মো. সাইফুল ইসলাম, নীলফামারী প্রতিনিধি:
নীলফামারী জেলার নারী সাংবাদিক স্বপ্না আকতার স্বর্ণালি শাহ্-এর ওপর হামলা ও হেনস্তার ঘটনার প্রতিবাদে বুধবার (১৬ জুলাই) সকাল ১১টায় জেলা শহরের চৌরঙ্গী মোড়ে সাংবাদিক সংগঠনসমূহের ব্যানারে মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়।
‘নীলফামারী জেলা রিপোর্টার্স ইউনিটি’ ও ‘সম্মিলিত সাংবাদিক বৃন্দ’-এর আয়োজনে অনুষ্ঠিত মানববন্ধনে জেলার বিভিন্ন উপজেলার রিপোর্টার্স ইউনিটির নেতৃবৃন্দ অংশ নেন।
সভায় বক্তারা দ্রুত হামলাকারীদের গ্রেফতার ও সুষ্ঠু বিচারের দাবিতে সোচ্চার হন।
জানা যায়, গত ৮ জুলাই বিকেলে গোপন সংবাদের ভিত্তিতে সাংবাদিক স্বর্ণালি শাহ্ সদর উপজেলার লক্ষিচাপ ইউনিয়নের জংলীপাড়া গ্রামে যান একটি নাবালিকা বিয়ের ঘটনা ঠেকাতে। তবে সেখানে গিয়ে তিনি দেখতে পান, মেয়েটি প্রকৃতপক্ষে সাবালিকা এবং একটি পক্ষ তাকে জোর করে ছেলের বাড়িতে বিবাহ দিতে চাচ্ছে। স্বর্ণালি শাহ্ ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আমিনুর রহমানকে ফোন দিলে তিনি উল্টো মেয়েটিকে ছেলের বাড়িতে দিতে বলেন বলে অভিযোগ ওঠে।
পরে সাংবাদিক স্বর্ণালি বিষয়টি উপজেলা নির্বাহী অফিসার ও সদর থানায় জানান।
ঘটনার জের ধরে স্থানীয় প্রভাবশালী এক পক্ষের লোকজন—চেয়ারম্যানের নির্দেশে কথিত শ্যামল রায় ও চন্দন মেম্বার স্বর্ণালি শাহ্ এবং তাঁর স্বামী, যিনি একজন সাংবাদিক—তাঁদের ওপর হামলা চালায়। হাতে থাকা ক্যামেরা ছিনিয়ে নিয়ে মাটিতে আছাড় দেওয়া হয় এবং শারীরিকভাবে হেনস্তা করা হয় বলে অভিযোগ রয়েছে।
সভায় প্রধান বক্তা হিসেবে বক্তব্য রাখেন জেলা রিপোর্টার্স ইউনিটির সাধারণ সম্পাদক আল আমিন।
তিনি বলেন, “স্বপ্না আকতার স্বর্ণালি শাহ্ জেলার একমাত্র সক্রিয় নারী সাংবাদিক। তাঁকে নিরাপত্তা দেওয়া এবং সম্মানজনকভাবে কাজ করার পরিবেশ তৈরি করা আমাদের দায়িত্ব। এই হামলা শুধু তাঁর ওপর নয়, এটি সাংবাদিকতার স্বাধীনতার ওপর সরাসরি আঘাত।”
সাংবাদিক মেহেদী হাসান মেনন বলেন, “দু–একজন হলুদ সাংবাদিক সামান্য অর্থের জন্য সত্য চাপা দিয়ে দোষীদের পক্ষ নিচ্ছেন। কিছু সাংবাদিক ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের প্রভাবশালী সদস্য ও চেয়ারম্যানের সঙ্গে প্রেমপত্রমূলক আচরণ করছেন—আমরা সেই সমস্ত নামধারী সাংবাদিকদের ধিক্কার জানাই।”
সভাপতিত্ব করেন কিশোরগঞ্জ রিপোর্টার্স ইউনিটির সভাপতি আব্দুল মান্নান এবং সঞ্চালনা করেন আব্দুস সালাম। এতে আরও বক্তব্য রাখেন জেলা রিপোর্টার্স ইউনিটির সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক ও বর্তমান কার্যকরী সদস্য আব্দুর রশিদ, জলঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির সভাপতি রাশেদুজ্জামান সুমন, ডিমলা রিপোর্টার্স ইউনিটির সাধারণ সম্পাদক আসাদুজ্জামান পাভেল, হেদায়েতুল্লাহ সুজন, সাইফুল ইসলাম প্রমুখ।
এই ঘটনার প্রতিবাদে ডোমার উপজেলা রিপোর্টার্স ইউনিটিও মানববন্ধনের আয়োজন করে। ডোমার উপজেলা চত্বরে আয়োজিত মানববন্ধনে প্রধান অতিথি ছিলেন ডোমার প্রেসক্লাব সভাপতি ও পৌর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক মোজাফফর আহমদ।
তিনি বলেন, “এ হামলার সঙ্গে জড়িত চেয়ারম্যান আমিনুর রহমান গং সহ সব অভিযুক্তকে দ্রুত গ্রেফতার করতে হবে, অন্যথায় সাংবাদিক সমাজ বৃহত্তর আন্দোলনে যেতে বাধ্য হবে।”
মানববন্ধনে সাংবাদিকরা বলেন, হামলাকারীদের আইনের আওতায় এনে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দিতে হবে। তা না হলে সাংবাদিকদের নিরাপত্তা ও স্বাধীন সাংবাদিকতা হুমকির মুখে পড়বে। নারী সাংবাদিকদের নিরাপদ কর্মপরিবেশ নিশ্চিত করার দাবি জানান বক্তারা।