জাকির হোসেন হাওলাদার, দুমকী উপজেলা (পটুয়াখালী) প্রতিনিধি :
পটুয়াখালী জেলার দুমকি উপজেলার আঙ্গারিয়া ইউনিয়নের ৩নং ওয়ার্ডের বাহেরচর এলাকায় সর্বগ্রাসী পায়রা নদীর অব্যাহত ভাঙনে শত শত পরিবার তাদের ঘরবাড়ি হারাচ্ছে। চলতি মৌসুমে শতাধিক পরিবার তাদের বসতভিটা নদীগর্ভে বিলীন হওয়ার ফলে নিঃস্ব হয়েছে।
সরেজমিনে ঘুরে দেখা যায়, পশ্চিম আঙ্গারিয়া, বাহেরচর এলাকার প্রায় ২ কিলোমিটার জুড়ে পায়রা নদীর ভাঙন চলছে। ভাঙন কবলিত এলাকার লোকজন সরকারি রাস্তার পাশে, বিভিন্নএলাকায় আত্মীয়-স্বজনের গোয়ালঘর বা রান্নাঘরে কোনো রকমে মানবেতর জীবন যাপন করছে। আবার কিছু পরিবার পরিজন নিয়ে অন্যত্র চলে গেছে। এলাকাবাসি জানান, দীর্ঘ দিন ধরে পায়রা নদীর অব্যাহত ভাঙনে ইতিমধ্যে প্রায় আড়াই কিলোমিটার এলাকা নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। এসব এলাকায় ঘরবাড়ি, মসজিদ, মন্দির ও রাস্তাও নদীতে বিলীন হয়েছে।
গ্রামের ক্ষতিগ্রস্ত বিধান (৫৩) এবং সুধির (৬৫) বলেন, “আমাদের বাড়ি এখান থেকে ২ থেকে ৩ কিলোমিটার উত্তরে ছিল। পায়রা নদীর অব্যাহত ভাঙনে বাবার আমলে ২ বার এবং আমাদের আমলে ৩ বার বসতবাড়ি স্থানান্তর করতে হয়েছে। বর্তমানেও ঝুঁকিতে আছি। আমাদের মতো অনেকেই এখন বসতঘর সহ সবকিছু ভেঙে সরকারি রাস্তার পাশে সরিয়ে নিচ্ছি।”
আঙ্গারিয়া ইউনিয়ন পরিষদের ভাঙন কবলিত ৩নং ওয়ার্ডের ইউপি মেম্বার শাহীন বলেন, “কিছু দিন আগে খেয়াঘাট এলাকায় বেশ কিছু জায়গা জুড়ে বিশাল ফাটল ধরে হঠাৎ নদীগর্ভে দেবে যায়। এতে ৩ জনকে ট্রলার যোগে উদ্ধার করা হয়, যার মধ্যে একজন মহিলা গুরুতর অসুস্থ অবস্থায় ছিলেন। এ যাবৎ এই এলাকার প্রায় দেরশোএকর জমিসহ, আড়াই শতাধিক ঘরবাড়ি, ৪টি মসজিদ, ৩টি মন্দির, একটি সরকারি অফিস সহ রাস্তাঘাট পায়রা নদীতে বিলীন হয়ে গেছে। ভাঙন এলাকার লোকজন অপরের বাড়ির গোয়ালঘর, রান্নাঘর, সরকারি রাস্তার পাশে মানবেতর জীবন যাপন করছে। কিছু লোকজন অন্যান্য এলাকাতেও চলে গেছে।”
আঙ্গারিয়া ইউনিয়নের প্যানেল চেয়ারম্যান জিল্লুর রহমান সোহরাব সরেজমিনে এসে জানান, “বাহের চর মৌজায় দীর্ঘ দিন যাবৎ পায়রা নদীর অব্যাহত ভাঙনে এলাকাবাসী আতঙ্কিত। শত শত পরিবার নদী ভাঙনে সবকিছু হারিয়ে এখান থেকে চলে গেছে।” তিনি ভাঙন কবলিত অসহায়দের পুনর্বাসন এবং স্থায়ীভাবে পাইলিং ও ব্লক ফেলে নদী ভাঙন রোধে যথাযথ ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন।
দুমকি উপজেলা নির্বাহী অফিসার আবুজর মোঃ ইজাজুল হক বলেন, “এ ব্যাপারে পানি উন্নয়ন বোর্ডসহ আমাদের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অবহিত করা হয়েছে, দ্রুত নদী ভাঙন রোধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।”
পানি উন্নয়ন বোর্ড পটুয়াখালীর নির্বাহী প্রকৌশলী মোঃ রাকিব হোসেন জানান, “বাহেরচরের নদী ভাঙন রোধে এর আগেও আমরা ব্যবস্থা গ্রহণ করেছি। চলতি বছরের নভেম্বর মাসে আবার জিওব্যাগ স্থাপন করা হবে।