নিজস্ব প্রতিনিধি:
কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আলজাজিরার এক অনুসন্ধানী প্রতিবেদনে উঠে এসেছে, ২০২৪ সালের কোটা সংস্কার আন্দোলনের সময় তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিক্ষোভকারীদের ওপর হেলিকপ্টার থেকে গুলিবর্ষণের নির্দেশ দিয়েছিলেন। বৃহস্পতিবার প্রকাশিত প্রতিবেদনে ফাঁস হওয়া একাধিক ফোনালাপের বিশ্লেষণ উপস্থাপন করা হয়েছে, যেখানে শেখ হাসিনাকে প্রাণঘাতী বলপ্রয়োগের স্পষ্ট নির্দেশনা দিতে শোনা যায়।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ১৮ জুলাই ২০২৪-এর একটি রেকর্ডিংয়ে শেখ হাসিনা তার সহযোগীকে বলেন, “আমি সম্পূর্ণভাবে ওপেন অর্ডার দিয়ে দিয়েছি। এখন তারা যেখানে পাবে সেখানে গুলি করবে।” ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের তৎকালীন মেয়র শেখ ফজলে নূর তাপসের সঙ্গে আরেক কথোপকথনে তিনি হেলিকপ্টার ব্যবহারের কথা উল্লেখ করেন: “ওপর থেকেই হচ্ছে – এরই মধ্যে কয়েক জায়গায় শুরু হয়ে গেছে।”
আল-জাজিরার ৫০ মিনিটের সেই প্রতিবেদনটি দেখুন এই লিংকে
আলজাজিরার ইনভেস্টিগেটিভ ইউনিট ফরেনসিক বিশেষজ্ঞদের মাধ্যমে এই অডিওগুলো পরীক্ষা করে নিশ্চিত হয়েছে যে এগুলো কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা দ্বারা তৈরি নয়। পপুলার মেডিকেল কলেজের জরুরি বিভাগের চিকিৎসক ডা. শাবির শরীফ জানান, হাসপাতালে আনা বহু আহতের শরীরে হেলিকপ্টার থেকে নিক্ষিপ্ত গুলির অস্বাভাবিক ক্ষত দেখেছেন তারা।
প্রতিবেদনে আরও উল্লেখ করা হয়েছে, রংপুরে নিহত শিক্ষার্থী আবু সাঈদের ময়নাতদন্ত রিপোর্ট পাঁচবার পরিবর্তন করতে বাধ্য করা হয়েছিল। রংপুর মেডিকেলের চিকিৎসক ডা. রাজিবুল ইসলাম আলজাজিরাকে বলেন, “তারা এমন রিপোর্ট চাইছিল যাতে লেখা থাকে আবু সাঈদ পাথরে আহত হয়ে মারা গেছেন।” আবু সাঈদের পরিবারকে পরে গণভবনে নিয়ে টেলিভিশন অনুষ্ঠানে হাজির করা হয়, যা পরিবারের সদস্যদের মতে ছিল জোরপূর্বক।
আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের প্রধান প্রসিকিউটর তাজুল ইসলাম জানিয়েছেন, শেখ হাসিনার এই ফোনালাপগুলো আদালতে প্রমাণ হিসেবে উপস্থাপন করা হতে পারে। ইতিমধ্যে শেখ হাসিনা ও তার দুই সহযোগীর বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগ গঠন করা হয়েছে।
আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে বিবৃতিতে এই ফোনালাপগুলোকে “খণ্ডিত ও বিকৃত” বলে দাবি করা হয়েছে। তাদের মতে, শেখ হাসিনা কখনও নিরাপত্তা বাহিনীকে গুলি চালানোর নির্দেশ দেননি এবং আবু সাঈদের মৃত্যুর তদন্তে সরকার পূর্ণ আন্তরিকতা দেখিয়েছে।