৭ই আগস্ট, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ | ২৩শে শ্রাবণ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ | ১৩ই সফর, ১৪৪৭ হিজরি

আলজাজিরার ইনভেস্টিগেটিভ রিপোর্ট: শেখ হাসিনার ‘ওপেন অর্ডার’ ও গুলিবর্ষণের গোপন রেকর্ড ফাঁস

নিজস্ব প্রতিনিধি:

আলজাজিরার ইনভেস্টিগেটিভ ইউনিট ২০২৪ সালের জুলাই মাসে বাংলাদেশে সংঘটিত অভ্যুত্থান প্রচেষ্টা ও বিক্ষোভ দমনের সময়কার একাধিক গোপন কল রেকর্ড প্রকাশ করেছে। এসব রেকর্ডে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিক্ষোভকারীদের ওপর প্রাণঘাতী শক্তি প্রয়োগের সরাসরি নির্দেশনা দিয়েছেন বলে দাবি করা হয়েছে। রেকর্ডিংগুলোতে শেখ হাসিনাকে ছাত্রদের ওপর গুলি চালানোর ‘ওপেন অর্ডার’ দেওয়ার পাশাপাশি হেলিকপ্টার থেকে গুলিবর্ষণের কথাও বলতে শোনা গেছে।

প্রামাণ্যচিত্রে উঠে এসেছে, ২০২৪ সালের ওই আন্দোলনের সময় শেখ হাসিনার ঘনিষ্ঠ সহযোগীদের মধ্যে হওয়া গোপন আলোচনা, সিদ্ধান্ত গ্রহণ এবং দমননীতির বিস্তারিত বিবরণ। আলজাজিরার দাবি, তিন সপ্তাহব্যাপী চলা এই আন্দোলনে সরকারি বাহিনীর হাতে ১,৫০০ জন নিহত এবং ২৫ হাজারের বেশি মানুষ আহত হয়েছেন। এ সময় নিরাপত্তা বাহিনী ৩০ লাখেরও বেশি রাউন্ড গুলি ব্যবহার করেছে বলে উল্লেখ করা হয়েছে।

১৮ জুলাই ২০২৪ তারিখের একটি ফোনালাপে শেখ হাসিনাকে ঢাকার দক্ষিণের সাবেক মেয়র শেখ ফজলে নূর তাপশকে বলতে শোনা যায়, *‘আমার নির্দেশ তো আগেই দেওয়া হয়ে গেছে। আমি তো পুরোপুরি ওপেন অর্ডার দিয়ে দিয়েছি। এখন ওরা মারবে, যেখানে পাবে সেখানে গুলি করবে… আমি তো এতদিন থামিয়ে রেখেছিলাম। আমি ছাত্রদের নিরাপত্তা নিয়ে ভাবছিলাম।’* আরেক রেকর্ডিংয়ে তিনি বলেন, *‘যেখানে তারা কোনো জটলা দেখছে, সেটি ওপর থেকে—এখন তো ওপর থেকেই হচ্ছে, এরই মধ্যে কয়েক জায়গায় শুরু হয়ে গেছে। শুরু হয়ে গেছে। কিছু সরেছে।’*

প্রামাণ্যচিত্রে একজন চিকিৎসক নিশ্চিত করেছেন যে বহু বিক্ষোভকারী হেলিকপ্টার থেকে চালানো গুলিতে নিহত ও আহত হয়েছেন। এছাড়া, আন্দোলনের প্রতীকী ব্যক্তিত্ব ছাত্র আবু সাঈদের মৃত্যুকে ঘিরে ব্যাপক ক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ে। আলজাজিরার প্রতিবেদনে দাবি করা হয়েছে, সরকার হুমকি ও ঘুষের মাধ্যমে তার ময়নাতদন্ত রিপোর্ট পাঁচবার পরিবর্তন করে গুলির প্রমাণ গোপন করতে চেয়েছে। আবু সাঈদের পরিবারকে later রাষ্ট্রীয় টেলিভিশনে শেখ হাসিনার সঙ্গে দেখা করতে বাধ্য করা হয়।

এদিকে, আলজাজিরা ফাঁস হওয়া গোপন নথির উদ্ধৃতি দিয়ে জানিয়েছে, শেখ হাসিনার সরকার ইন্টারনেট সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে সহিংসতার চিত্র বিশ্ববাসীর কাছ থেকে আড়াল করার কৌশল নিয়েছিল। তবে আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে আলজাজিরাকে পাঠানো বিবৃতিতে এসব রেকর্ডিংকে ভুয়া বলে উল্লেখ করা হয়েছে। দলটি জানিয়েছে, শেখ হাসিনা কখনও প্রাণঘাতী অস্ত্র ব্যবহারের নির্দেশ দেননি এবং ইন্টারনেট বন্ধের পেছনে আন্দোলনকারীদের অবকাঠামো ধ্বংসকেই দায়ী করা হয়েছে।

ফেসবুকে আমরা

মন্তব্য করুন

guest
0 Comments
Oldest
Newest Most Voted
Inline Feedbacks
View all comments

সর্বাাধিক পঠিত নিউজ

Scroll to Top