২২শে জুলাই, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ | ৭ই শ্রাবণ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ | ২৭শে মহর্‌রম, ১৪৪৭ হিজরি

দুমকির লেবুখালীতে, পায়রা নদীর ভাঙনে নিঃস্ব শতাধিক পরিবার

জাকির হোসেন হাওলাদার, দুমকি (পটুয়াখালী ) প্রতিনিধি:

পটুয়াখালী জেলার দুমকি উপজেলার লেবুখালীতে, ফের পায়রায় ভাঙন শুরু হয়েছে। নদীতে বিলীন হয়ে যাচ্ছে কৃষিজমিসহ বহু ঘরবাড়ি। ভাঙন রোধে কার্যকরী কোনো পদক্ষেপ না নেওয়ায় আতঙ্কে দিন কাটাচ্ছে পায়রা তীরবর্তি বাসিন্দারা।

সোমবার বেলা সাড়ে ১২টার দিকে উপজেলার লেবুখালীর ভারানী খাল ও আংগারিয়া ইউনিয়নের বাহেরচর গ্রামে পায়রা নদীর আকস্মিক ভাঙন এলাকায় গিয়ে নদী ভাঙনের এমন ভয়াবহ চিত্র দেখা গেছে। পায়রা নদীর স্রোতের তীব্রতা বেড়ে যাওয়ায় লেবুখালী ভারানি খালের উভয় পাড় ভেঙে নদীতে বিলীন হয়ে যাচ্ছে।

লেবুখালী নতুন বাজার রাইস মিল থেকে বারেক শরীফের বাড়ি হয়ে পাগলা খালেকের সমিল পর্যন্ত এবং লেবুখালী সরকারি হাবিবুল্লাহ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের সামনে থেকে তহশিল অফিস হয়ে বুদ্ধিজীবী বাজার পর্যন্ত পাকা রাস্তা, ঘরবাড়ি, গাছপালা নদীতে বিলীন হয়ে যাচ্ছে। অপরদিকে আঙ্গারিয়া ইউনিয়নের বাহেরচর এলাকার মিলন মীরা ও মামুন মীরার বসতভিটা কবরস্থান, গাছের বাগানসহ বিশাল এলাকা নদীতে তলিয়ে গেছে। এতে পুরো বাহেরচর গ্রামে ভাঙনের আতঙ্ক বিরাজ করছে।

ভাঙনের মুখে নদী তীরে বসবাস করা পরিবারগুলো তাদের সম্বল বলতে বসতঘর ও মালামাল রক্ষায় উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছে। ভাঙন কবলিত এলাকার পরিবারগুলোর নারী, পুরুষ, শিশু-কিশোর সবাই নিজেদের মালামাল বহন করে কাছের সরকারি রাস্তার ওপর স্তূপ করে রাখছেন।

একইভাবে আ. জব্বার খান, বিউটি বেগম, ফয়সাল মিরা, দুলাল হাওলাদার, জলিল সিকদার, ফরিদা, ফরিদা, ক্ষীতিশ ঘরামীসহ অন্তত ১০ পরিবার তাদের বসতঘর ভেঙে মালামাল রক্ষায় আগেভাগেই নিরাপদ দূরত্বে স্থানান্তর শুরু করেছেন। নদী ভাঙনে অন্তত শতাধিক পরিবার এখন নিঃস্ব হয়ে পরেছেন।

বাহেরচরের পায়রা তীরবর্তী ভাঙনকবলিত এলাকার সবার চোখেমুখে শুধুই আতঙ্ক বিরাজ করছে। স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, বিগত ৫-৬ বছরে প্রায় শতাধিক পরিবারের ভিটেমাটি, ফসলি জমি, গাছপালা নদীতে বিলীন হয়ে গেছে। বাহেরচরের হিমান্ত ওঝা, পান্টু পাইক, বশির হাওলাদার, শাহআলম হাওলাদার, পরিমল পাইকসহ গ্রামবাসীদের অভিযোগ, পায়রা নদীর ভাঙনে অন্তত দুশতাধিক পরিবারের ঘরবাড়ি, বাগান, করবস্থান, মসজিদ, মন্দির, ফসলি জমি হারিয়ে নিঃস্ব হয়ে গেলেও ক্ষতিগ্রস্তদের সহায়তায় কেউ এগিয়ে আসেনি।

স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরাও তাদের তেমন কোনো খোঁজখবর নেননি। অসহায় পরিবারগুলোর বেশিরভাগই পাউবোর ওয়াপদা বেড়িবাঁধের পাশের ঝুপড়ি তুলে মানবেতর জীবনযাপন করছেন। কেউ কেউ আবার পরিবার-পরিজন নিয়ে অন্য শহরে চলে গেছে। আঙ্গারিয়া ইউপি চেয়ারম্যান (ভারপ্রাপ্ত) মো. সোহরাব হোসেন নদী ভাঙনের সত্যতা স্বীকার করে বলেন, পায়রা নদীর ভাঙনে তার ইউনিয়নের বাহেরচর গ্রামটি প্রায় নিশ্চিহ্ন হয়ে গেছে। যেটুকু অবশিষ্ট ছিল তাও ভাঙতে শুরু করেছে।

তিনি বলেন, ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলোকে পরিষদের পক্ষ থেকে সাধ্যমতো খাদ্য সহায়তা প্রদান করা হবে। তিনি আরো বলেন, ভিটেবাড়ি ও সহায়-সম্বলহীন পরিবারগুলোকে আশ্রয়ণ প্রকল্পের সরকারি সুবিধাও দেওয়া হবে, তবে তা সময়সাপেক্ষ।

এ বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আবুজর মো. এজাজুল হক বলেন, বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে ইতোমধ্যে জানানো হয়েছে। তা ছাড়া ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারে তালিকা তৈরি করতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। তালিকা তৈরির পর সহযোগিতা করা হবে। পটুয়াখালী পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী মো. রেজা আহম্মেদ বলেন, নদী ভাঙন রোধে স্থায়ী সমাধানের জন্য প্রকল্প প্রস্তাব মন্ত্রণালয়ে প্রেরণ করা হয়েছে।

ফেসবুকে আমরা

মন্তব্য করুন

guest
0 Comments
Oldest
Newest Most Voted
Inline Feedbacks
View all comments

সর্বাাধিক পঠিত নিউজ

Scroll to Top