মো. সাইফুল ইসলাম, নীলফামারী প্রতিনিধি:
রাজধানীর উত্তরায় মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজে বিমানবাহিনীর একটি প্রশিক্ষণ বিমান বিধ্বস্ত হয়ে লাগা অগ্নিকাণ্ডে শিক্ষার্থীদের বাঁচাতে গিয়ে জীবনদানকারী সাহসী শিক্ষিকা মাহরিন চৌধুরীর দাফন সম্পন্ন হয়েছে।
মঙ্গলবার (২২ জুলাই) বিকেল ৪টায় নীলফামারীর জলঢাকা উপজেলার বগুলাগাড়ি স্কুল অ্যান্ড কলেজ মাঠসংলগ্ন পারিবারিক কবরস্থানে বাবা-মায়ের কবরের পাশে তার দাফন কার্য সম্পন্ন হয়। এ সময় স্বজন, সহপাঠী, সহকর্মী ও স্থানীয় শিক্ষার্থীদের মাঝে শোকের ছায়া নেমে আসে।
মাহরিন চৌধুরী ছিলেন জলঢাকা পৌরসভার ৩ নম্বর ওয়ার্ডের চৌধুরীপাড়ার মরহুম মুহিত চৌধুরীর মেয়ে। রাজধানীর মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজের বাংলা মিডিয়াম শাখায় তিনি তৃতীয় থেকে পঞ্চম শ্রেণির কো-অর্ডিনেটর হিসেবে দায়িত্ব পালন করতেন। সম্প্রতি নিজের গ্রামে বগুলাগাড়ি স্কুল অ্যান্ড কলেজের উন্নয়নে অবদান রাখার লক্ষ্যে অ্যাডহক কমিটির সভাপতিও নির্বাচিত হন তিনি।
সোমবার (২১ জুলাই) দুপুরে মাইলস্টোন স্কুলে প্রতিদিনের মতো দায়িত্ব পালন করছিলেন মাহরিন। শিক্ষার্থীদের অভিভাবকদের হাতে বুঝিয়ে দিচ্ছিলেন তিনি। এমন সময় হঠাৎ বিমানবাহিনীর একটি প্রশিক্ষণ বিমান ভবনের উপর আছড়ে পড়ে এবং মুহূর্তেই আগুন ছড়িয়ে পড়ে চারদিকে। নিজের শরীর দগ্ধ হয়েও মাহরিন অন্তত ২০ জন শিক্ষার্থীকে নিরাপদে বের করে দেওয়ার চেষ্টা চালিয়ে যান। পরে তাকে আশঙ্কাজনক অবস্থায় ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে ভর্তি করা হয়। সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার দিকে লাইফ সাপোর্টে থাকা অবস্থায় শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন তিনি।
তার মৃত্যুর পর সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে শোক আর শ্রদ্ধা। অনেকেই তাকে ‘নতুন প্রজন্মের হিরো’ আখ্যা দিয়ে আবেগঘন পোস্ট দেন। নীলফামারী জেলা ছাত্রদলের সভাপতি মারুফ পারভেজ প্রিন্স, শিক্ষার্থী অর্পিতা বিনতে জামানসহ বহু মানুষ মাহরিনের আত্মত্যাগের প্রশংসা করে তাকে ‘নীলফামারীর গর্ব’ হিসেবে অভিহিত করেন।
মাহরিন চৌধুরীর স্বামী মনসুর হেলাল জানান, “ও শুধু শিক্ষকই ছিল না, ওর হৃদয়ে ছিল গ্রামের শিক্ষার উন্নয়নের স্বপ্ন। শেষ সময়েও সে তার শিক্ষার্থীদের আগুনের মধ্যে থেকে বের করে আনার চেষ্টা করেছে।”
শিক্ষার্থী ও এলাকাবাসীর চোখে তিনি একজন আদর্শ শিক্ষিকা ও সাহসী নারী হিসেবে স্মরণীয় হয়ে থাকবেন।