নিজস্ব প্রতিনিধি:
“আমি তাকে জিজ্ঞেস করেছিলাম – তুমি কি নিজের দুই সন্তানের কথা একবারও ভাবনি? উত্তরে সে বলেছিল, ওরাও তো আমার সন্তান। ওদের একা রেখে কীভাবে চলে আসি?” – একবুক বেদনা নিয়ে এই কথাগুলো বলছিলেন নিহত শিক্ষিকা মাহেরীন চৌধুরীর স্বামী মনসুর হেলাল। উত্তরার মাইলস্টোন স্কুলে বিমান দুর্ঘটনার সময় অন্তত ২০ শিশুর জীবন বাঁচিয়ে নিজে প্রাণ দিয়েছেন এই বীর শিক্ষিকা, যার ফলে এখন নিজ সন্তানদের মা-হারা অবস্থায় লালন-পালন করতে হচ্ছে তাকে।
সোমবার দুপুর সোয়া ১টায় দিয়াবাড়ির মাইলস্টোন স্কুলে বিমান বিধ্বস্ত হওয়ার মুহূর্ত থেকেই মাহেরীনের বীরত্বগাথা শুরু হয়। স্কুলের সমন্বয়ক হিসেবে দায়িত্ব পালনকারী এই শিক্ষিকা নিজে নিরাপদে বের হওয়ার সুযোগ থাকা সত্ত্বেও শ্রেণিকক্ষে আটকে পড়া শিশুদের উদ্ধারে ঝাঁপিয়ে পড়েন। তার ভাই মুনাফ চৌধুরী জানান, “সাক্ষীরা বলছেন, তিনি ইচ্ছা করলে প্রথমেই বের হতে পারতেন। কিন্তু তিনি শিশুদের আগে বের করার চেষ্টা করছিলেন।”
মাহেরীনের এই আত্মত্যাগের মূল্য দিতে হয়েছিল ভয়াবহভাবে। ধোঁয়া ও আগুনে তার শ্বাসনালী সম্পূর্ণ পুড়ে যায়। তাকে জাতীয় বার্ন ইনস্টিটিউটে নিয়ে যাওয়া হলে চিকিৎসকরা জানান, তার শরীরের প্রায় ১০০% অংশই দগ্ধ হয়েছে। সোমবার রাত ১০টা ১০ মিনিটে আইসিইউতে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যুবরণ করেন তিনি।
মঙ্গলবার তার মরদেহ নীলফামারীর জলঢাকা উপজেলার বগুলাগাড়িতে নিয়ে যাওয়া হয়। বগুলাগাড়ি স্কুল অ্যান্ড কলেজ মাঠে অনুষ্ঠিত হয় তার জানাজা, যেখানে হাজারো শোকার্ত মানুষ শেষ শ্রদ্ধা জানাতে উপস্থিত হয়েছিলেন। পারিবারিক কবরস্থানে তার বাবার কবরের পাশে তাকে সমাহিত করা হয়।
স্বামী মনসুর হেলাল জানান, মাহেরীন শুধু একজন শিক্ষিকা ছিলেন না, স্থানীয় শিক্ষা বিস্তারেও তিনি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছিলেন। বগুলাগাড়ি স্কুল অ্যান্ড কলেজের সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করছিলেন তিনি। তার মৃত্যুতে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা জায়িদ ইমরুল মোজাক্কিন বলেন, “মাহেরীন চৌধুরী একজন আলোকিত মানুষ ছিলেন। অন্যায়ের বিরুদ্ধে তিনি সবসময় সোচ্চার ছিলেন।”
উল্লেখ্য, মাহেরীন চৌধুরী ছিলেন সাবেক রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের ভাতিজি। তার এই আত্মত্যাগ শিক্ষকতা পেশার মর্যাদাকে নতুন উচ্চতায় নিয়ে গেছে, যা আগামী প্রজন্মকে অনুপ্রাণিত করবে।