১৪ই জুলাই, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ | ৩০শে আষাঢ়, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ | ১৯শে মহর্‌রম, ১৪৪৭ হিজরি

সৈয়দপুরে ক্ষুদ্র কুটির শিল্প মেলার আড়ালে র‌্যাফেল ড্র’র নামে রমরমা জুয়া, শিক্ষা ও সমাজব্যবস্থায় নেতিবাচক প্রভাব

মো. সাইফুল ইসলাম, নীলফামারী প্রতিনিধি:

নীলফামারীর সৈয়দপুর সেনানিবাস সংলগ্ন ‘ফেয়ার পার্কে’ আয়োজিত ক্ষুদ্র কুটির শিল্প মেলায় শিল্প বা উদ্যোক্তাদের পণ্য প্রদর্শনের চেয়ে বেশি চলছে র‌্যাফেল ড্র ও হাউজি’র নামে জুয়া বাণিজ্য। এতে উঠতি বয়সের যুবক ও সাধারণ মানুষ লোভে পড়ে সর্বস্বান্ত হচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে।

প্রতিদিন সন্ধ্যার পর থেকে গভীর রাত অবধি উচ্চ স্বরে মাইক বাজিয়ে চলছে মেলার কার্যক্রম। প্রচারণায় ব্যবহার করা হচ্ছে শতাধিক অটোরিকশায় মাইকিং, যা রংপুর বিভাগের বিভিন্ন জেলা ও উপজেলায় ছড়িয়ে পড়েছে। শুধু টিকিট বিক্রি থেকেই প্রতিদিন আয় হচ্ছে আনুমানিক ৫ থেকে ৭ লাখ টাকা। আয়োজকরা লটারির টিকিটে পুরস্কারের লোভ দেখিয়ে দিচ্ছেন মোটরসাইকেল, রাইস কুকার, প্রেসার কুকারসহ নানা সামগ্রী।

মেলার নিকটেই সৈয়দপুর সরকারি বিজ্ঞান কলেজে এইচএসসি পরীক্ষা চলমান। পরীক্ষার্থী এবং তাদের অভিভাবকদের অভিযোগ, মেলার প্রচারণা, মাইকিং ও জনসমাগমে শিক্ষার্থীরা মনোযোগ হারাচ্ছে।

এক অভিভাবক বলেন, “আমার ছেলে এইচএসসি পরীক্ষার্থী। মেলার প্রচারণা ও ভিড়ে ওর মনোযোগে ব্যাঘাত ঘটছে। শহরজুড়ে উৎসবের পরিবেশে সে পড়ায় মন বসাতে পারছে না।”

ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প মেলার নাম থাকলেও মেলায় কোনো স্থানীয় শিল্পপণ্যের উপস্থিতি চোখে পড়েনি। মূলত রাত ১১টার পর র‌্যাফেল ড্র ও হাউজি খেলাই মেলার মূল আকর্ষণ। সরাসরি ফেসবুক লাইভে সম্প্রচার করে জুয়ায় আকৃষ্ট করা হচ্ছে সাধারণ মানুষ ও কিশোরদের। হাউজি খেলায় প্রতিদিন অংশ নিচ্ছে শত শত মানুষ। স্থানীয়দের দাবি, প্রতিদিন হাউজি খেলে আয় হচ্ছে প্রায় অর্ধকোটি টাকা।

দর্শনার্থীদের অভিযোগ, মেলায় অশ্লীল নৃত্য-গীত পরিবেশিত হচ্ছে। অনেক দিনমজুর ও নিম্ন আয়ের মানুষ নিত্যপণ্যের বাজার না করে সেই টাকায় টিকিট কিনে নিঃস্ব হয়ে পড়ছে।
স্থানীয় একজন বলেন, “লটারি কিনে এখন পকেটে একটাও টাকা নেই। ঘরে বাজার নেই। এটা কেবল জুয়া, অন্য কিছু না।”

সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে আয়োজক ও প্রশাসনের বিরুদ্ধে সমালোচনার ঝড় উঠলেও এখন পর্যন্ত দৃশ্যমান কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি।

নীলফামারী জেলা প্রশাসক মোহাম্মাদ নায়িরুজ্জামানের সাথে একাধিকবার যোগাযোগ করা হলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি। ফলে তার কোনো মন্তব্য পাওয়া যায়নি।

মেলা বাস্তবায়ন ও পরিচালনা কমিটির সদস্যা মোঃ তারেক আহমেদ জানান এ মেলায় শিশুদের বিভিন্ন রাইড ও নানা পণ্যের স্টল রয়েছে। মেলা উদ্বোধনের পর পর দর্শনার্থীদের ঢল নামে। শিশুসহ নানা বয়সী মানুষেরা বিভিন্ন রাইডে চড়ে আনন্দ উপভোগ করেন। মেলার দোকান গুলোতে নানা বয়সী ক্রেতাদের ভিড় লক্ষ্য করা গেছে। স্থানীয় উদ্যোক্তা ও ব্যবসায়ীদের তাদের পণ্যের প্রচারসহ ব্যবসা-বাণিজ্যে গতি আনতে মেলার আয়োজন করা হয়েছে। এছাড়া সৈয়দপুর বিনোদনের জায়গার অভাব রয়েছে। মেলায় বাচ্চাদের বিভিন্ন রাইড আনা হয়েছে। এখানো নানা পণ্যের দোকানের পাশাপাশি খাবারের দোকানও রয়েছে। নানা বয়সী মানুষেরা মেলায় এসে ভাল সময় পাড় করতে পারবেন বলে আশা করছি।

তিনি আরো জানান, মেলায় নিরাপত্তা ব্যবস্থাও জোরদার করা হয়েছে। পুলিশর পাশাপাশি মেলা প্রাঙ্গণে ভলান্টিয়াররা মেলা প্রাঙ্গণে মোতায়েন রয়েছেন। তাছাড়াও সিসিটিভি ক্যামরায় পুরো মেলা নজরদারিতে রাখা হয়েছে।

সৈয়দপুরের বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষকরা বলছেন, পরীক্ষার সময় এমন আয়োজন শিক্ষার্থীদের জন্য মারাত্মক মানসিক চাপের কারণ। তারা দ্রুত এই জুয়ার কর্মকাণ্ড বন্ধ করে শিক্ষার পরিবেশ ফিরিয়ে আনার দাবি জানিয়েছেন।

সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে প্রশ্ন থেকে যাচ্ছে—শিল্প মেলার নামে এমন জুয়া বাণিজ্য কিভাবে অনুমোদন পেল? প্রশাসন কি এ থেকে মুখ ফিরিয়ে রাখবে, নাকি কার্যকর ব্যবস্থা নেবে?

ফেসবুকে আমরা

মন্তব্য করুন

guest
0 Comments
Oldest
Newest Most Voted
Inline Feedbacks
View all comments

সর্বাাধিক পঠিত নিউজ

Scroll to Top