১৩ই জুলাই, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ | ২৯শে আষাঢ়, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ | ১৮ই মহর্‌রম, ১৪৪৭ হিজরি

ব্যবসায়ী যুবদল হত্যা, ইমামকে কুপিয়ে জখম: প্রতিবাদে উত্তাল বাকৃবি

আরাফাত হোসাইন, বাকৃবি প্রতিনিধি:

রাজধানীর পুরান ঢাকার স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজ ও মিটফোর্ড হাসপাতাল কম্পাউন্ডে চাঁদ মিয়া ওরফে সোহাগ নামে এক ব্যবসায়ীকে প্রকাশ্যে হত্যা, খুলনার দৌলতপুর থানা যুবদলের সাবেক এক নেতাকে গুলি করে ও রগ কেটে হত্যা ও চাঁদপুর সদরে জুমার নামাজ শেষে মসজিদের ভিতরেই চাপাতি দিয়ে ইমামকে জখম করার প্রতিবাদে বিক্ষোভ মিছিল ও নিন্দা জানিয়েছেন বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের (বাকৃবি) শিক্ষার্থী সংগঠনগুলো।

শনিবার (১২ জুলাই) ওই সকল ঘটনায় জড়িতদের দ্রুত গ্রেপ্তার ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবিতে আলাদা আলাদাভাবে বিক্ষোভ ও নিন্দা জানিয়েছে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের বাকৃবি শাখা, বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবিরের বাকৃবি শাখা, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের বাকৃবি শাখা এবং সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্টের বাকৃবি শাখার সদস্যরা।

দিবাগত রাত ১.৩০ মিনিটে ঢাকার মিডফোর্ডে নৃশংস ওই হত্যার ঘটনা ও খুলনায় যুবদল নেতাকে রগকেটে হত্যার ঘটনাসহ দেশের চলমান সন্ত্রাস, চাঁদাবাজি ও আইন-শৃঙ্খলার চরম অবনতির প্রতিবাদে এবং জড়িতদের দ্রুত বিচারের আওতায় আনার দাবিতে বিক্ষোভ মিছিল করেছে বিএনপির ছাত্র সংগঠন বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল বাকৃবি শাখা। বিক্ষোভ সমাবেশটির নেতৃত্ব দেন বাকৃবি শাখা ছাত্রদলের সদস্য সচিব মো. শফিকুল ইসলাম শফিক।

সদস্য সচিব মো. শফিকুল ইসলাম শফিক বলেন, প্রতিটি হত্যাই বেদনাদায়ক। প্রতিটি হত্যাকাণ্ডতেই স্বজন হারানোর ঘটনা ঘটে। আমরা শুধু বিক্ষোভ করে দোষীদের বিচার চাইতে পারি কিন্তু যার স্বজন হারায় সেই বুঝে বিষয়টি কতটা বেদনার। আমরা চাই না দেশে আর কোনো হত্যাকান্ড ঘটুক। প্রতিটি ঘটনাতেই দোষীদের উপযুক্ত বিচার নিশ্চিত করতে হবে। চকবাজারের খুনের ঘটনায় দায়ী প্রত্যেককে অবিলম্বে গ্রেফতার করতে হবে। রাজনৈতিক পরিচয় থাকলেও অপরাধ করে কারো পার পাওয়ার সুযোগ নাই। খুনি সন্ত্রাসীদের সর্বোচ্চ শাস্তি নিশ্চিত করার জন্য তদন্ত ও সাক্ষ্য প্রমাণ সংগ্রহের ক্ষেত্রে কোনো গাফেলতি করা যাবে না। খুনিদের সর্বোচ্চ শাস্তি দাবি করছি। ভিকটিম পরিবারকে আইনি সহযোগিতা ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করারও দাবি জানাচ্ছি। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে অপরাধ দমনে কঠোর ভূমিকা পালন করতে হবে।

বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবির বাকৃবি শাখার নেতৃবৃন্দরা এক পৃথক প্রেস বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে চাঁদা না দেওয়ায় ব্যবসায়ীকে হত্যার ঘটনায় নিন্দা ও বিচার দাবি জানিয়েছে।

সংগঠনটির নেতৃবৃন্দ বলেছেন, জুলাই গণঅভ্যুত্থান-পরবর্তী সময়ে সারাদেশে একটি দল দখল, লুটপাট, চাঁদাবাজি, হত্যা ও ধর্ষণের মতো নানা অপরাধে লিপ্ত হয়েছে। ইতোমধ্যে তারা দেড় শতাধিক মানুষকে হত্যার মধ্য দিয়ে একটি সন্ত্রাসী ও খুনিচক্র হিসেবে নিজেদের প্রতিষ্ঠিত করেছে। এমন জঘন্য ও পৈশাচিক হত্যাকাণ্ড গত ৯ জুলাই প্রকাশ্যে সংঘটিত হলেও দু-একটি গণমাধ্যম ব্যতীত মূলধারার গণমাধ্যমগুলো এ বিষয়টি নিয়ে কোনো প্রতিবেদন প্রকাশ করেনি। বিষয়টি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ার পরই তা জনদৃষ্টিতে আসে। এটি গণমাধ্যমের দায়িত্বহীনতা এবং নির্দিষ্ট রাজনৈতিক গোষ্ঠীর প্রভাব ও নিয়ন্ত্রণের নগ্ন বহিঃপ্রকাশ। আমরা ব্যবসায়ী মো. সোহাগের আত্মার মাগফিরাত কামনা করছি। এবং এই ঘটনাসহ সারাদেশে সংঘটিত হত্যাকাণ্ডের সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ তদন্তের মাধ্যমে জড়িতদের চিহ্নিত করে দৃষ্টান্তমূলক বিচার নিশ্চিত করার দাবি জানাচ্ছি। সেই সঙ্গে শুধু নামমাত্র বহিষ্কারের প্রহসন বন্ধ করে দলকে সন্ত্রাস ও চাঁদাবাজমুক্ত করতে দলীয় কঠোর শৃঙ্খলাবিধি আরোপের আহ্বান জানাচ্ছি।”

এদিকে রাজধানীর পুরান ঢাকার সোহাগ হত্যার ঘটনার নিন্দা জানিয়েছেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন বাকৃবি শাখা।

সংগঠনটির নেতৃবৃন্দ বলেন, পুরান ঢাকায় এক ব্যবসায়ীকে অমানবিক নির্যাতন করে হত্যার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছি। ৫ ই আগস্ট পরবর্তী এই ধরনের ঘটনা ফ্যাসিবাদের পুনরুত্থান হিসেবে দেখছি। ৫ই আগস্ট পরবর্তী এই ধরনের ঘটনা আমাদের আরেকটি গণঅভ্যুত্থানের দিকে ঠেলে দিতে বাধ্য করা ছাড়া অন্য কিছু নয়। এই ঘটনায় জড়িত ব্যক্তিদের সর্বোচ্চ শাস্তির দাবি জানাচ্ছি।

সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্ট বাকৃবি শাখার সদস্যরা উপরোক্ত তিনটি ঘটনার বিরুদ্ধেই প্রতিবাদ জানিয়ে বিকেল সাড়ে তিনটায় একটি বিক্ষোভ সমাবেশের আয়োজন করেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদিন মিলনায়তনের মুক্তমঞ্চের সামনে ওই বিক্ষোভ সমাবেশটি অনুষ্ঠিত হয়। সমাবেশে বক্তারা বলেন, পুরান ঢাকার মিটফোর্ড এলাকায় লাল চাঁদ মিয়া ওরফে সোহাগ নামে এক ব্যবসায়ীকে পিটিয়ে ও ইট-পাথর দিয়ে যুবদল কর্তৃক নৃশংসভাবে হত্যা, খুলনার দৌলতপুর থানা যুবদলের সাবেক এক নেতাকে গুলি করে ও রগ কেটে হত্যা, চাঁদপুরে মসজিদের ইমামকে কুপিয়ে জখম করার ঘটনার বিরুদ্ধে আজ এই বিক্ষোভ সমাবেশে আমরা উপস্থিত হয়েছি।

সমাবেশে বক্তারা আরও বলেন, দেশের প্রত্যেক জনগণের জানমালের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার দায়িত্ব সরকারের। কিন্তু গত ১ বছরে অসংখ্য খুনের ঘটনা প্রত্যক্ষ করেছে দেশবাসী। দেশের আইনশৃঙ্খলা ও বিচার ব্যবস্থার যে নাজুক অবস্থা, গণঅভ্যুত্থানের মুখে দায়িত্ব নেওয়া অন্তর্বর্তীকালীন সরকার তা সুসংগঠিত করার পর্যাপ্ত উদ্যোগ গ্রহণ করেনি। কোনো খুনের ঘটনার দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করা হয়নি। ফলে প্রশাসনের এই নীরব ভূমিকা ও বিরাজমান বিচারহীনতার সংস্কৃতি অপরাধের মাত্রাই শুধু বাড়ায়নি, নৃশংসতার মাত্রাও বাড়িয়েছে। বিচারহীনতার সংস্কৃতি একটি সামাজিক সংক্রামক ব্যাধি-এই সংক্রামক ব্যাধিকে দমন করে অবিলম্বে আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা করুন। অতিসত্বর আইনশৃঙ্খলা সুসংহত করে, বিচারিক প্রক্রিয়ায় প্রত্যেকটি খুনের ঘটনার সর্বোচ্চ শাস্তি নিশ্চিত করার দাবি জানাই।

এছাড়া সন্ধ্যায় চাঁদাবাজ, ধর্ষণকারী ও সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে বিশ্ববিদ্যালয়ের আব্দুল জব্বারের মোড় বাকৃবির সাধারণ শিক্ষক, কর্মকর্তা-কর্মচারী ও শিক্ষার্থীর অংশগ্রহণে একটি বিক্ষোভ মিছিলেরও আয়োজন করা হয়েছে

ফেসবুকে আমরা

মন্তব্য করুন

guest
0 Comments
Oldest
Newest Most Voted
Inline Feedbacks
View all comments

সর্বাাধিক পঠিত নিউজ

Scroll to Top