্রে জানা গেছে।
বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান প্রশ্ন তোলেন, “আইনশৃঙ্খলা বাহিনী কেন নিস্ক্রিয়? সরকার কি ইচ্ছাকৃতভাবে এগুলো হতে দিচ্ছে?” তিনি দাবি করেন, বিএনপি কোনো সহিংসতাকে সমর্থন করে না। দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরও বলেছেন, “অপরাধী যেই হোক, তার বিচার হোক।”
জামায়াতে ইসলামী তীব্র ভাষায় এ হত্যাকাণ্ডের নিন্দা জানিয়ে বলেছে, “এটি জাহেলি যুগের বর্বরতা। বিএনপির ভেতরেও সন্ত্রাসী গোষ্ঠী সক্রিয়, যারা নিজেদের কর্মীকে হত্যা করছে।” দলটির নেতারা সরকারকে দ্রুত বিচার নিশ্চিত করতে বলেছেন।
স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী বলেছেন, “ঘটনায় জড়িত সবাইকে আইনের আওতায় আনা হয়েছে।” আইন উপদেষ্টা আসিফ নজরুল দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালে মামলা নেওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন।
ব্র্যাক, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, নর্থ সাউথসহ বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা বিক্ষোভ করে হত্যাকারীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করেছেন। সিপিবি, হেফাজতে ইসলাম, ইসলামী ঐক্যজোটসহ বিভিন্ন সংগঠন এ ঘটনাকে “রাজনৈতিক দুর্বৃত্তায়নের চূড়ান্ত প্রকাশ” বলে আখ্যায়িত করেছে।
এ ঘটনাকে ঘিরে রাজনৈতিক মেরুকরণ বাড়ছে। বিএনপি বলছে, “নির্বাচন না থাকায় অপরাধ বাড়ছে,” আবার সরকারপন্থিরা দাবি করছে, “বিএনপির নেতাকর্মীদেরই সম্পৃক্ততা প্রমাণিত।” সামাজিক মাধ্যমেও দুই পক্ষের তর্ক উত্তপ্ত হচ্ছে।
মিটফোর্ড হত্যাকাণ্ড এখন শুধু একটি অপরাধের ঘটনা নয়, বরং রাজনৈতিক সংঘাতের নতুন ফ্রন্ট খুলে দিয়েছে। সরকার ও বিরোধী দলগুলোর মধ্যে এ নিয়ে টানাপোড়েন বাড়বে বলে বিশ্লেষকদের ধারণা। এখন দেখার বিষয়, আদালত কীভাবে এ মামলার নিষ্পত্তি করে এবং রাজনৈতিক অস্থিরতা কি আরো বাড়বে নাকি নিয়ন্ত্রণে আসবে।